নাজমুল হক
সাংবাদিকদের কাজ সমাজের চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরা। প্রতিদিনের সমাজের ছোট ছোট ঘটনা জাতির সামনে বস্ত নিষ্ঠ করে তুলে ধরা। তাই সাংবাদিকদের সমাজের দর্পন বলা হয়। প্রতিদিন সংবাদ পিপাসু মানুষের দ্বারে নতুন নতুন খবর নিয়ে হাজির হয় সাংবাদিকরা। তাদের লেখনি বা সংবাদ উপস্থাপনের মাধ্যমে সকালে চায়ের কাপে ঝড় থেকে শুরু করে মানুষ সুফল পেতে শুরু করে। নির্যাতিত মানুষ শেষ আশ্রয়স’ল হিসাবে সাংবাদিকদের দারস’ হয়।
আর সাংবাদিকরা জাতির সামনে তুলে ধরে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সুখ, দুঃখ, হাসি কন্না, সাফল্য ব্যার্থতার কথা। কিন’ সেই সাংবাদিকরা তাদের লাঞ্চনা বঞ্চনা কার কাছে জানাবে। তারা ক্যামেরা-কলম ছেড়ে রাজপথে লড়ছে নিজেদের অসি-ত্ব টিকেয়ে রাখতে। সভা সমাবেশ করছে কিন’ কোন কুল কিনারা হচ্ছে না। আসলে কি সরকার সাংবাদিক নিধন চাচ্ছে ? সর্বশেষ সাগর-রুনি হত্যাকান্ড নিয়ে সরকার কোন দিকে যাচ্ছে? নাকি অন্যসব সাংবাদিক হত্যার মত বিভিন্ন টালবাহনা করে কাটিয়ে দিতে চাচ্ছে এমন প্রশ্ন এখন জাতির সামনে এসেছে।
সমপ্রতি বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যা বেড়ে গেছে। কিন’ জাতির বিবেক গণমাধ্যম কর্মীদের দুর্ভাগ্য যে, এসব হত্যাকান্ডের কোনোটিরই সুষ্ঠু তদন- ও ন্যায় বিচার হচ্ছে না। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে নিজ ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী। গত এক দশকে ঘটে যাওয়া ২৫ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ এখনো ঝুলে রয়েছে। কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে বছরের পর বছর সময় নিয়েও তদন- শেষ করতে পারেনি পুলিশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, মূল অপরাধীদের পাশ কাটিয়ে চার্জশিট দেওয়া, দুর্বল অভিযোগ উত্থাপন এবং চার্জশিটভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার না করার অভিযোগ আছে। এমনকি প্রভাবশালী খুনিদের পক্ষ নিয়ে নিহত সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখানোরও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠেছে নিম্ন আদালতে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নিযেও। এক দশকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৩ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আর প্রতিনিদই কোন না কোন স’ানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সংবাদ কর্মীরা। সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ সংখ্যা ২৫-এ দাঁড়ালো। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এসব বিচারের জন্য বার বার আশ্বাস দেওয়া হলেও তার হয় নি। বিরেধীদলের থাকা নেতারা সভা সেমিনারে বক্তব্য ববৃতি দিলেও তারা যখন ক্ষমতায় থাকে তারা বিচার করে নি। অবস’া এমন হয়েছে “বিচার পায় না, তাই বিচার চায় না।
সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকে বিভিন্ন মন-ব্য পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে এই হত্যা কান্ডের সাথে নাকি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর দুর্নীতির বিষয় জড়িত। মন্ত্রীর একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দুণীতির চমকপ্রদ খবর নাকি সাংবাদিক দম্পত্তির কাছে ছিল। ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হয়ে রুমির পরিচিত কয়েকজন তাদের কাছে যায়। কিন’ রাত্রে সাগর আসলে খাবার পরে তাদের ম্যানেজ করতে না পেরে ডকুমেন্ট নিয়ে তাদের হত্যা করে। তবে সত্যি যায় হোক তা বের করার দায়িত্ব সরকারের । কিন’ সরকারের বিভিন্ন মহল যে ভাবে এ বিষয়ে কথা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে নতুন কোন নাটক শুরু হয়েছে।
শীর্ষ দুই সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক দম্পতি খুল হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারি নি। সরকারের চারটি পৃথক সংস’া একর পর এক সম্পূর্ণ ব্যার্থতার পরিচয় দিয়ে যাছে। তাদের নির্বাহী কর্মকর্তারা একের পরে এক বক্তব্য গণমাধ্যমে দিয়ে যাচ্ছে। মামনীয় সরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেধে দেওয়া ৪৮ ঘন্টা কখন শেষ হবে তা দেখার জন্য জাতি অধির আগ্রহে বসে আছে।
মাননীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী মানুষের সাথে নাটক করবেন না। যে জাতি রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছে, যারা ৯ মাস অস্ত্র ধরে দেশ স্বাধীন করেছে তারা অনেক কিছু করতে পারে। সাধারণ মানুষের সাথে প্রতরণা করবেন না। তাদের নিয়ে কোন কৌশল করবেন। বাংলার শানি-প্রিয় মানুষ আপনাকে আরো সময় দিয়ে চায়, সময় নেন কিন’ কথা দিয়ে কথা রাখেন। আপনার পুলিশ পারে না এমন কোন কাজ নেই। যে পুলিশ ঘুষ নিয়ে হজম করতে পারে তারা প্রকৃত সত্যকে উৎঘাটন করতে পারে। দেশের যত বড় শক্তিধর হোক না কেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে কেউ শক্তিশালি নয়। হত্যাকারী বা ইন্ধনদাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করুন। কারণ তারা আপনার চারপাশে বীরদর্পে অবস’ান করছে। জ্জ জন খুনির থেকে আপনার দল অনেক বড়। এমন ৩/৪ জন খুনিকে ছেড়ে ফেলুন আপনার দলের, সরকারের ভাবমূর্তি বাড়বে। সাংবাদিক দম্পত্তির হত্যাকান্ড নিয়ে সমগ্র জাতি সরকারের সাফল্য ব্যর্থতার হিসাব কসবে। ৩/৪ জনকে বাচাতে সরকারকে মারবেন না। জনগণ জেগে উঠতে পারে। সাংবাদিকদের সাথে তাদের রাজপথে আর নামাবেন না। সাংবাদিকদের রাজপথ থেকে তুলে নিন। গণযোয়ার সৃষ্টি হতে পারে। মনে রাখবেন জনগণই সকল ক্ষতার উৎস।