হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সমুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি :: নোয়াখালী বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত দেড় মাসে চিকিৎসা নিতে আসা ১৪ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মারা গেছে  ঠান্ডা জনিত রোগে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রায় এক তৃতীয়ংশই শিশু।

পাশাপাশি রয়েছে এ হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট। বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ চিকিৎসকরাই শিশুদের সব জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত হাতিয়া উপজেলায় প্রায় ৮ লাখ লোকের জন্য একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

৫০ শয্য বিশিষ্ট হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন দুর্গম চর থেকে শত শত শিশুসহ বিভিন্ন বয়সীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। কিন্তু অসহায় ও দরিদ্র চরাঞ্চলের মানুষ এ হাসপাতাল থেকে বরাবরই ভালো চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে এ হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ফলে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা দিয়ে বেশির ভাগ শিশু রোগীদের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন অভিভাবকরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৬০০ রোগী ভর্তি হয় এ হাসপাতালে।

এর মধ্যে ৪৭২ শিশু এবং গত এক সপ্তাহে এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয় ২৮৬ জন। তার মধ্যে ১৪৮ জনই শিশু। ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে মারা গেছে এ পর্যন্ত ১৪ জন। বেশির ভাগ শিশু মারা গেছে নিউমোনিয়া,শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ঠান্ডা জনিত রোগে।

মারা যাওয়া শিশুরা হল- ইভানা (৩), ওবায়েদ উল্লা (৬ মাস), জাহেদা বেগমের নবজাতক (৩ দিন), আল-আমিন (৯ দিন), রিনা আক্তারের নবজাতক (৭ দিন), পান্না বেগমের নবজাতক (১৩ দিন), মোহাম্মদ (১০ দিন), সীমা আক্তারের নবজাতক (৬ দিন), লাভলি আক্তারের নবজাতক (১ দিন), পারভিন আক্তারের নবজাতক (১ দিন), মো. সজিব (৫ মাস), মো. বাবু (১ দিন), মিনারা বেগমের অকাল জন্ম নেওয়া শিশু ও সীমা বেগমের নবজাতক (১২ দিন)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শিশু রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসক নেই। সাধারণ চিকিৎসকরাই শিশুদের সব জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন পদে ৩১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে এ হাসপাতালে রয়েছে ১০ জন। তার মধ্যে দুইজন অনুমোদিত বিহীন ছুটিতে, একজন ছুটিতে, দুই জন প্রশিক্ষণে রয়েছেন।

ফলে ৫ জন সাধারণ চিকিৎসক দিয়ে বর্তমানে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা।

জাহাজমারা থেকে আসা এক ভূক্তভোগী রুগি জানান, সাত মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। গত কয়েকদিনের ঠান্ডা শিশুটির জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে কাশি দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে পাতলা পায়খানাও শুরু  হয়েছে। তার ওপর আবার শ্বাসকষ্ট ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিম উদ্দিন জানান, এখানকার অভিভাবকরা সচেতন না হওয়ায় বেশিরভাগ শিশুরই অবস্থা যখন খারাপের দিকে চলে যায় তখন হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আসার আগে ঝার-ফুঁক দিয়ে তারা অসুস্থ শিশুগুলোর অবস্থা সংকটাপন্ন করে তোলে। তখন চিকিৎসা দিয়েও যথাযত ফল পাওয়া যায় না। শিশুর মৃত্যু ঘটে।

এছাড়া নদী পথ হওয়ার কারণে সদর হাসপাতালে নিতে সময় নষ্ট হয়। এটিও শিশু মৃত্যু অন্যতম একটি কারণ।

নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. বিধান চন্দ্র সেন গুপ্ত হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, গত মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ শীত আসার কারণে হাতিয়ার শিশুরা ঠাান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজনের প্রানহানি ঘটেছে। এ সময় এক প্রকার ভাইরাসের সৃষ্টি হয়। যার ফলে শিশুদের নিউমোনিয়াসহ বেশ কিছু রোগ হয়। প্রতিরোধই এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা।

তিনি জানান, এ হাসপাতালে অতি দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞসহ আরও কয়েকজন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here