মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি

২০১১ সাল। ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে গত ১ বছরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ১২টি অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ১৮ জন জল ও বনদস্যু বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। ঐ সময় অস্ত্র উদ্ধার হয় ৮৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৪৪১ রাউন্ডগুলি। গ্রেপ্তার হয় ১২জন বনদস্যু।

দক্ষিণে জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা সহ  ও কয়েকটি উপজেলার কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে নয়নাভিমান ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। এ বন স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে রক্ষা করছে উপকূলীয় জীববৈচিত্র। এখানে বৈধ্য পথে জীবিকা নির্বাহ করছে লাখ লাখ মানুষ। জীবীকার তাগিতে তারা প্রবেশ করছে গহীন অরণ্যে। সেখানে বিপত্তি ঘটছে। আক্রমণের শিকার হচ্ছে সশস্ত্র বন ও জলদস্যুর। একাধিক সূত্র থেকে জানায়, সুন্দরবনে প্রায় এক ডজন বনদস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। আর প্রতিটি বাহিনীতে প্রায় অর্ধশতাধিক সক্রিয় সদস্য রয়েছে। গোটা সুন্দরবনের মধ্যে স্ব-স্ব এলাকা তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। বনদস্যুরা বৈধ্য পাশ নিয়ে আসা জেলে মৌয়াল, বাওয়ালী ও কাঠুরিয়াদেরকে জিম্মি করে আদায় করছে মোটা অংকের মুক্তিপণ।

এর ব্যতয় ঘটলে অনেক সময় মেরে নদীতে ফেলে দিচ্ছে বনদস্যুরা। দস্যুদের নিয়ন্ত্র করতে ২০১১ সালে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদারসহ র‌্যাব-৮ এর চৌকস দল ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ড লেঃ কর্নেল মনিরুল হকের নির্দেশনায় সুন্দরবনে ১২টি অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয় ১৮জন জল ও বনদস্যু। অস্ত্র উদ্ধার হয় ৮৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪১টি তাজা গুলি। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে পিস-ল ৪টি, ওয়ান সুটার বন্দুক ২৩টি, এলজি ৩২টি, এক নলা বন্দুক ২টি, কাটা বন্দুক ৯টি, ডিবিবিএল ১টি, এসবিবিএল ১৩টি, এয়ারগান ৪টি। এছাড়া গুলির খোসা ১০৭টি, খালি কারতুজ ৩৩টি, চাইনিজ কুড়াল ৪টি, রামদা ১৪টি, বান্ডুলিয়ার ২টি, বাইনোকুলার ২টি সহ অন্যান্য জিনিসপত্র। জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর ২০১১ সাল, বন্ধুক যুদ্ধে নিহত ২৯ জানুয়ারী বরগুনার বদরখালীতে আব্দুল খালেক (৪৯), ১৫ ফেব্রুয়ারী বরগুনার চরদুয়নিতে বাগেরহাটের অলিয়ার রহমান ওরফে ওলি ফকির (৩৯)।

২৩ ফেব্রুয়ারী পিরোজপুরের টোগরায়, বাগেরহাটের মোতালেব বাহিনীর প্রধান মোতালেব (৩৮), ২৮ ফেব্রুয়ারী বাগেরহাট শরণখোলার সুপতি খালে আবু সাঈদ শিকদার (৩৫) ও আসাদ ডাকাত (৩৭)। ২১ মে শরণখোলা পক্ষীর চরে বাগেরহাটের হালিম হাওলাদার (৩৪) ও বরগুনার কুদ্দুস ফকির (৪০)। ২২জুন শরণখোলা বড় শ্যাওলা খালে বাগেরহাটের জুলফিকার (৩৫), ভোলার মাঈনউদ্দিন মাঝি ওরফে মেঘনা জাকির (৪১), খুলনার হাফিজ ডাকাত (৪৮) ও এখলাছুর রহমান ওরফে সানু ডাকাত (২২)। ২৯ সেপ্টেম্বর শরণখোলা ধৈঞ্চেবাড়িয়া পিরোজপুরের বেলায়েত হাওলাদার (৩৫), খুলনার কামরুলজ্জামান ওরফে নাতি কামরুল (২৫), রওসন ইসলাম (৩০) ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। ১২ নভেম্বর নিশানখালী সাতক্ষীরার মান্নান (৩৮) ও পিরোজপুরের মাছুম (২৮)। ২০ ডিসেম্বর মেঘনার ভাসমান চরে ভোলার বাবুল হাওলাদার (৩৪)। সর্বসাকুল্যে বাগেরহাটে ৬ জন, বরগুনায় ২ জন, ভোলায় ২জন, খুলনায় ৪জন, পিরোজপুরে ২ জন, সাতক্ষীরায় ১জন ও অজ্ঞাত ১ জন সহ ১৮ জন নিহত হয়।

অতিতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। স্বসি-র নিঃশ্বাস ফেলছে বনজীবীসহ উপকূলীয় সাধারন মানুষ। উপকূলীয় মানুষের প্রত্যাশা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের তৎপরতা অব্যহত রাখুক।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here