৪০০ বছর পর পরিকল্পনা তবু ঝুলছে ১০ বছরষ্টাফ রিপোর্টার :: ‘মানুষ আসতে আছে যমুনার বানের লাহান’- সকালের দিকটায় রাজধানীর যেকোনো সড়কে মিনিট পাঁচেক দাঁড়ালেই মনে পড়তে পারে সৈয়দ শামসুল হকের এই বিখ্যাত উক্তি। সকালে বানের পানির মতোই ঘর ছেড়ে পিলপিল করে পথে নামে রাজধানীর মানুষ। পায়ে তাদের ভীষণ তাড়া, কিন্তু চোখে-মুখে বিরক্তি। এই বিরক্তির কারণ বিশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা। একদিকে রাস্তা দখল করে থাকে রিকশা আর প্রাইভেট কারের দঙ্গল, আরেক দিকে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হয়রান হয় অসংখ্য মানুষ। রাস্তায় গাড়ি নড়ে না, তেতে ওঠে মেজাজ। এরপর বাস এলে শুরু হয় হুড়োহুড়ি, পাড়াপাড়ি। কোনো রকমে শরীরটা বাসের ভেতরে চালান করে দিতে চলে নানা কসরত। দিনের শুরুতে রাজধানীবাসীর এই দুর্ভোগের কারণ আর কিছুই নয়- ৪০০ বছর বয়সী ঢাকা নগরীতে আজ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পিত যোগাযোগ অবকাঠামো ও গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। স্বাধীনতার পর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলোও শেষ পর্যন্ত ভোগান্তি কমাতে পারেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিকল্পনাগুলো হয় লাল ফিতায় বন্দি হয়েছে, নয়তো মাঝপথেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। পরিকল্পনার আলোকে গত মহাজোট সরকারের আমলে নেওয়া বড় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নও চলছে কচ্ছপ গতিতে। বর্তমান সরকার এতে গতি আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার অবস্থান দেশের প্রায় মধ্যভাগে। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়, তৈরি পোশাক কারখানা, বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত বাড়ছেই। প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ অধ্যুষিত এ নগরীতে এক পোশাকশিল্পেই কাজ করছে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। তবে রাজধানীর রাজপথে জনস্রোত বাড়লেও তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যোগাযোগ অবকাঠামো ও গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। সরকারি হিসাবেই বলা হচ্ছে, প্রতি তিন হাজার যাত্রীর জন্য এ নগরে আছে মোটে একটি বাস! তাই বলা যায়, বিশৃঙ্খল এক অচল নগরীর রূপ নিয়েছে ঢাকা।

 

১৬১০ সালে ঢাকায় প্রথম রাজধানী স্থাপন করা হয়। তবে গত ৪০০ বছরের মধ্যে ৩৫০ বছর ঢাকার যোগাযাগ অবকাঠামো ও গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। সে সময় এ অঞ্চলে স্থানীয় রাস্তা তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্ট এলাকার জমিদারদের। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, অতীতে বাংলাদেশের বিশাল অংশজুড়ে প্রাধান্য ছিল নৌপরিবহন ব্যবস্থার। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠেছে পরে। ১৫৪১ থেকে ১৫৪৫ সালের মধ্যে শের শাহর তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয় সোনারগাঁ থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত ‘গ্রান্ড ট্রাংক রোড’। ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির শাসনামলের প্রথম দিকে মূলত সামরিক বাহিনীর চলাচল ও ডাক যোগাযোগের দিকে লক্ষ্য রেখে কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন করা হয়। ১৭৬৫ সালে সদরঘাটের পাশে বুড়িগঙ্গার তীর বরাবর চার মাইল দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। বাঁধটি বিলীন হলে ১৮৫৭ সালের কিছুদিন পর ফরাশগঞ্জ থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত ‘বাকল্যান্ড বাঁধ’ নির্মাণ করা হয়। ঢাকা নগরীর পুরনো রাস্তাগুলোর মধ্যে সেই বাঁধ একটি। ১৮৩৩ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্য ব্রিটিশরা গ্রান্ড ট্রাংক রোড সংস্কার করে।

