হরেক রকম মানুষ  সামিউল আলম তোষণ ::

আশেপাশে কিছু মানুষ আছে যারা তৈলময়। এদের শরীরের পরতে পরতে তেল। শ্যালা নদীর চেয়েও বেশি তেল। অন্যজনকে তেল দিতেই এদের জন্ম হয়েছে। কখন কিভাবে কাকে তেল দিতে হবে তার থিওরিটিকাল এবং প্র্যাক্টিকাল দুটোই তাদের জ্ঞাত। তেলগ্রহীতার কাছে তার মূল্য ব্যাপক। যতই দিবে তেল, বাড়িবে তোমার বেল। এটিই পৃথিবীর একমাত্র তেল যার উপর ম্যারিকা লোভ করার সাহস পায়না। এই তেল কখনো ভাসেনা। এর উপর সবাই ভাসে। দেশ, রাষ্ট্র, সমাজ ভাসে।

আশেপাশে কিছু মানুষ আছে যারা দল পাকায়। তারা নিজেদের অতিসামাজিক প্রাণী মনে করে থাকে। তারা একা থাকতে পারেনা। একা চলতে পারেনা, ঘুমোতে পারেনা, খেতে পারেনা। মে’বি শুধু প্রাকৃতিক কাজ একা সারে। তারা কখনই রাজনৈতিক নেতা হবেনা। তবু তারা দল ভারী করতে ব্যাস্ত। এটাই তাদের হবি। দলবল নিয়ে চলতে তাদের ‘সেই’ ফিলিংস হয়। জগতজুড়ে গ্রুপিং।

আশেপাশে কিছু মানুষ আছে যারা খেলা করে। গুটি নিয়ে খেলা করে। গুটি চালে। এদের আমরা গুটিবাজ বলি। এদের মাথায় অসংখ্য গুটি। অবসরে এরা গুটিবাজি চিন্তা ভাবনায় মশগুল থাকে। কাকে কখন কিভাবে গুটিবাজি পেচগিতে ফেলে ব্যাম্বু দিবে সেই ভাবনায় তাদের দিন কাটে। নতুন নতুন গুটির আবির্ভাব আর নতুন মানুষের উপর পুরনো গুটি প্রয়োগে এরা পৈশাচিক আনন্দ পায়।

আশেপাশে কিছু মানুষ আছে যারা ফাপরবাজ পোর্টেবল এন্সাইক্লোপিডিয়া। আইনস্টাইন এদের সাথে কথা বললেও নিজের জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতেন। এরা জানেনা এমন কিছু নেই। আপনার মাথার বর্তমান চুলের এগজাক্ট সংখ্যা কতো, আজ থেকে ১৭ বছর আগে কতো ছিলো এবং মৃত্যুপূর্ব মুহূর্তে কতো থাকবে এটা তাদের জানা। তাদের ডিকশনারিতে ‘জানিনা’ শব্দটি অস্তিত্বহীন যদিও তারা অনন্ত জলিল এর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় নন। কিছুক্ষন তর্ক করলেই বুঝতে পারবেন তাদের দৌড় কদ্দুর। লিটল বিট অফ বিদ্যার হিউজ ফাপরবাজিতে আপনি তাদের ৩৫ তম বিসিএস এর ফরেইন ক্যাডার মনে করতেই পারেন।

আশেপাশের কিছু মানুষ আছে যারা উইকড ইন ব্যাকবোন। তাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে লালিত হয় শয়তানি আর বিতলামি। যে কোন বিষয় তাদের কাছে “সরল অঙ্কের প্রশ্ন”এর মতো। এর সাথে লগারিদম, সমাকলন আর ব্যাবকলন এর রঙ মাখিয়ে বিষয়টাকে করা হয় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্নের সমতুল্য। অথচ মূল বিষয়টি খানিকটা এরকম ছিলো- জনৈক ব্যাক্তি ভাত খেয়ে হাত ধোয়নি।

আশেপাশের কিছু মানুষ আছে যাদের হার্ডডিস্ক ক্যাপাসিটি টেন্ডস টু জিরো। এক্সট্রা ইনফরমেশন আর রংচঙে সংবাদ তাদের হার্ডডিস্কে থাকতে চায়না। যাই তারা শুনে তাই উজার করে দেবার নেশায় মত্ত থাকে। এদের আমরা পেট পাতলা বলে থাকি। শোনা কথা জিপির দ্রুত গতির থ্রিজি ইন্টারনেট স্পিডে অন্যকে পৌঁছে দিতে পারলেই তাদের শান্তি। এদের বিরুদ্ধে দুদক কিংবা অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করে লাভ নেই। কারণ তারা বুঝে হোক, না বুঝে হোক জুলিয়ান এসেঞ্জ কে আদর্শ মনে করে।

আশেপাশের এই মানুষগুলো ডানে কিংবা বাঁয়ে তাকালেই দেখতে পাবেন। দেখতে পাবেন তারা কিভাবে স্বীয় বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে সমাজের প্রতি স্তরে তিন চাকার অটো এর মতো যত্রতত্র যেমন খুশি তেমন চলাচল করছে। এরাই আপনাকে জি বাংলা, স্টার জলসা কিংবা অন্য কোন হিন্দি সিরিয়ালের প্যাঁচের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আপনাকে ভালো হয়ে থাকার খলনায়কে পরিনত করবে।

আশেপাশের কিছু মানুষ যারা বিনয় আর অমায়িকতার ছাপ রাখছেন তারা সমাজে ভ্যান্দা হিসেবে পরিচিত। আদর্শ আর সৎকর্ম তাদের চরিত্রের দুর্বল দিক হিসেবে বিবেচিত হয়। সামাজিক উন্নতি কিংবা আর্থিক সচ্ছলতায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। মনুষ্যত্ব আর চেতনাবোধ প্রদর্শনকালে তারা অর্জন করেন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ তিরস্কার। আশেপাশের কিছু মানুষ শুধু আপনার অর্থ দেখবে। দু চোখ খোলা রেখেই দেখবে। কিন্তু অর্থের উৎস দেখবে দু চোখ বুজে। দু চোখ খোলা রেখেই ধিক্কার জানাবে সৎ উপার্জনকারী দিন মজুরকে। দু চারটা লাশ ফেলে দিলেই কিছু মানুষ আপনাকে নায়ক উপাধি দিবে।

উপরিউক্ত সবাই মানুষ। সবার-ই দুটি হাত, দুটি পা, দুটি চোখ আছে। আর আছে একটি বিবেক। বিবেকের ভেদেই পার্থক্য তৈরি হয় মানুষে মানুষে। যেই বিবেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর প্রতিপত্তির আশায় নিজেকে জলাঞ্জলি দিয়ে স্রোতে গা ভাসায় সেই বিবেক কে ধিক্কার। বিনয়, অমায়িকতা, সততা আর শর্তহীন পরোপকার হোক আদর্শ।

লেখক: সহকারী প্রকৌশলী, এগ্রেকো ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র,  ইমেইল: toshon123@yahoo.com

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here