নূসরাত ইমা :: গত রাত্তিরে হরিপদ মুখ্যজ্জে দেহ রাখিয়াছেন। অর্থ সম্পদ তাহার কম নাই।এই সম্পদ গড়িতেই জীবনের প্রায় পুরোটাই তিনি প্রবাসে কাটাইয়াছেন। বাপ পিতামহ যাহ সামান্য রাখিয়া গিয়াছিলেন তাহা কে তিনি পাহাড়প্রম করিয়াছেন।বছর দুই আগে বুকের ব্যামো হওয়ায় তিনি সংসারে ফিরিয়াছিলেন। বয়েস হইয়াছিল ৫০এর কিছু বেশি।
হরিপদ গত হইবার পর হইতেই তাহার স্ত্রী রমারানি এক রকম স্তব্ধ হইয়া আছেন। এত বছর জীবনে হরিপদ তাহাকে তিনটি পুত্র ও তিনটি কন্যা দিয়াছেন। পুত্র কন্যা, পুত্র বধু, জামাই ইত্যাদি নিয়া রমারানির ভরপুর সংসার। তিনি ইহাদের নিয়াই জীবন কাটাইয়াছেন। সত্যিকার অর্থে হরিপদের সাথে তাহার সংসার ওই দুই বছরের ই।
সে গত হইবার পর থেকে রমারানি না কথা বিলিয়াছে না কাঁদিয়াছে স্থানুর মত বসিয়া আছেন।তাহাকে যখন আত্মিয় মহিলারা ধরিয়া স্নান করাইয়া সাদা থান পরাইয়া দিল তখনো সে কিছু কহিল না। তাহার গায়ের সকল স্বর্নালংকার খুলিয়া নিতেছিলো তিনি নিরব রহিলেন। শুধু নাক ফুল খুলিয়া লইবার কালে অস্ফুট শব্দে বলিলেন –আহ!
খনে খনে তাহার কন্যা পুত্র বধুরা মিহি সুরে বিলাপ করিতে লাগিলেও তার চোখ দিয়া জল গড়াইলো না। তিনি স্তব্ধ হইয়া রহিলেন।
তিন দিন পার হইলে সকলে শ্রাদ্ধের খাওয়া খাইয়া চলিয়া গেলো। হরিপদ মুখ্যজ্জের পুত্ররা বাপের শ্রাদ্ধে কোন কমতি রাখিলো না। সকলে ধন্য বলিলো কেউ নিরামিসে নুন কম হইয়াছিল, দইটা বাসি হইয়াছিল বলিয়া ঢেকুর তুলিতে তুলিতে চলিয়া গেলো।
সকল কাজ সমাধা হইলে সন্ধ্যায় রমারানির পাশের কক্ষে ছেলে মেয়ে জামাই পুত্রবধুরা সম্পত্তির হিসাব করিতে বসিল।
এই প্রথম রমারানি নিজ হইতে উঠিয়া গেলেন। ধীর পায়ে তিনি ঠাকুর ঘরে গিয়া আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। ও মা গো এ তুমি কি করিলে বলিয়া এক অার্তচিৎকারে ঠাকুরের পায়ে লুটাইয়া পড়িলেন।
এত বছরের বিবাহিত জীবনেও যে স্বামি তাহার প্রায় অচেনা, যে স্বামির কাছে সোহাগ ভালোবাসার কিছুই পায় নাই। যে সারা জীবন তাহাকে রাখিয়া প্রবাসেই থাকিয়াছে। যাহার কাছ থেকে অবহেলাই বেশি পাইয়াছে যাহাকে দুই বছরও ঠিক করিয়া কাছে পায় নাই। তাহার জন্য রমারানি বিলাপ করিয়া ঠাকুরের পা সিক্ত করিয়া দিল।
অবশেষে স্বামি শোকে রমারানি কাঁদিলো…
লেখকের ইমেইল: haider_nusrat@yahoo.com