বিবিসি ষ্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের সময় অতর্কিত দুটি বোমা হামলায় অন্তত তিন জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য। বহু আহত মানুষকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কথিত জঙ্গি আস্তানায় সেনা অভিযান এখনো চলছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র জেদান আল মুসা জানিয়েছেন, নিহতদের একজন হচ্ছেন পুলিশ ইন্সপেক্টর চৌধুরি আবু কায়সার। অপর দুই নিহত ব্যক্তির মধ্যে একজন হামলকারি হতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন।

জেদান আল মুসা জানিয়েছেন, সিলেটের জঙ্গি যে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলছে সেখান থেকে প্রায় দেড় দুই কিলোমিটার দূরে একটি বোমা হামলায় এরা নিহত হন। মোটর সাইকেলে করে এসে হামলাকারীরা সেখানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে তিনি জানান।

এর আগে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে ঐ এলাকারই কাছাকাছি সেনাবাহিনির এক প্রেস ব্রিফিং শেষ হওয়ার পর। ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকরা যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন এই হামলা চালানো হয়।

সিলেটের স্থানীয় একজন সাংবাদিক আহমেদ নুর জানিয়েছেন, বোমাটি যখন বিস্ফোরিত হয়, তখন তার অল্প দূরেই ছিলেন তিনি। বিস্ফোরণের পর তিনি এখনো মানসিক ধকল সামলে উঠতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।

এর আগে সেনাবাহিনির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, শহরের যে বাড়িতে জঙ্গিদের ধরতে অভিযান চলছে, সেই বাড়িটি বিস্ফোরক পেতে ভরে রাখা হয়েছে বলে আশংকা করছেন তাঁরা।

আন্ত:বাহিনি জনসংযোগ দফতরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রাশিদুল হাসান জানিয়েছেন, এ কারণেই এই অভিযান শেষ হতে এত বেশি সময় লাগছে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার পাঁচতলা ভবনটি দুদিন ধরে ঘিরে রাখার পর শনিবার সকালে সেখানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান শুরু হয়। প্যারা-কমান্ডোদের একটি দল সকাল সাতটার দিকে ‘আতিয়া মহল’ নামে ওই পাঁচতলা ভবনটিতে সশস্ত্র অভিযান চালায়।

লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রাশিদুল হাসান জানান, পাঁচ তলা ভবনটি থেকে তাঁরা এ পর্যন্ত ৭৮ জন মানুষকে নিরাপদে বের করে এনেছেন। এখন ভেতরে জঙ্গি ছাড়া আর কেউ নেই বলে তাঁরা ধারণা করছেন।

তিনি বলেন, জঙ্গিদের সংখ্যা ৫/৬ জন হবে বলে তাঁরা অনুমান করছেন। তাদের আত্মসমর্পনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে ভেতরে তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এই বিস্ফোরণের শব্দ বাইরে থেকেও শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদকিরা।

সেখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে অবস্থানরত স্থানীয় সাংবাদিক শাকির হোসেন জানিয়েছেন, সিলেটে এখন তুমুল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যেই তারা বাড়িটির ভেতর থেকে আসা গুলিবর্ষণের শব্দ পাচ্ছেন। সেনাবাহিনির এই অভিযানটির নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’।

জানা যাচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় চিরুনি অভিযান শুরু করে কয়েকশ পুলিশ। এলাকাটি সিলেট শহরের ভেতরেই। জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে এই শিববাড়ির অবস্থান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যের দিকে তাদের অভিযান ঘনীভূত হয় দুটি বাড়িকে ঘিরে। দুটি বাড়ির মালিকই একই ব্যক্তি। তিনি অবশ্য আরো দূরের অন্য একটি বাড়িতে থাকেন।

তার কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভাড়াটিয়াদের জাতীয় পরিচয়পত্র বিশ্লেষণ করে পুলিশ ধারণা করে ‘আতিয়া মহল’ নামের পাঁচ তলা বাড়িটিতে মর্জিনা নামে এক মহিলার ভাড়া নেয়া ফ্ল্যাটটিই সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা। জাতীয় পরিচয়পত্রে মর্জিনার স্বামীর নাম মুসা বলে উল্লেখ আছে।

বৃহস্পতিবার সারা রাত এবং শুক্রবার সারা দিন ও রাত বাড়িটিকে ঘেরাও করে রাখলেও ভেতরে কোন অভিযান চালায়নি পুলিশ। অবশেষে শনিবার সকাল থেকে বাড়িটিতে অভিযান শুরু করল সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসের প্যারা-কমান্ডো দল।-বিবিসি 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here