স্টাফ রিপোর্টার :: প্রবীণ সাংবাদিক আমানুল্লঅহ কবীর আর নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত পৌনে ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ডায়াবেটিস ও লিভারের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। বছর তিনেক আগে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। আসছে ২৪ জানুয়ারি ৭২ বছর পূর্ণ করার কথা ছিল আমানুল্লাহ কবীরের।
মেয়ে শোভন কবীর জানান, অসুস্থতার কারণে দুই সপ্তাহ আগে শ্যামলীর ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল আমানুল্লাহ কবীরকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয়েছিল ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়।
১৯৪৭ সালের ২৪ জানুয়ারি জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমানুল্লাহ কবীর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষার সংবাদপত্রেই তিনি কাজ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে মাস্টার্স করা আমানুল্লাহ কবীর এক সময় ছিলেন ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনের বার্তা কক্ষের প্রধান। নিউ নেশন তখন দেশের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র।
আশির দশকে এস এম আলীর সম্পাদনায় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার প্রকাশিত হলে তার প্রথম বার্তা সম্পাদক ছিলেন আমানুল্লাহ কবীর।
১৯৯১ সালের শেষ দিকে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফে যোগ দেন তিনি। বেক্সিমকোর মালিকানায় দৈনিক ইনডিপেনডেন্টের প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন আমানুল্লাহ কবীর।
পরে বিএনপি সরকারের সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।
আমানুল্লাহ কবীরের সম্পাদনায় ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় বাংলা দৈনিক আমার দেশ। সে সময় পত্রিকাটির মালিক ছিলেন বিএনপির মোসাদ্দেক আলী ফালু।
প্রায় পাঁচ দশকের পেশা জীবনের শেষ সময়ে, শেষ পাঁচটি বছর আমানুল্লাহ কবীর ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে।
১৯৮০ আর ৯০ এর দশকে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন আমানুল্লাহ কবীর। সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো তখনও দলীয় মেরুকরণে বিভক্ত হয়নি।
অবিভক্ত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই মেয়াদে মহাসচিব এবং পরে সভাপতি ছিলেন তিনি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
কেউ কেউ বলেন, সামরিক শাসক এই এম এরশাদের সময়ে আমানুল্লাহ কবীরই ছিলেন সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠ।
‘দা স্ট্রাগলিং ডেমোক্রেসি অব বাংলাদেশ’, ‘নদী ও অন্ধকারের রূপ’, ‘মুখোশবাড়ি’, ‘নিস্তব্ধতার মাতম’, ‘জেলায় জেলায় ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য তথ্য’ এর মত বই লিখে গেছেন আমানুল্লাহ কবীর। পাশাপাশি টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতে তিনি ছিলেন নিয়মিত মুখ ।
আমানুল্লাহ কবীরের মরদেহ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নেওয়া হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানে জানাজা শেষে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে জামালপুরে তার গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই তাকে দাফন করা হবে।