সুবর্ণচরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন

মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি :: আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুবর্ণচর উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে । উপজেলার ১১ ইউনিয়নের চাষিরা বোরো ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। এবার উপজেলায় বোরো ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে বলে মনে করছেন কৃৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলার নানা এলাকার চাষিরা বলেন, আবহাওয়া ভালো ছিলো এবং হালকা বৃষ্টিতে এবার ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। পাশাপাশি খেতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম ছিল। এ ছাড়া এবার ফসলের খেতে সময়মতো পানি ও সার দিতে পেরেছেন তাঁরা। মূলত এসব কারণে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে।

উপজেলা কৃৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার উপজেলায় ৫ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে চাষ হয়েছে এর চেয়ে বেশি জমিতে। উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।

এর মধ্যে চর জব্বার ইউনিয়নে ৬১৬ হেক্টর, চরজুবিলীতে ৫২৮ হেক্টর, চর ওয়াপদা ৫২ হেক্টর, চর মহিউদ্দিনে ৬৭১ হেক্টর, পূর্ব চরবাটায় ৬০৪ হেক্টর, চর আমান উল্যায় ৭৯২ হেক্টর, ও ক্লার্ক ইউনিয়নে ৪২০ হেক্টর, পশ্চিম চরবাটা ৭৩৫ হেক্টর, মোহাম্মদপুর ৪৯৮ হেক্টর,৭৭৩ হেক্টর ও জাহাজমারাতে ৪১১ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন চাল। তবে উৎপাদন ২৫ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে সুবর্ণচর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা উপজেলার চর আমান উল্যা, চর জুবিলীও চর ওয়াপদায় ধান মাড়াই করে ফলনের নমুনা (ক্রপ কাটিং) সংগ্রহ করেছি। সংগৃহীত নমুনা থেকে দেখা গেছে, হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন ৫ দশমিক ৩ মেট্রিক টন, যা বাম্পার ফলনেরই লক্ষণ।’

শনিবার দুপুরে উপজেলার চর জব্বার ইউনিয়নের চর জব্বার,চর জুবিলী ইউনিয়নের পশ্চিম চর জুবিলী, চর আমান উল্যাহ ও বিকেলে শাহবাজপুর মার্কের্টে গিয়ে দেখা গেছে, চাষিরা ধান মাড়াই ও ঝাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোনো কোনো জমিতে তিনজন আবার কোনো জমিতে চারজন করে শ্রমিককে ধান মাড়াই করতে দেখা গেছে।

উপজেলার চর জুবিলী পশ্চিম জুবিলী গ্রামের চাষি মো. আলম (৩৮) বলেন, ‘আমি ১২০ শতক জমিতে বোরো চাষ করেছি। গত মাসে টানা বৃষ্টি সত্ত্বেও ফলন ভালো হয়েছে। এখন ধান মাড়াই চলছে।’

চর জব্বার গ্রামের চাষি মোহাম্মদ ইউনুছ (৩০) বলেন, ‘আমি ৪০ শতক জমিতে ব্রি ধান-২৮ লাগিয়েছি। চাষ করতে সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ১০ হাজার টাকার লাভ পাব।’

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘বোরোর ফলন বাড়ানোর জন্য আমাদের সার্বিক সহযোগিতা ছিল। আমরা মাঠে-ময়দানে থেকে তাঁদের নিয়মিত পরামর্শ ও কৃষি সহায়তা দিয়েছি বলেই ফলন ভালো হয়েছে।’

জেলা কৃষি কর্মকর্তা ড.আবুল হোসেন বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি চাষিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা সময়মতো বিভিন্ন পরামর্শ ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ করায় চাষিরা লাভবান হয়েছেন।’

এদিকে সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে বোরো চাষে বাম্পার ফলন (তিনগুন) ফলানোর জন্য ৮জন সফল শ্রেষ্ঠ কৃষককে সংবর্ধনা ও তাদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টয় উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত উপজেলা মিলনায়তনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন থেকে এ কৃষকদের বাছাই করা হয়।

ইউনিয়নে কর্মকর্তা বন্টক সুপারভাইজার পদের কৃষি কর্মকর্তারা এ ৮জন কৃষকের বোরো ধানের বাম্পার (তিনগুন) ফলনের সফলতাকে চিহ্নিত করে এদের নামের তালিকা চুড়ান্ত করেন।

সংবর্ধিত কৃষকরা হলো, চরজব্বর ইউনিয়নের চরজব্বর গ্রামের কৃষক মো: মফিজ, চরবাটা ইউনিয়নের মধ্যচরবাটা গ্রামের মো: নুর মাওলা, চরক্লার্ক ইউনিয়নের কেরামত পুর গ্রামের মো: ইশ্রাফিল, চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চরআমিনুল হক গ্রামের আলা উদ্দিন, চরজুবিলী ইউনিয়নের চরমহিউদ্দিন গ্রামের মো: নুর হোসেন, চর আমান উল্যাহ ইউনিয়নের মো: এনায়েত উল্যাহ, পূর্বচরবাটা ইউনিয়নের মো: মমিনুল হক, মোহম্মদপুর ইউনিয়নের চর তোরাবআলী গ্রামের মো: নুর উল্যাহ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here