ঢাকা: ১৮ দলের ডাকা অবরোধের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার সারা দেশে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে।

এরমধ্যে চারজন মারা গেছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে শতাধিক। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

চাঁদপুরে ১৮ দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে স্কুলছাত্র এবং ছাত্রদলকর্মী নিহত হয়েছে।

সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে দুই শিবিরকর্মী। আর সীতাকুণ্ডে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম নগরীতে সহিংসতায় প্রাণ গেছে এক লরি চালকের।

চাঁদপুর: সদর জোড়পুকুরপাড় এলাকায় ১৮ দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী রতন (২৫) ও স্কুলছাত্র সিয়াম (১৬)  নিহত হয়েছে।

এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন।

মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে এ  ঘটনা ঘটে।

নিহত রতন চাঁদপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র। তিনি শহরের গুনরাজদী এলাকার বাসিন্দা।

সিয়াম আলামিন একাডেমির এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে ট্রাকরোডের মজিবুর রহমানের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি জোড়পুকুর পাড় এলাকায় আসলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ছাত্রদলকর্মী রতন ও সদর হাসপাতালে নেয়া পর স্কুলছাত্র সিয়াম নিহত হয়।

আহতদের সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মোরশেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করে। তাই পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ও আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়েছে।

সাতক্ষীরা: দেবহাটা উপজেলার সখিপুর বাজারে জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের সংঘর্ষ  হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ শিবিরকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

১৮ দলের অবরোধের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শিবিরকর্মী হোসেন আলী ও আরিজুল ইসলাম দেবহাটা সখিপুর এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোল্লা জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, ভোর থেকে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গাছ কেটে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় থানা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া করে।

এ সময় অস্ত্রে সজ্জিত অবরোধকারীরা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের পাল্টা ধাওয়া করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ফাঁকা গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ শিবিরকর্মী ঘটনাস্থলে নিহত হন।

এ ঘটনায় ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের দেবহাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শিবিরের জেলা সভাপতি রুহুল আমিন জানিয়েছেন, দেবহাটায় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের অভিযান চলছে। অভিযানে দুই শিবিরকর্মী নিহত হয়েছেন।  শিবিরকর্মীদের লাশ এখনো ঘটনাস্থলে পড়ে আছে। যৌথ বাহিনির মুর্হুমুহু গুলির কারণে

কেউ ঘটনাস্থলে যেতে পারছে না বলে জানান তিনি।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফা ম রুহুল হকের নের্তৃত্বে পুলিশ বিজিবির সমন্বয়ে এ অভিযান শুরু হয়। অভিজানের অংশ হিসেবে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা প্রথমে সড়ক থেকে কাঠের গুঁড়ি ও মাটির স্তুপ সরাতে থাকে।

একপর্যায়ে বিজিবি নির্বিচারে অবরোধকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। এতে দেবহাটা কালিগঞ্জ সড়কে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।

কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলায় অবরোধকারী ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা মুখোমুখি অস্থান করছে। সকাল থেকে সংঘর্ষ চলছে।

সীতাকুণ্ড: সীতাকুণ্ডের বাড়ককুণ্ড ইউনিয়নের শুকলালহাট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন।

সোমবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম রাসেল (২৬) । তিনি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি, তার বাড়ি উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে।

স্থানীয়রা জানান,  রাসেল সোমবার রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মাঝখানে পড়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।

এ ঘটনার দায় অস্বীকার করে সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, বাড়বকুণ্ড এলাকায় পিকেটাররা সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। পিকেটাররা পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ও গুলি ছুঁড়লে পুলিশও পাল্টা প্রতিরোধ করে। এসময় একজন মারা গেছে বলে শুনেছি।

ওসি জানান, এ ঘটনার পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব পুলিশ  ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

 চট্টগ্রাম: নগরীতে সহিংস হরতালে প্রাণ গেল এক লরি চালকের।

ইপিজেড থানার সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় পিকেটারদের ছোঁড়া ককটেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মাহমুদ (২৫) নামে ওই লরি চালক নিহত হন। এ ঘটনায় ২ হেলপার আহত হন।

মঙ্গলবার যুবদল ও ছাত্রদলের ডাকা আধাবেলা হরতালের শুরুতেই এ ঘটনা ঘটে।

ইপিজেড থানার ওসি আবুল মনসুর বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালবাহী কনটেইনার লরিটি মঙ্গলবার ভোরে একটি বেসরকারি আইসিডিতে যাচ্ছিল। সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় আসলে পিকেটাররা লরিটিকে লক্ষ্য করে  কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এসময় লরিটি দ্রুত চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলে চালক মাহমুদ মারা যান। এঘটনায় তার ২ সহযোগী আহত হন।

লাশ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সোমবার রাতে রাঙ্গুনিরয়ায় পিকেটারদের হামলায় ইসমাইল নামে এক সিএনজি চালকসহ চট্টগ্রামে গত একমাসে ৬ জন নিহত হয়েছেন।

মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবি, বাসায় তল্লাশি ও মামলার প্রতিবাদে যুবদল ও ছাত্রদল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ হরতালের ডাক দেয়।

এর আগে রোববার একই দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির ডাকে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হয়।

অবরোধে নাশকতার অভিযোগে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বিএনপি নেতা মীর নাছির, গোলাম আকবর খোন্দকারসহ ছয় নেতাকর্মী। আমীর খসরু, ডা. শাহাদাত হোসেনসহ সিনিয়র নেতাদের নামে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here