পাকিস্তান আমলে ১৯৫৮ থেকে ১৯৫৯ সালে একবার ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পার হলেও এ খাতে বড় মাপের যুৎসই পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শেষে প্রায় ৪৫ বছর পর ২০০৪ সালে এসে প্রণয়ন করা হয় কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি), সেটি অনুমোদন পায় ২০০৮ সালে। এতে ২০২৪ সালের মধ্যে ৫২০ কোটি ডলার ব্যয়ে মেট্রো রেলযুক্ত দ্রুত গণপরিবহনের বিভিন্ন ব্যবস্থাসহ চার স্তরে ১৭টি সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে। তবে সমন্বয়ের অভাবে প্রায় ১০ বছরেও যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি এসটিপি। উল্টো সুপারিশ করা প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৫২০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৫২০ কোটি ডলার। নগর ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন ২০২৪ নয়, ২০৫০ সালের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। কারণ, এরই মধ্যে ঢাকার অবকাঠামো ও ভূমির ব্যবহার পরিবর্তিত হয়েছে।

নগর বিশেষজ্ঞ ও জনসংখ্যাবিদদের হিসাবে, ঢাকা মহানগরীতে প্রতিবছর গড়ে যোগ হচ্ছে পাঁচ লাখ নতুন মুখ। জনসংখ্যা বাড়ছে বছরে গড়ে ৪.৫ থেকে ৫ শতাংশ। জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরীগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১১ নম্বরে। এখন রাজধানীর জনসংখ্যা এক কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার।

জনসংখ্যার সঙ্গে নগরীর পরিধিও বেড়েছে। আগে ঢাকা ছিল বুড়িগঙ্গা থেকে টঙ্গী খাল, হাজারীবাগ থেকে গেণ্ডারিয়া পর্যন্ত, আয়তন ছিল ১৩৫ বর্গকিলোমিটার। ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী এখন নারায়ণগঞ্জ, সাভার, টঙ্গী ও গাজীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ঢাকার আয়তন বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ঢাকায় নিবন্ধিত গাড়ি এখন সাড়ে আট লাখ। প্রতিদিন অন্তত ৪০ থেকে ৬০টি প্রাইভেট কার নিবন্ধিত হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় বাসের নিবন্ধন একেবারে কম। রাজধানীতে প্রতি তিন হাজার যাত্রীর জন্য রয়েছে একটি বাস। গণপরিবহনের অভাবে তাই বিশাল জনগোষ্ঠীকে দুঃসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নগরীতে গড়ে ওঠেনি ট্যাক্সিক্যাব, রেল ও নৌপরিবহন সেবা। সড়ক, নৌ ও রেল- এ তিন ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় ৯৫ শতাংশ চাপ পড়ছে সড়কেই। অথচ নগরীতে বাস চলাচলের উপযোগী প্রধান সড়ক আছে মাত্র ৮৮ কিলোমিটার। আদর্শ নগরীতে রাস্তা থাকে ২৫ শতাংশ, ঢাকায় আছে প্রায় ৯ শতাংশ।

জানা যায়, ঢাকায় প্রথম রেলপথ স্থাপন করা হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। মোটরযান চলাচল শুরু হয় গত শতকের তিরিশের দশকে। গত শতকেরই আশির দশকে আন্তনগর বাস যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তবে আজও রাজধানীর চারপাশে পরিকল্পিত বৃত্তাকার রেলপথ চালু হয়নি। অথচ ঢাকার চেয়ে ঢের বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত নগরী ভারতের দিল্লি কিংবা জাপানের টোকিওতে রেলভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার শক্ত ভিত গড়ে উঠেছে। রেলকে বলা হয় ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার ‘লাইফ লাইন’।

