ঢাকা: আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ২ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৩ ডিসেম্বর এবং ভোট গ্রহণ হবে ৫ জানুয়ারি। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলেও সিইসি জানান।

২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘‘আমরা একটি রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু আমাদের আর অপেক্ষা করার সময় নেই।’’

তবে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণ তাদের রায়ের প্রতিফলন দেখতে পাবেন বলে সিইসি আশা প্রকাশ করেন।

সিইসি তার ভাষণে বলেন, ‘‘সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্রসহ সকল শ্রেণীর জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত সকল শ্রেণীর সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় একটি আনন্দঘন পরিবেশে আগামী ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এ আশা ব্যক্ত করছি। ’’ তিনি বলেন, ‘‘একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।’’

তিনি বলেন, ‘‘গত ১৯ নভেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেও আমরা তাকে অনুরোধ জানাই তিনি যেন ব্যক্তিগত বিশেষ উদ্যোগ নেন এই অসহনীয় অচলাবস্থা দূরকরণে। আমরা এখনও আশা রাখি জনগণের এ প্রত্যাশা উপেক্ষা করবেন না কেউই। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। আমরা সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য শপথ নিয়েছি। সংবিধান মোতাবেক ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালের মধ্যেই নির্বাচন করার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। এতদিন আমরা অপেক্ষা করেছিলাম একটা রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য। আমাদের হাতে বিলম্ব করার মতো সময় আর নেই।’’
সিইসি বলেন, ‘‘নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রয়োগে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কে কোন পদে আছেন তা দেখা হবে না। তিনি কোন্ আচরণ বিধি ভঙ্গ করলেন, শুধু সেটাই দেখা হবে এবং সে মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

যেকোনো নির্বাচনের সাফল্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আচরণের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘‘নির্বাচনের নির্বাচনী আইন ও আচরণ বিধিতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বিভিন্ন রঙের পোস্টার ব্যবহার বা দেয়ালে সাঁটানো, দেয়াল লিখন, গেইট বা তোরণ নির্মাণ, বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা ইত্যাদির উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে- আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী গণতন্ত্রের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করবেন।’’

নির্বাচনপূর্ব সময়ে মিছিল সহকারে শো-ডাউন, আপ্যায়ন ও ভোট কেনা বেচার বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সিইসি বলেন, ‘‘ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় চিরাচরিত শো-ডাউন কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না এবং আচরণবিধির এ জাতীয় লঙ্ঘন করা হলে তা ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা অনিশ্চিত করতে পারে।’’ তিনি জানান, এবার প্রতি জেলায় শক্তিশালী মনিটরিং টিম নিয়োগ করা হয়েছে যারা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

একই দিনে সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে নির্বাচন করতে হয় উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘‘আমাদের এ জনবহুল দেশে ভোটার সংখ্যাও বিশাল। এ বিরাট কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা অতি দুরূহ। তাই প্রতিবারের মতো এবারও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভিডিপি,আনসার,পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সাথে সকলের প্রিয় ও আস্থাভাজন সশস্ত্র বাহিনীকেও নির্বাচনের জন্য দেশব্যাপী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি।’’

সিইসি জানান, ২০০৮ সালের তুলনায় ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সংখ্যাও বেড়েছে। প্রচলিত নীতিমালা মোতাবেক ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা উপজেলা পর্যায়ে প্রকাশ করে তার উপর আপত্তি ও মতামত আহ্বান করা হয় এবং আপত্তি নিষ্পত্তি করে তা চূড়ান্ত  করা হচ্ছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে আইন মোতাবেক নিরপেক্ষভাবে তারা যেন অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সকল সরকারি, আধাসরকারি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিপুল কর্মী বাহিনী যারা বিভিন্ন  স্তরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন ও করবেন তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘‘ সকল ভয়ভীতির উর্ধ্বে থেকে জাতীয় দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকতে হবে। সকল অনভিপ্রেত প্রভাব ও অন্যায় দাবিকে উপেক্ষা করতে হবে।’’

নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ইনশাল্লাহ আমরা করবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই দুরূহ ও পবিত্র দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ আপনারা দৃঢ় প্রত্যয় ও সাহসের সাথে গ্রহণ করবেন।’’

নির্বাচনী দায়িত্ব পালনরত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সকল কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও সিইসি সতর্ক করে দেন।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘‘ তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনপূর্ব সময় শুরু হবে এবং নির্বাচনের ফলাফল গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, মন্ত্রীবর্গ এবং সরকারি সুবিধাভোগী অন্যান্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবেন না। তবে প্রাপ্যতা অনুযায়ী তারা নিরাপত্তা পাবেন।

সংসদ সদস্যগণ বা তাদের কোনে প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে থাকলে নির্বাচন পূর্ব সময়ে ওই কমিটির কোনো সভায় যোগ দিতে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। তারা তাদের ইচ্ছাধীন তহবিল বা তাদের অধীনস্থ অন্য কোনো তহবিল থেকে কোনো অর্থ কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করতে পারবেন না। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি সুযোগ সুবিধাসহ সরকারি যানবাহন সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ছাড়াও পূর্বের সকল বিধি নিষেধ ও বলবৎ থাকবে।’’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here