৭২৩টি ডিম থেকে ফুটেছে ৪৬৫টি কুমির বাচ্চা

মোঃ শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রুতনিধি :: বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের করমজলে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ১২ বছরে ৭শ ২৩টি ডিম থেকে ৪শ৬৫ টি বাচ্চা ফুটেছে। সঠিক পর্যবেক্ষন আর অদক্ষতার কারনে গত বারো বছরে জুলিয়েট ও পিলপিলের ২শ ৫৮ টি ডিম নষ্ট হয়েছে।

কতৃপক্ষের উদাসীনতা আর বিষেসজ্ঞের অভাবে দেশের এক মাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্রের সু-নাম হারাতে বসেছে। গত মে মাসে এই বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে লোনা পানির কুমির জুলিয়েট ও পিলপিলের ৯১টি ডিম থেকে একটি বাচ্চাও হয়নি। গত দুই বছর ধরে কেন্দ্রটিতে কুমির বিশেষজ্ঞ না থাকায় বারবার এই একই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

প্রজনন কেন্দ্রে প্রায় প্রতিবারই কোন না কোন সমস্যায় জুলিয়েট ও পিলপিলের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটছে না।আর এ কারনেই গত ১২ বছরে জুলিয়েট ও পিলপিল ৭শ২৩টি ডিম দিয়েছে তা থেকে জন্ম নিয়েছে মাত্র ৪৬৫টি বাচ্চা। ২৫৮টি ডিম বিভিন্ন কারনে নষ্ট হয়েছে।

।ডিম নষ্ট হওয়া ও বাচ্চা না ফোটার বিষয়ে জানতে চাইলে করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, কুমিরের ডিম ইনকিউবেটরে দেওয়ার পর থেকে সেটাকে নীবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। কোনো ফাইনাল ইনফেকশন বা অন্য কোনো প্রকারে সমস্যা হলে সাথে সাথে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সেটি এখানে না করার কারনেই পিলপিল ও জুলিয়েটের দেয়া ৯১টি ডিম নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, গত বছরেও অনেক ডিম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এবার ও ওই একই অবস্থা, একটি বাচ্চা ও হয়নি ওই ডিম থেকে।মূলত বিষয় টি হচ্ছে আমাদের এই প্রজনন কেন্দ্রে কুমির বিশেষজ্ঞ নেই আর এ কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এখন যদি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নজর না দেয় ভবিষ্যতে এই প্রজননকেন্দ্র থাকবে নামে মাত্র। বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ২০০২ সালে বন বিভাগের উদ্যোগে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি, লোনা পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের উদ্দেশ্যে করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট একর জায়গায় গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র।

এরপর কুমির লালন-পালন ও বন্য প্রাণীর ওপর বিশেষ প্রশিণের জন্য বন বিভাগ তাদের দুজন কর্মকর্তা নির্মল কুমার হাওলাদার ও আঃ রব,কে এক বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে পাঠায়। এরপর থেকে আ. রব এই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেলেদের জালে আটক হওয়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের প্রজনন কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি অবসরে যান। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্রের কোনো কুমির অথবা প্রাণী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

বর্তমানে কেন্দ্রটিতে লোনা পানির দুটি স্ত্রী কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল এবং রোমিও নামের একটি পুরুষ কুমির রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এই কেন্দ্রে জুলিয়েট ও পিলপিলের মোট ৭২৩টি ডিম থেকে ৪৬৫টি বাচ্চা হয়েছে। গত বছর জুলিয়েট ও পিলপিলের ৯৮টি ডিম থেকে ৪৭টি বাচ্চা হয়। সে সময় ৫১টি ডিম নষ্ট হয়ে যায়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৯মে জুলিয়েট ৪৩টি ও ২০ মে পিলপিল ৪৮টি ডিম দেয়। ৯০ দিনের মধ্যে ডিম ফেটে বাচ্চা বেরোনোর কথা থাকলেও ১০০ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো বাচ্চা বের হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, আমরা যারা করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে কাজ করছি কুমির বিষয়ে আমাদের কারো কোনো প্রশিক্ষণ নেই। আমরা ধারণার ওপর ভরসা করে কাজ করছি। আমাদের এখানে জাকির নামে একজন রয়েছে যে অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক বন্য প্রাণী সংরণ কেন্দ্রে থেকে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত আঃ রব সাহেবের সাথে দীর্ঘদিন সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। সেই অভিজ্ঞতাই কাজে লাগিয়ে গত দুই বছর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করেছি।

তবে এবার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও জুলিয়েট ও পিলপিলের ডিম থেকে আমরা কোনো বাচ্চা পাইনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ডিম নিষিক্ত না হওয়ার কারণে এমনটা।

এ বিষয়ে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ মাহামুদুল হাসান বলেন, করমজল প্রজনন কেন্দ্রের কুমির পিলপিল ও জুলিয়েটের ডিম নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বন বিভাগ গুরুত্বের সাথে দেখছে। ইতি মধ্যেই করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে একজন কুমির বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে লিখিত ভাবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here