পাকিস্তান আমলে ১৯৫৮-৫৯ সালে ডিআইটির (ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট) নেওয়া মহাপরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করেই মিরপুর রোড, ভিআইপি রোড, তেজগাঁও রোড, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, বনানী, গুলশান, উত্তরা ও শেরে বাংলানগর নিয়ে একটি সড়ক অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল। এরপর বড় ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০০৪ সালে। ২০২৪ সালের মধ্যে কী ধরনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে তার সুপারিশ করা হয়েছে এই ‘কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায়’। জনসংখ্যার চাপ কমাতে বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশও তাতে করা হয়।

কী আছে এসটিপিতে : ২০০৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ঢাকা ও পাশের জেলাগুলোর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদি এসটিপি প্রণয়ন করা হয় ২০০৪ সালে। এসটিপির আওতায় চার ধাপে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকায় ৫০টি নতুন সড়ক নির্মাণ, এক রুটে একটি বড় কম্পানির বাস পরিচালনার ব্যবস্থা (বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ- বিআরএফ), আলাদা লেনে বিশেষ ধরনের একাধিক বাস চলাচল (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট- বিআরটি) চালু, মেট্রোরেল বা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট- এমআরটি, উড়াল সড়ক-সেতু, বৃত্তাকার নৌপথ ও স্বল্প দূরত্বের রেলসেবা চালুর কথা ছিল। এর মধ্যে কিছু উড়াল সড়ক ও সেতু নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। মেট্রোরেল ও বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে প্রায় ১০ বছর। এসটিপির পরিকল্পনা অনুসারে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২০ কোটি ডলার। বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখন ব্যয় তিন গুণ বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৫২০ কোটি ডলার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালের শুরুতেই বিআরএফ পদ্ধতিতে রাজধানীর উত্তরা থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত উন্নতমানের বাস পরিবহনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে তা আর চালু হয়নি। এসটিপিতে কিছু সড়ক রিকশামুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছিল। এর কিছু বাস্তবায়নও হয়। তবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়নি।

সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বৃত্তাকার নৌপথ থাকলেও ১৪টি সেতুর কারণে এটি পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ঢাকায় প্রিমিয়াম বাস সার্ভিস চালু হলে কিছুটা শৃঙ্খলার আলো দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কারণ সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার জন্য গঠিত ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

নগরীর ৩৭ শতাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করে। অথচ রাজধানীর ৭০ শতাংশ ফুটপাত দখল হয়ে আছে। এসটিপিতে ফুটপাতগুলো হাঁটার উপযোগী করার সুপারিশ ছিল। তবে সুপারিশ অনুসারে মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক, জিয়া কলোনি থেকে মিরপুরের মাটিকাটা পর্যন্ত উড়াল সড়ক ও হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। ঢাকা উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল (উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ), উত্তরা থেকে গাজীপুর বিআরটি, গাবতলী থেকে আজিমপুর পর্যন্ত উড়াল সড়ক কাম বিআরটি প্রকল্প ও মৌচাক-মগবাজার উড়াল সড়ক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রথম ধাপে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তেজগাঁও-বিমানবন্দর টানেল, মেরুল বাড্ডা-গোলাকান্দাইল সড়ক, ঢাকা বাইপাস, মালিবাগ-জনপথ সড়ক, রমনা স্টার গেট-নটর ডেম কলেজ সড়ক নির্মাণ- কোনোটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেই।

দ্বিতীয় ধাপে বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশিত খিলগাঁও-টঙ্গী সড়ক, সার্কুলার রিং রোড, শিয়া মসজিদ-বেড়িবাঁধ সড়ক, আজিমপুর-বেড়িবাঁধ সড়ক, উত্তরা-১০ নম্বর সেক্টর-বেড়িবাঁধ সড়ক, মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশন (সাগরিকা)-বনানী সড়ক, পূর্বাঞ্চলীয় বাঁধ, যাত্রাবাড়ী-পোলার রোড সড়ক ও পল্লবী-বেড়িবাঁধ সড়কের কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি। তবে জিয়া কলোনি-মিরপুর সড়ক, বিজয় সরণি-শহীদ তাজউদ্দীন সরণি, পান্থপথ-রামপুরা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

