নারী সাংবাদিক সূবর্ণা নদী

কলিট তালুকদার, পাবনা প্রতিনিধি :: পাবনার সাংবাদিক সুর্বণা নদী ওরফে শম্পা হত্যার ঘটনায় তার সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে পাবনা শহরের পৌর এলাকার আদর্শ গালর্স হাইস্কুলের সামনে ভাড়া বাসার সামনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি নারী সাংবাদিক সূবর্ণা নদীকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা।

এদিকে সুবর্না নদী কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পাবনা সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় দায়েরের পর মামলার প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহত সুবর্ণা নদী জেলার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর মেয়ে। তার জান্নাত নামের ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেন
গ্রেফতারকৃত সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেন

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, নারী সাংবাদিক সূবর্ণা নদী বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভি, দৈনিক জাগ্রতবাংলা পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি ও একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে রিক্সা যোগে বাসায় ফিরছিলেন। শহরের আদর্শ গালর্স হাইস্কুলের সামনে তার ভাড়া বাসায় ঢোকার সময় পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ১০/১২ জনের একদল সশস্ত্র দূর্বৃত্ত সূবর্ণা নদীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে পালিয়ে যায়। তার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুঁটে এসে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সুর্বণা নদী শহরের ভাড়া বাসায় বোন ও একটি সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।

নিহতের বড় বোন চম্পা খাতুন বলেন, মঙ্গলবার সকালে আমার বোনের (সূবর্ণা নদী) একটি যৌতুক মামলার সাক্ষী ছিল। আমার বোনের সাক্ষী আসামীদের বিপক্ষে যাওয়ায় সাবেক স্বামী রাজীব ও তার সহযোগিরা আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আদালত চত্বরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমরা তখন সেখান থেকে বাড়িতে চলে আসি।

নিহত নদীর পরিবার আরো জানান, পাবনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ছেলে রাজিব হোসেনের সাথে তিন-চার বছর আগে সূবর্ণার বিয়ে হয়। বিয়ের বছর খানের যেতেই তাদের ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। ছাড়াছাড়ির পরপরই সুবর্ণা নদী পাবনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাজিবের বিরুদ্ধে একটি যৌতুক মামলা করে। মামলা নং-সিআর ২৯৭/১৭ (পাবনা)। মামলায় তার সাবেক স্বামী রাজিব, শ্বশুড় আবুল হোসেনসহ তিনজনকে আসামী করা হয়। মঙ্গলবার ওই মামলার সাক্ষ্য দেয়ার নির্ধারিত দিন ছিল। আদালতের নদী তার সাক্ষ্য প্রদানও করেন। স্বামী-শ্বশুড় মামলায় ফেঁসে যাবেন এমন সঙ্কায় পরিকল্পিতভাবেই সূর্বণা নদীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করেন নিহত নদীর পরিবার। ঘনিষ্টরা বলছেন, রাজিবের সাথে বিয়ের আগে আরও দু’একটি বিয়ে করেছিলেন নদী।

নারী সাংবাদিক সূবর্ণা নদীএদিকে বুধবার সকালে সূবর্ণা নদীকে হত্যার প্রতিবাদে, দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে পাবনায় কর্মরত সাংবাদিকরা।

পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, সাধারন সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন, সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খান, সাবেক সাধারন সম্পাদক এবিএম ফজলুর রহমান, আনন্দ টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক আফজাল হোসেনসহ অনেকে। এদিকে সুবর্না নদী কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পাবনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে নিহত নদীর মা মর্জিনা বেগম।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, বুধবার দুপুরে সাংবাদিক সুবর্না নদীর মা মর্জিনা বেগমের দায়ের করা মামলায় নদীর সাবেক শশুর শিল্পপতি আবুল হোসেনসহ তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে আসামী করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here