Lakshmipur pic (2) 06.08জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর : উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। মেঘনানদীপাড়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলা। দীর্ঘ চার দশক ধরে ভাঙছে এ জনপদ। বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল কলেজসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ছিন্ন হয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন। নিঃস্ব হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

তবুও যেন রক্ষা নেই। ভাঙনের মুখে পড়েছে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আলেকজান্ডার-সোনাপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, আলেকজান্ডার শহর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা যখন হতাশ, ঠিক তখন ভাঙন রোধে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। এতে করে ফিরে আসে স্বস্তি। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে মেঘনাপাড়ের রামগতির ও কমলনগর উপজেলার মানুষেরা।

জেলার রামগতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের তত্ত্ববাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করছে। অস্বাভাবিক জোয়ার, তীব্র ঢেউ ও নানা প্রতিকূলতায় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষায় প্রাণান্ত চেষ্টা তাদের। দিন-রাত ৬০ জন কর্মকর্তা ও সৈনিক উত্তাল মেঘনার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন। এ যুদ্ধ মেঘনাপাড়ের মানুষের ভিটে-মাটি রক্ষার যুদ্ধ, মুখে হাসি ফুটানোর যুদ্ধ।

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারী থেকে ভাঙন রোধে কাজ শুরম্ন হয়। প্রথম দিকে আলেকজান্ডার বাজার সংলগ্ন ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কথা ছিল। পরবর্তীতে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নেয় সেনাবাহিনী। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও পাঁচ মাসে করা হয় এক বছরের কাজ। ছয় লাখ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয় মেঘনা নদীতে, দেওয়া হয় বস্নক।

স্থানীয়রা জানায়, সেনাবাহিনী নদী ভাঙন রোধে কাজ না করলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই আলেকজান্ডার -সোনাপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, রামগতি উপজেলা কমপ্লেক্স, আ স ম আবদুর রব সরকারী কলেজ, আলেকজান্ডার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আলিয়া মাদ্রাসা ও আলেকজান্ডার বাজারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যেতো। আমরা ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছি। সেনাবাহিনীর কাজে আমাদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। অবশিষ্ট কাজও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করার দাবী জানান তারা।

রামগতি পৌর এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা জানান, নদী ভাঙন থেকে মাত্র দেড়শ গজ দূরে ছিল তাদের বসতভিটা। বাঁধ দেওয়ায় তাদের শেষ সম্বল রক্ষা পেয়েছে।

আলেকজান্ডার বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বাহার খন্দকার জানান, ভাঙনরোধে সেনাবাহিনী কাজ না করলে ঐতিহ্যবাহী আলেকজান্ডার বাজার এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতো। ভাঙন ঠেকাতে পারায় বর্তমানে ব্যবসায়ীরা স্বসিত্মতে ব্যবসা করছে।

রামগতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ বলেন, সেনাবাহিনীর সততা, আন্তরিকতা ও নিরলস পরিশ্রমে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে রামগতিবাসী। বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করে রামগতি ও কমলনগরকে রক্ষা করতে সরকারের কাছে দাবী জানান তিনি।

অন্যদিকে, কমলনগরে বিস্তর্ণ এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ শুরু করে কমলনগরবাসীকে বাঁচাতে আহ্‌বান জানিয়েছেন কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফ উল্যাসহ স্থানীয়রা।

সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর হোসেন জানান, সরকারের নির্দেশনা ও সার্বিক সহায়তায় সেনাবাহিনী দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এসডব্লিউও এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল ওহাবের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইউনিটের সৈনিকরা পাঁচ মাসে ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার বাঁধের ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙন রোধে ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বরাদ্দ হওয়া অর্থে ৫দশমিক ৫কিলোমিটার বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। অবশিষ্ট অংশের বরাদ্দ পেতে চেষ্টা চলছে। বরাদ্ধ এলে জনগণের দাবী অনুসারে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ করা হবে।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে নদী ভাঙন রোধে ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার অনুমোদন করে একনেক। প্রথম পর্যায়ে ১৯৮ কোটি টাকায় রামগতি ও কমলনগরে ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। আরও ২৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের অপেক্ষায় আছে। ভাঙনরোধে বরাদ্ধ দিয়ে এ কাজ সেনাবাহিনী হাতে বাসত্মবায়ন করবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা রামগতি ও কমলনগরবাসীর।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here