ডেস্ক নিউজ: সৌদি আরবে প্রবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন নাটকে কটূক্তি করার প্রতিবাদে রিয়াদে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন রিয়াদের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। রিয়াদের বাংলাদেশী অধ্যুষিত হারাতে শুকুর আল রিয়াদ কন্ট্রাক্টিং কোম্পানির হল রুমে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও সৌদি আরব সাংবাদিক ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন রিয়াদের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা।

সভায় সিনিয়র অনলাইন এক্টিভিস্ট আমিনুল হুদা শাহিন বলেন, “আমরা প্রায়ই টেলিভিশনের মধ্যে বিভিন্ন নিউজে শুনে থাকি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফান্ড অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এই ফান্ড গড়ার পেছনে যে প্রবাসীদের সবচেয়ে বেশি অবদান তারা হলেন সৌদি আরব প্রবাসী। অথচ আমরা দেখি বিভিন্ন সময় বহু নাটক সিনেমায় সৌদি আরবসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের কটাক্ষ করে নাট্য নির্মাতা এবং এর কলা কুশলীরা। তাই আমি আশা করব বাংলাদেশ সরকার যেন এর যথাযথ বেবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং নির্মাতারা ভবিষ্যতে এ ধরনের নাটক সিনেমা নির্মাণ থেকে বিরত থাকে।”

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মোহাম্মদ আল আমীন বলেন, “দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে এই প্রবাসীদের টাকার কারণে, কোনো নাট্য নির্মাতা কিংবা অভিনেতার নয়। তাই একজন সৌদি প্রবাসী হিসেবে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

আরেক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুল হালিম (বাংলাভাষী) তার বক্তব্যে বলেন, “যারা আমাদের তথা প্রবাসীদের কটাক্ষ করার তাদের কোনো অধিকার নেই, আজকে শুধু মাইক-নাটক আর মোশারফ করিম নয়, এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। আমাদের প্রত্যেক প্রবাসীদের সাথে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জনপ্রতি সাতজন মানুষ জীবন জীবিকা জড়িত। অথচ আমরা নাকি ফকিরনি।”

তরুণ কবি ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট শাহিনুর বলেন, “সৌদি পৃথিবীতে মানুষ তিন প্রকারের আছে, উত্তম, মধ্যম এবং অধম। এখন আমরা যাদেরকে উত্তম হিসেবে জানি তারা যদি অধমের মত কাজ করে বসে তাহলে আমার কিছুই বলার নেই। আমি এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলব আপনারা নাটকে কী ধরনের বাক্য ব্যাবহার করেছেন তা নিজেরাই একবার শুনেন তারপর প্রচার করেন।”

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফখরুল ইসলাম বলেন, “নাটক-সিনেমা তথা সংস্কৃতি হচ্ছে একটি সমাজের দর্পণ, অথচ অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে পুরো জাতির সামনে সেই দর্পণের মাধ্যমে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের যেভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। তাই আমি এর সাথে সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করছি এবং ভবিষ্যতে এহেন কর্মকাণ্ড থেকে সব নাট্য নির্মাতা কলা কুশলি থেকে শুরু করে সবাই এই জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”

সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট শাহ পরাণ মিঠু বলেন, “যে নাটক সিনেমা দিয়ে প্রবাসীদের পরিশ্রমের মূল্যায়ন করা হবে, অথচ সে নাটক-সিনেমা দ্বারা সৌদি প্রবাসীদের হৃদয়ে আঘাত দিচ্ছেন যা মেনে নেয়া অসম্ভব তাই আমি অনতি বিলম্বে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”

এসময় তিনি আরো বলেন, “নাট্য নির্মাতা এবং কলা কুশলিরা যদি ক্ষমা প্রার্থনা না করেন তাহলে আমরা সবাই মিলে দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রাদানসহ যা যা করা প্রয়োজন সবকিছুই করবো।”

অটোক্যাড ইঞ্জিনিয়ার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তসলিম খন্দকার বলেন, “আমরা ফকিরনি নই, বরং যারা আমাদের টাকায় দেশে বসে আয়েশ করছেন আর বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছেন তারাই ফকিরনি। আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা উপার্জন করি, কারো কাছে হাত পাতি না।”

সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জাহাঙ্গির আলম হৃদয় তার বক্তব্যে বলেন, “সৌদি আরবে আসতে পারে শুধু সৌভাগ্যবানরা কারণ এটা রাসুলের দেশ এখানে আসা সবার ভাগ্যে জোটে না। আমি নাট্য নির্মাতাদের কাছে অনুরোধ করব তারা যেন গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ভবিষ্যতের জন্য শুধরে যায়।”

অন্য আরেক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট কাওসার বলেন, “আমি নিজে মোশারফ করিমের এলাকার এবং তার ভক্ত। আজকেও আমি মোশারফ করিমের অভিনয় দেখে এখানে এসেছি। উনার একজন ভক্ত হিসেবে আমার দাবি থাকবে উনি যেন প্রবাসীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ভবিষ্যতে এমন কুরুচিপূর্ণ নির্মাতাদের নাটকে অভিনয় না করেন।”

এসময় ‘মাইক’ নাটকের পাশাপাশি উঠে আসে “নজরবিহিন নজির আলী” সিকান্দার বক্স” সিরিজসহ আরো অনেক নাটকের নাম। পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা করা হয় যে সমস্ত চ্যানেল এই নাটকগুলো প্রচার করেছে সে সমস্ত চ্যানেলের। এসময় অভিনেতা মোশারফ করিমের উচ্চারিত ডায়ালগটি শুনে অনেকেই আবেগে আপ্লূত হয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেন। অনেকেই বলতে থাকেন “সারাজীবন কষ্ট করে এই প্রতিদান পেলাম”।

উপস্থিতিদের সবাই তাদের বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে তাদেরকে পুরো জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জাহাঙ্গির আলম, সালাহ উদ্দিন, রাসেল মির্জা প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here