চট্টগ্রাম : শাপলা চত্বরে ঘুমন্ত আলেমদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো নাস্তিকদের বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।

মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রামের নাজিরহাট বড় মাদরাসা মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলাম ফটিকছড়ি শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ওলামা ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাবুনগরী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি আবারো দেশের কিছু নাস্তিক-মুরতাদ কর্তৃক জঘন্যতম কুরুচিপূর্ণ ভাষায় মহান আল্লাহ তায়ালা, হযরত রাসূল (সা.) পবিত্র কুরআন ও ইসলামের মৌলিক আক্বিদা-বিশ্বাসের ওপর আক্রমণ করে ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করতে শুরু করেছে।

বাবুনগরী বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী, উস্কানিমূলক লেখা, বক্তব্য, মন্তব্যকারীদের প্রতিহত করার জন্য দেশের সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম ও তাওহিদী জনতাকে আবারো প্রস্তুত হতে হবে।

তিনি বলেন, শহর-নগর, মফস্বল, গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা নাস্তিকদের পক্ষাবলম্বন করে ৫ মে শাপলা চত্বরে আলিম-ওলামা ও নবীপ্রেমিক জনতার ওপর ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে এদেশের মাটিতে তাদের বিচার হতে হবে।

বাবুনগরী বলেন, নাস্তিকদের মনে রাখা উচিত শতকরা ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ।এখানে সব ধর্মের মানুষ সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করছে। আজ সেই বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে সমূলে উৎখাতের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একটি প্রভাবশালী ইসলামবিদ্বেষী চক্র।

তিনি বলেন, বস্তুতপক্ষে তারা (ইসলামবিদ্বেষী চক্র) একদিকে দেশ থেকে ইসলাম নির্মূলের নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করেছে, অন্যদিকে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করতে চায়।

হেফাজতের মহাসচিব বলেন, দীর্ঘদিন  থেকেই কতিপয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তাদের অন্ধ সমর্থক ও নির্লজ্জ সহযোগী হিসেবে প্রতিনিয়ত ইসলাম, মুসলমান ও আলিম-ওলামাদের হেয় প্রতিপন্ন করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা আলিম-ওলামা ও মাদারিসে দীনিয়্যার বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে জাতিকে বিভক্ত করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে মধ্যরাত থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দশ হাজারের অধিক সদস্য ভারি গোলাবারুদ ও প্রাণঘাতী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরীহ, জিকিররত ও ঘুমন্ত জনতার ওপর পৈশাচিক আক্রমণ শুরু করে। যে ধরনের অভিযান কেবল কোনো যুদ্ধাকবলিত দেশেই শক্রুর বিরুদ্ধে পরিচালিত হতে দেখা যায়। এই হামলায় বহুসংখ্যক আলিম-ওলামা ও তাওহীদি জনতা শাহাদাত বরণ করেন। হাজার হাজার আলিম আহত, পঙ্গু ও চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যান।

বাবুনগরী বলেন, বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও মানবাধিকারসংস্থাগুলো এসব গণহত্যার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘটনার শত শত ভিডিওচিত্র প্রচারিত হয়েছে।

হেফাজতের মহাসচিব বাবুনগরী আরো বলেন, আমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে কী ধরনের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছে তা আপনারা সকলেই জানেন। আল্লাহর অসীম রহমত ও আপনাদের দোয়ায় আবার আমি আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পেরেছি।

তিনি বলেন, এখনও আলিম-ওলামাদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ করা হচ্ছে। আবার তাদের বিরুদ্ধেই উল্টো মামলা দেওয়া হচ্ছে। আলিম-ওলামা, তালিবে ইলমদের ব্যাপক হয়রানি, মাদরাসার পরিচালকদের হুমকি-ধমকি, অনুসন্ধান ও প্রতিবেদনের নামে নাজেহাল করা হচ্ছে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলায় দায়িত্বশীল ও আলিম ওলামাদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে এবং প্রখ্যাত আলিম মুফতি ওয়াক্কাস, মুফতি হারুন ইজহার, মুফতি সাখাওয়াতসহ অগণিত আলেম-উলামা গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ সময় আগামী ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে অনুষ্ঠিতব্য ইসলামী মহাসম্মেলন সফল করার জন্য সর্বস্তরের তাওহীদি জনতার প্রতি আহ্বান জানান হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নায়েবে আমীর মাওলানা মুহাম্মদ ইদরিস, মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ, মাওলানা মুফতি হাবিবুর রহমান, মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা জুনাইদ বিন গুলজার, মাওলানা আবুল কালাম প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here