সাহসী শারমিনের এসএসসি জয়রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি :: নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউমেন অব কারেজ-২০১৭’ পুরস্কারে ভূষিত ঝালকাঠির রাজাপুরের সেই সাহসী শারমিন আক্তার এবার এসএসসিও জয় করলো। এত নির্যাতনের মুখেও এ গ্রেডে পাস করে আরও একবার সৃষ্টি করেছে অনুকরণীয় দৃস্টান্ত।

শিক্ষা জীবন শেষ করে শারমিন হতে চায় একজন আইনজীবী। পাশে দাড়াতে চায় অসহায় নারীদের।

বৃহস্পতিবার সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষার ফালাফল প্রচার হয়। দুপুর ১২ টা বাজার আগেই নিজের স্কুল ঝালকাঠির রাজাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ফলাফল জানতে আসে সে। প্রতিক্রিয়ায় শারমিন আক্তার বলেন, আমার এসএসসি পরীক্ষাই দেয়া হত না, যদি না আমি মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতাম।

পরীক্ষার ফলাফল যা হোকনা কেন হাসি মুখে মেনে নেবো। তবে আমার ওপর নির্যাতন নেমে না আসলে অনেক ভাল ফলাফল করতাম, দৃঢ়তার সাথে বলেন শারমিন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্কুলকতৃপক্ষ ফলাফল শিট বের করতে থাকে। স্কুলের শিক্ষক ও শুভাকাঙ্খিরা শারমিনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে।

অবশেষে ফলাফল হাতে আসে। শারিনের রোল নম্বর ২৩৫২৩৭। মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়েছে। প্রধান শিক্ষক  গাজী গোলাম মোস্তফাও যেন অপেক্ষা করতে পারছিলেন না। চশমা চোখে পড়েই খুঁজতে শুরু করলেন। পরক্ষনেই ইয়েস বলে চিৎকার করে উঠলেন প্রধান শিক্ষক । জানা গেল ৪ পয়েন্ট ৩২ অর্থাৎ জিপিএ পয়েন্টে পাশ করেছে শারমিন। আর সেই সময় পাশে অপেক্ষান শারিমসহ সবাই লাফিয়ে উঠলো।

ফলাফল পাওয়ার পর শারমিন শারমিন বলেন, অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। এ ফলাফলে আমি মোটামুটি সন’ষ্ট। তবে এখন থেকে আরও অনেক বেশি বেশি পড়াশুনা কবরো। আগামীতে একজন আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। আর আইনজীবী হয়ে দেশ ও দেশের নির্যাতিত নারীদের পাশে দাড়ানোই হবে আমার একমাত্র ইচ্ছা, বলেন শারমিন।

রাজাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী গোলাম মোস্তফা জানান,  নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০১৫ সালের আগস্টের শুরুর দিকে ৩২ বছরের এক পাত্রের সাথে শারমিনের বিয়ে ঠিক করে তার মা। বাল্য বিয়েতে রাজী না হওয়ায় খুলনায় নিয়ে তাকে পাত্রের সাথে এক ঘরে আটকে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে আসেন শারমিন। পালিয়ে রাজাপুরে আসার পরও মা আর সেই যুবকের নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাকে। শেষে এক সহপাঠীর সহযোগিতায় রাজাপুর থানায় মা আর ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করে শারমিন। তখন থেকেই আমার ওর পাশে দাড়াই। আন-র্জাতিক পুরস্কারের পর শারমিন জয় করলো এসএসসি পরীক্ষাকে। এত নির্যাতন, এত ঝড়-বিপত্তির পর এ ফলাফল সত্যিই প্রশংসার, বলেন প্রধান শিক্ষক গাজী গোলাম মোস্তফা।

উল্লেখ্য, অসীম সাহসিকতা ও অদম্য ইচ্ছার স্বীকৃতি হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ ইন্টারন্যাশনাল ইউমেন অব কারেজ- ২০১৭’ পুরস্কারে ভূষিত হন শারমিন আকতার। গত ৩০ মার্চ মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের কাছ থেকে এ সম্মাননা ক্রেস্ট নেন অদম্য শারমিন আকতার।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here