সুশাসন সম্পর্কিত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজনস্টাফ রিপোর্টার :: সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সরকারকে জনগণের সাথে যোগাযোগ কার্যকরভাবে বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের জন্য সহায়ক আইনি পরিবেশ নিশ্চিত করা, এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে গণমাধ্যমকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।

মঙ্গলবার (২ মে) টিআইবি’র মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এসডিজি-১৬ ও সুশাসন: সরকার, গণমাধ্যম ও জনগণ শীর্ষক এক সংলাপে অংশগ্রহণকারীগণ এ মতামত তুলে ধরেন।

বিশ্ব গণমাধ্যম দিবস ২০১৭ উপলক্ষে টিআইবি আয়োজিত এ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নির্ধাারিত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন গণমাধ্যম বিশ্লেষক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এবং সাংবাদিক, গবেষক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক আফসান চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও গণমাধ্যম বিষয়ক বিশ্লেষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে এসডিজি-১৬ ও সুশাসন: সরকার, গণমাধ্যম ও জনগণ শীর্ষক একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন টিআইবি’র আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক ড. রিজওয়ান-উল-আলম।

উল্লেখ্য, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত এবং জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার সামন্তরাল বিকাশ, আইনের শাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সর্বোপরি জনগণ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপনে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। অন্যদিকে ২০১৬-২০৩০ মেয়াদী জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ঠ (এসডিজি), বিশেষ করে সুশাসন সম্পর্কিত অভিষ্ঠ ১৬ এর আঙ্গিকে গণমাধ্যমের সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা অধিকতর গুরুত্ব লাভ করেছে।

অনুষ্ঠানে এসডিজি ১৬’র সুশাসন সম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রার কার্যকর বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার এর করণীয় হিসেবে যা উঠে আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: সাংবাদিকরা যেন সঠিক সময়ে তথ্য পেতে পারেন ও তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ের সুযোগ পান এমন একটি সমন্বিত তথ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা; এসডিজি’র সুশাসন বিষয়ক ‘টেকনিক্যাল পরিভাষা’কে জনগণের সহজবোধ্য ভাষায় ছড়িয়ে দেওয়া; সুশাসনের চাহিদা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের তাৎপর্যময় ভূমিকা পালনের যোগাযোগের উপযোগী অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সরকারের উন্নয়ন যোগাযোগ কৌশল প্রণয়ন করা।

এছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড ও পরিচালনা পদ্ধতিকে জন-বান্ধব করা, স্থানীয় প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রচেষ্ঠা হিসেবে কমিউনিটি মিডিয়া, রেডিওকে সংবাদ প্রকাশের সুযোগ দেওয়া, জনগনকে তার অভিমত প্রকাশের সুযোগ দেয়া,  গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রনের প্রচেষ্ঠা না করা, ইন্টারনেট বা  ফেসবুক বন্ধের মত উদ্যোগ না নেয়া এবং গণমাধ্যমকে ‘পাবলিক গুড’ হিসেবে বিবেচনা করার মত পরামর্শ উঠে আসে আলোচকবৃন্দের বক্তব্যে।

সংলাপে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘এসডিজি অবহিতকরণ থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সকল পর্যায়ে সরকার ও জনগণের পাশাপাশি গণমাধ্যমের বিস্তৃত ভূমিকা রয়েছে যা সামগ্রিকভাবে লক্ষ্যসমূহ অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বিদ্যমান নানা ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজনিত চাপ, হুমকি, অসহযোগিতা, বাধা-বিপত্তি, স্বআরোপিত সেন্সরশিপ ইত্যাদি মোকাবেলা করে গণমাধ্যম কর্মীদের যেমন এগিয়ে যেতে হবে, তেমনি এ সকল বাধা-বিপত্তি সরিয়ে গণমাধ্যমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে জনগণ, বিশেষ করে এসডিজি প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে সরকারকে অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, সুশাসন বিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে সরকার, গণমাধ্যম ও জনগণের মধ্যকার আন্ত:সম্পর্ক বিশ্লেষণপূর্বক একটি বাস্তবায়ন কাঠামো এবং সকল পক্ষকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। পাশাপাশি, পেশাজীবি সংগঠনগুলো নীতি নৈতিকতার মান নির্দিষ্ট করে তা মেনে কার্যক্রম পরিচালিত হলে লক্ষ্য অর্জনে সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ হবার ঝুঁকি হ্র্রাস পাবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

গণমাধ্যমের করণীয় অংশে আলোচকবৃন্দ এসডিজি ১৬-এ সুশাসন সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপকহারে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার এর উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া গণমাধ্যমের সুশাসন সংক্রান্ত বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসা ও রাজনৈতিক পক্ষপাত-মুক্ত এবং নির্ভিক সাংবাদিকতার চর্চায় গুরুত্বারোপ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here