তৃতীয় ধাপে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন, আশুলিয়া-আরিচা সড়ক, খিলক্ষেত-ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক, ইস্টার্ন বাইপাস-ঢাকা বাইপাস সড়ক, কোনাখোলা-হজরতপুর সড়ক, বাসাবো-বালু নদী সড়ক, মোহাম্মদপুর-কেরানীগঞ্জ সড়ক, ইস্টার্ন বাইপাস, জিগাতলা-হাজারীবাগ সড়ক, ওয়েস্টার্ন বাইপাস, বিরুলিয়া-আশুলিয়া সেতু, ঢাকা লিঙ্ক রোড, যাত্রাবাড়ী-ডেমরাঘাট সড়ক নির্মাণের কথা রয়েছে। আর চতুর্থ ধাপে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হজরতপুর-হেমায়েতপুর, ফতুল্লা-মুন্সীগঞ্জ, হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ, প্রগতি সরণি-বালু নদী, মতিঝিল-কমলাপুর, পল্লবী-উত্তরা তৃতীয় পর্ব, মোহাম্মদপুর-মিরপুর, কৃষি মার্কেট-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাঁধ, মিরপুর চিড়িয়াখানা-বেড়িবাঁধ, উত্তরা ৮ ও ৪ নম্বর সেক্টর থেকে বালু নদী পর্যন্ত, সাভার ইপিজেড থেকে ওয়েস্টার্ন বাইপাস, বুড়িগঙ্গা প্রথম ও দ্বিতীয় সেতুর মধ্যে সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগাম কোনো প্রস্তুতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। পাঁচ বছর পর পর এসটিপি পর্যালোচনার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

এসটিপি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ডিটিসিএর সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহউদ্দিন

বলেন, ঢাকা নগরী থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। ঢাকা থেকে সরিয়ে দিতে হবে গার্মেন্টগুলো। অর্থ, পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয় নগরীর কেন্দ্রে না রাখলেও চলে। পাশাপাশি এসটিপিতে নির্দেশিত মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম চালু করতে হবে। না হলে তিন-চার বছরের মধ্যে এ নগরী বসবাসঅযোগ্য হয়ে পড়বে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালু হলে প্রাইভেট কারকে নিরুৎসাহিত করা যাবে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় আজ যে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে, তার মূলে রয়েছে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ পদ্ধতি চালু না করা। বাস-মিনিবাসগুলো চলবে একেকটি কম্পানির নিয়ন্ত্রণে। নির্দিষ্ট রঙের বাসগুলো চলবে চিহ্নিত রুটগুলোয়, বাসগুলো দাঁড়াবে নির্দিষ্ট স্টপেজে। থাকবে বাস-বে। এ ব্যবস্থা না করে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে রুট পারমিট দেওয়া হচ্ছে। মালিকরা চালকদের বেতন না দিয়ে পারিশ্রমিক দেন। এ কারণে গাড়িচালকরা প্রতিযোগিতা করে যাত্রী তোলেন। নির্দিষ্ট কম্পানির অধীনে বাস ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ হলে এ অবস্থা হতো না। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন এসটিপির সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

জনসংখ্যাবিদ নুর-উন-নবী বলেন, ঢাকা মহানগরীর বাইরে শিল্প-কারখানাগুলো সরানোসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নাগরিক সব সুবিধা বাড়ালে রাজধানীমুখী চাপ কমবে। নগরবাসীকে হাঁটা ও বাইসাইকেল ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিকল্প হিসেবে ট্যাক্সি সার্ভিস গড়ে তুলতে হবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here