বেগম জিয়ার ইতিবাচক সিদ্ধান্তরবীন্দ্র নাথ পাল :: দীর্ঘ আড়াই মাসের অবরোধ ও হরতালের পর ২০দলীয় জোট ২৮ এপ্রিলের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে যোগ দেবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। টানা অবরোধ ও হরতালে দলীয় নেতা কর্মীরা যখন ক্লান্ত হতাশ, সে সময় এমন একটি গুরুত্বপুর্ন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ২০দলীয় জোট। হামলা মামলায় কর্মীরা যখন ক্লান্ত-হতাশ, সরকার বিরোধী আন্দোলন যখন পথহারা পথিকের মত অবস্থা, সে সময় আন্দোলন থেকে সাময়িক ফিরে আসার একটি উপলক্ষ পেল, ২০দলীয় জোট।

দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে কর্মীরা ক্লান্ত হতাশ হয়ে যখন আন্দোলন থেকে সরে আসার একটি উপায় খুজঁছিল, ঠিক সে মুহুর্তে নির্বাচন কমিশন ঢাকা চট্রগ্রামের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ঘোষনা ২০ দলীয় জোটের কাছে শাপে বর হয়ে এসেছে। এর আগে আমি একটি লেখায় লিখেছিলাম বেগম জিয়া যেভাবে অবরোধ ও হরতাল দিয়ে সরকার পতন আন্দোলন চাইছে, সেভাবে অনন্তকাল ধরে চললওে সরকারের পতন হবে না। গনতন্ত্রে নির্বাচন অপরিহার্য। আর সেই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সাধারন জনগনকে জিম্মি করে সরকার পতন আন্দোলন কখনো সফল হবে না।

আগামী ২৯ মার্চ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলের মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন। ঢাকার দুটি ও চট্রগ্রামের একটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হবে আগামী ২৮ এপ্রিল। এরমধ্যেই মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহারের কাজ শেষ হবে। শুরু হবে মাঠের নির্বাচনী যুদ্ধ।

গত ২০ মার্চ ঢাকা ভার্সিটির সাবেক উপচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহামদ ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম জিয়ার সাথে দেখা করে সিটি নির্বাচনে জোটের অংশগ্রহনের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। জোটের এখন নির্বাচনে যাওয়া তাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই প্রয়োজন বলে সাধারন মানুষের ধারনা। সবকিছুকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়াই এখন জোটের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ বলে বিএনপি পন্থী বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা মনে করেন।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হলেও এখানে দলগত ভাবে প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দেয়ায় এটি এখন রাজনৈতিক দলের চরিত্র লাভ করেছে। সেজন্য এই নির্বাচনের গুরুত্ব ও বেড়ে গেছে।

প্রায় ৫২ লাখ ভোটার ৩ সিটি কর্পোরেশনে। এরমধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উত্তরের ভোটার সাড়ে ২৩লাখ, দক্ষিনে ভোটার সোয়া ১০ লাখ, ও চট্রগ্রামের ভোটার ১৮ লাখ। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ঢাকা সিটির নির্বাচন হলেও চট্রগ্রামের নির্বাচন হচ্ছে যথাসময়েই। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট, বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ২০দলীয় জোট ও এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির। ইতিমধ্যে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন চুড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। আ’লীগ ঢাকায় উত্তরে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক ও দক্ষিনে মরহুম মেয়র হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন, চট্রগ্রামে আজম নাছিরের মনোনয়ন প্রায় চুড়ান্ত। এর বাইরেও নির্বাচন করতে আগ্রহী এমপি হাজী সেলিম, রুহীন হোসেন প্রিন্স, আবদুল্লা হেল কাফী ও জুনায়েত সাকীর নাম শোনা যাচ্ছে।

অপরদিকে বিএনপি এখনো তাদের নাম স্পষ্ট না করলেও ধারনা করা হচ্ছে চট্রগ্রামে বর্তমান সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম, শাহাদৎ হোসেনের মধ্যে একজনকে তারা বেছে নিবেন। ঢাকায় নির্বাচন করতে পারেন, ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আসাদুজ্জামান রিপন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরকতউল্লা বুলু। জেল থেকে নির্বাচন করতে পারেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় জড়িয়ে জেলে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ। মান্না কে ২০দলীয় জোট হয়তো সমর্থন দিতে পারে।

গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে ২০দলীয় জোট অংশ না নেয়ায় রাজনৈতিক ভাবে তারা যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, এবারের পজিটিভ সিদ্ধান্তে তারা অনেকটাই পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে নিসন্দেহে। এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০দলীয় জোটের প্রমান করতে হবে আন্দোলনে জনগনের সম্পৃক্ততা কতটুকু ছিল। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল, গনতান্ত্রিক পক্রিয়ায় ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচনের বিকল্প কিছু ভাবলে সেটা হবে আত্মহত্যার শামীল। সকল ক্ষমতার উৎস জনগন। সেই জনগনের কাছে যেতে হলে নির্বাচনের বিকল্প নেই।

দীর্ঘদিন আন্দোলনে ২০দলীয় জোটের লাভক্ষতির হিসাব মিলবে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে। তা ছাড়াও বর্তমান আন্দোলনের যে অবস্থা তা থেকে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসার একটি উপায় হলো সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় কর্মীদের একটু নিস্তার দেবার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। হামলা-মামলায় জর্জরিত কর্মীরা সাময়িক হলেও কিছুটা স্বস্থি ফিরে পাবে। যা দলের এ দু:সময়ে অনেকটা কাজে আসবে। আশাকরি বেগম জিয়া সিটি নিবাচনে যাবার ব্যাপারে ইতিবাচক ভুমিকা রেখে গনতন্ত্রের ধারায় ফিরে আসবেন, সেটাই সকলের প্রত্যাশা।

২২/৩/১৫

 লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ, মোবাইল:০১৭১৩-৮১৯২৯৪

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here