নিউজ ডেস্ক :: আজ ভারতিয় আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাগড়াগড়-কাণ্ডের পর থেকেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ধরপাকড় এ রাজ্যের জ্বলন্ত ওই সমস্যা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বর্ধমানের বিস্ফোরণের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নির্দেশে বাড়তি সতর্ক রয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আর তার জেরে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকা থেকে ধরা পড়ছে পরের পর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। সোমবার দুপুরেও দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে দুই মহিলা-সহ মোট ১৭ জন বাংলাদেশিকে আটক করে বিএসএফ। হিলি সীমান্তের কাঁটাতারহীন এলাকা দিয়ে ওই দলটি বাংলাদেশ থেকে এ পারে ঢুকে বাস ধরে বালুরঘাটে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ।
বিএসএফের হিলির কমান্ডার সংগ্রাম বিসওয়াল বলেন, “বাংলাদেশের নোয়াখালি, ঢাকা, নবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার এই বাসিন্দাদের বয়স ১৯ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ধৃতদের মধ্যে সইদুল ইসলাম ও আব্দুল মজিদ পাটোয়ারির কাছে এ দেশের প্যান ও ভোটার কার্ড মেলায় তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।” কী করে
তারা প্যান ও ভোটার কার্ড পেল, বিএসএফের গোয়েন্দা শাখাও তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। বাকি ১৫ জনকে বিজিবি-র মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ রাজ্যের একাধিক নির্বাচনী জনসভায় অনুপ্রবেশ রুখতে রাজ্য সরকারের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছিলেন। তার পাল্টা হিসাবে মোদীকে কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরানোর হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত কয়েক দিনে শুধু হিলি সীমান্তেই বিএসএফের হাতে ৭০ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সংগ্রাম বিসওয়াল বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ধৃত অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে সঙ্গে ও-পারে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ রয়েছে। তবে, সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে তদন্তের প্রক্রিয়াও চলছে।”
রবিবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্ত পেরিয়ে দালালের সঙ্গে বাংলাদেশে ঢোকার সময় মহম্মদ আজিজ নামে এক যুবককে ধরে ফেলে বিএসএফ। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বছর বাইশের হিন্দিভাষী ওই তরুণ জেরার সময় বিএসএফকে বিভ্রান্ত করে। প্রথমে সে জানায়, হায়দরাবাদে তার বাড়ি। জওয়ানেরা তাকে সেখানকার ভাষায় কথা বলতে বললে অবশ্য সে থতমত খেয়ে যায়। পরে জেরার মুখে আজিজ দাবি করে, তার আসল বাড়ি মায়ানমারে। কাজের সূত্রে বছর আড়াই আগে সে বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে এ দেশে ঢুকেছিল। হায়দরাবাদে থাকে ভাইয়ের সঙ্গে। আজিজের কাছ থেকে একাধিক জাল ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড, মুম্বই ও হায়দরাবাদের কয়েক জন ব্যবসায়ীর ঠিকানা-ছবি, সৌদি আরব থেকে আসা লক্ষাধিক টাকার রসিদ এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে।
রবিবার রাতে নদিয়ার গাংনাপুর থানার রামেশ্বরেরপুর এলাকা থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে মহম্মদ মহাবুবুর রহমান শেখ নামে এক এক ইমামকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বছর সাতাশ বয়েসের মহাবুবুর আদতে বাংলাদেশের নোয়াখালির গোপীনাথপুরের বাসিন্দা হলেও স্থানীয় মসজিদে তিনি বছর দেড়েক ধরে ইমামের কাজ করছিলেন। জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “এ দেশে প্রবেশের বৈধ কাগজপত্র ছিল না ধৃতের কাছে। পুলিশ হেফাজতে নিয়ে তাঁকে জেরা করা হবে।”