এম এ কাসেম,সুনামগঞ্জ থেকে:

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ১২ হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে ১৫ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে না। কানামুইয়া, বলদা, পানা, উলান, কলমা, নোয়াল, গলগলিয়া ও সমসা-চুনখলা হাওরে জলাবদ্ধতায় প্রতি বছর অনাবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে। প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে বালু ও পলি পড়ে উপজেলার সবক’টি নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় হাওর থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উপজেলার এ ১২ হাওরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ১০ থেকে ১২ বছর ধরে জলাবদ্ধতা স’ায়ী হয়ে পড়ায় জমিগুলো অনাবাদি থাকছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, স’ায়ী জলাবদ্ধতায় ৫ হাজার একর জমি অনাবাদি হয়েছে। এলাকার কৃষকরাও জানান, অনাবাদি জমির পরিমাণ ১৫ হাজার একর। সমস্যা সমাধানে তারা নদী খনন, হাওর থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল ও নালা কাটা ও পরিকল্পিত স্লুইস গেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। মাটিয়ান হাওর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হাজি আবদুল জলিল তালুকদার বলেন, মাটিয়ান হাওরের ৭ হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। জলাবদ্ধতার জন্য দিন দিন অনাবাদি জমির পরিমাণ বাড়বে। শনির হাওর উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সমপাদক নুরুল আমিন বলেন, ১৫ বছর ধরে শনির হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে হাওরটির ৫ হাজার একর জমিতে স’ায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শনির হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য হাওরটির পশ্চিম দিকে অপরিকল্পিতভাবে ১৯৯৫ সালে একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়; কিন’ হাওরটির আহাম্মকখালী বাঁধের সামনে বৌলাই নদীতে চর পড়ায় স্লুইস গেটটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের লামাগাঁও গ্রামের কৃষক বজলু মিয়া বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে গলগলিয়া হাওরে তার ৩ একর জমিতে ১২ বছর ধরে আবাদ করতে পারছেন না। মাটিয়ান হাওর পাড়ের রতনশ্রী গ্রামের কৃষক পাখী মিয়া জানান, হাওরটির স’ায়ী জলাবদ্ধতায় ১০ বছর ধরে তার ৬ একর জমি অনাবাদি রয়েছে। দীর্ঘদিন অনাবাদি থাকার কারণে জমিগুলো আগাছা ও জঙ্গলে ভরে গেছে। শনির হাওর পাড়ের নোয়ানগর গ্রামের মুবাশ্বির আলী বলেন, আমার ৫ একর জমির সবটুকুই ১০ বছর ধরে পানির নিচে। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, হাওরগুলোর ৫ হাজার একর জমিতে স’ায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নানা কারণে জলাবদ্ধতা দিন দিন বাড়ছে।

তাহিরপুর ইউএনও মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, হাওরের জলাবদ্ধতা দূর করা এবং অকাল বন্যার হাত থেকে বোরো ফসল রক্ষায় নদী খননের প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকারের বৌলাই নদী খননের পরিকল্পনা রয়েছে। জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আফসারুজ্জামান বলেন, সিলেট উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এটি হলেই হাওরবাসীর সব সমস্যা সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে হাওরের পানি বের হওয়ার জন্য খালগুলো খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, হাওরপাড়ের নদীগুলো খনন করা হবে। তাছাড়া হাওরের ভেতরের পানি নিষ্কাশনের ছোট ছোট খালগুলো খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here