আদিল হোসেন তপু, ভোলা প্রতিনিধি :: ভোলায় ভূয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এডিএম ও সচিবসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারনা করতে গিয়ে পুলিশের জালে আটকা পড়েছেন ঈমাম হোসেন (৩৫) ওরুপে ভাষানী নামের এক যুবক।
গ্রেপ্তারকৃত ইমাম আন্তজার্তিক অস্ত্র ও মাদক পাচার চক্রের অন্যতম সদস্য বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। তার বাড়ি জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের দরুন বাজার এলাকায়। তার পিতার নাম ইউসুফ মিয়া।
শনিবার রাতে ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, ভূয়া পরিচয়দানকারী ইমামকে প্রথমে শুক্রবার রাতে চরফ্যাশন থানা পুলিশ আটক করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
১৯৯৮ সালে অস্ত্র মামলায় ৮ বছরের কারাভোগের পরও ইমাম নানা রকম প্রতারনা করে আসছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে সিলেট ও বান্দরবনসহ দেশের গুরুপ্তপূর্ন জেলায় প্রতারনা করে লাখ লাখ টাকা ঘূষ গ্রহন করে। বছরে বেশ কয়েকবার ভারতে যাতায়াত করতো সে।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে ভোলার লালমোহন উপজেলার ফরাজগঞ্জ এলাকার রোজিনা নামের এক তরুনীকে বিয়ে করে। তাদের ঘরে একটি সন্তান রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, চলতি বছরে গাজীপুর এলাকার নাছির উদ্দিনের মেয়ে আইটি শিক্ষার্থী নাফিসার সাথে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ সময় তাকে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্পটে ঘুরে বেড়ায়।
নিজের পরিচয় গোপন করেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পরিচয় দিয়ে গত ২৩ জুন ওই ছাত্রীকে বিয়ে করে। তার সাথে পুলিশের ভূয়া আইডি কার্ড ও পিস্তল ছিলো।
শুক্রবার সকালে স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন নিয়ে ভোলার মনপুরা উপজেলায় ঘূরতে আসে ইমাম। মনপুরা থানার ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত কাজে এসেছে বলেও একটি চায়ের রেস্টুরেন্ডে বলে স্থানীয় লোকজনকে জানায়।
বিষয়টি তাৎক্ষনাত ওসি’র কাছে পৌছলে বিষয় ভোলার পুলিশ সুপারকে জানাকে ইমামকে আটকের ফাঁদ পাতে পুলিশ। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চ ঘাট থেকে আটক করে নিয়ে আসে। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে সকল প্রতারনার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করে।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় প্রতারক ইমামকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির করা হয়। পরে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য উপস্থাপনক করে পুলিশ সুপার। সেখানে ইমামের ২য় স্ত্রীসহ শশুর বাড়ির লোকজন ছিলো।
ইমামের শাশুরী সাংবাদিকদের জানান, প্রতারনা করে ইমাম মেয়ের সর্বনাশ করে জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসনের নিকট তার উপযুক্ত বিচার চাঁই।
ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, সরকারী চাকুরীর পরিচয় দিয়ে প্রতারনা ও মানুষজনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন নানা অপকর্মের ঘটনায় পুলিশ বাদী চরফ্যাশন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পুলিশের ধারনা ইমাম আন্তজার্তিক অস্ত্র ও মাদক পাচার চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে। এ বিষয়টিও পুলিশ খতিয়ে দেখবে।
প্রতারনা স্বীকার ভোলার লালমোহনের আব্দুল রশিদ সাংবাদিকদের জানান, ভূয়া এডিএম পরিচয় দিয়ে ৩ বছর আগে তার দুই শ্যালককে রেল ও খাদ্য ভবনে চাকুরী দেয়ার নাম করে ৭লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক ইমাম। তার বিরুদ্ধে চরফ্যাশন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন বলেও জানান তিন।
এদিকে, ভূয়া পরিচয়দানকারী ইমামের গ্রেপ্তারে খবরে জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে টপ অব দ্যা টাইনে পরিনত হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসেন।