স্টাফ রিপোর্টার :: ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র মহাসমাবেশে বোমা হত্যাকান্ডের ১৭তম বার্ষিকীতে আয়োজিত সমাবেশ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দুর্নীতি, লুটপাট, সাম্প্রদায়িকতাকে পরাজিত করে গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য আওয়ামী ও বিএনপি ধারার বাইরে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীলদের বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।
নেতৃবৃন্দ হত্যাকারী ও এর নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার না হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০ জানুয়ারির হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ হয়নি। এই হত্যাকান্ডের বিচার দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। দায়সারাভাবে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।এই ধারা চলতে থাকলে রাজনীতিতে সুষ্ঠু ধারা ব্যাহত হবে, আর ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের স্বার্থরক্ষাকারী পার্টি যাতে মাথা উঁচু করে না দাঁড়াতে পারে সেজন্য ২০০১ সালে সিপিবি’র মহাসমাবেশে বোমা হত্যাকান্ড সংগঠিত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রকারীরা পরাজিত হয়েছে। আজ বাম প্রগতিশীলা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনস্বার্থের সংগ্রামে এগিয়ে নিচ্ছে। সচেতন মানুষকে এই ধারায় সংগঠিত হতে হবে।
২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সিপিবি’র মহাসমাবেশে বোমা হামলায় শহীদ হন হিমাংশু মন্ডল, আব্দুল মজিদ, আবুল হাসেম, মোক্তার হোসেন ও বিপ্রদাস রায়। এই শহীদদের স্মরণে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সাইফুল হক। সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স ও খান আসাদুজ্জামান মাসুম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
আজ সকাল ১০টায়, ২০০১ সালের ঘটনার ভিডিও চিত্র প্রদর্শন ও উদীচীর স্মরণ সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, জাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণসংহতি আন্দোলন, গণমুক্তি ইউনিয়ন, জাতীয় গণ ফ্রন্ট, ঐক্য ন্যাপ, গণফোরাম, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কৃষক সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ক্ষেতমজুর সমিতি, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট টিইউসি, ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, যুব মৈত্রী, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, সিপিবি ঢাকা মহানগর, নারী সেল, গাজীপুর, যশোর জেলা এবং ঢাকা নগরের বিভিন্ন শাখাসহ শতাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
এরপর অনুষ্ঠিত সমাবেশ শেষে আন্তর্জাতিক পরিবেশন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের এই দিনে রাজধানীর পল্টন ময়দানে সিপিবি’র লাখো মানুষের মহাসমাবেশে বোমা হামলা চালায় প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতক চক্র। এই হামলায় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু ম-ল, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরা থানার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের মোক্তার হোসেন ঘটনাস্থলেই এবং খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কমরেড বিপ্রদাস রায় আহত হয়ে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ওই বছরেই ২ ফেব্রুয়ারি শহীদের মৃত্যুবরণ করেন। বোমা হামলায় শতাধিক কমরেড আহত হন। এঁদের মধ্যে অমর মন্ডল, মো. জাহাঙ্গীর, আব্দুস সাত্তার, মিজানুর রহমান, এম. এ করিমসহ অনেকে পঙ্গু অবস্থায় বেঁচে আছেন।