প্রধানমন্ত্রী প্রেস ক্লাবে আসলে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়স্টাফ রিপোর্টার :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের ভুলত্রুটির গঠনমূলক সমালোচনা করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের সমালোচনা লিখতেই চায় না, সাহসও পায় না। অথচ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে তারা সমালোচনা করেছে। ২০০১ সালের পরও দেখা গেছে বিএনপির অত্যাচার-নির্যাতনের কথাটা অনেকেই লিখতে চায়নি। আবার অনেকেই সাহসের সঙ্গে সংবাদ দিয়েছে। যারা দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর যারা দেয়নি- তাদের করুণা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার সরকারের সময় ছয় হাজারের মত স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচন নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। কারণ, সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করেনি, করবেও না। জনগণের এটি অধিকার।

তিনি বলেন, ‘জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। কিন্তু সরকার চায়, দেশে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক। সেটা ফিরে এসেছে। এটাই যেন কেউ আর বানচাল করতে না পারে, নষ্ট করতে না পারে।’

সরকারের সাফল্য ও অর্জন জনগণের মধ্যে তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথাবার্তা বেশি প্রচার করা হয়। কারো কাছে দয়া-দাক্ষিণ্য চাই না। দেশের জন্য যদি ভালো কিছু করে থাকি, সেটুকু ভালোভাবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করা হলে কৃতার্থ থাকি।’

তিনি বলেন, বিএনপি জোর গলায় গণতন্ত্রের কথা বলে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলো কি-না- সে বিষয়ে বক্তব্য দেয়। কিন্তু যদি প্রশ্ন করি, এদেশে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ কারা করেছে? জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন। তার হ্যাঁ/না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, অথবা সেই ‘৭৯ সালে সংসদ নির্বাচন— প্রতিটি নির্বাচনে ভোটচুরির প্রক্রিয়াটা আছে। এদেশে দুর্নীতি এবং ঋণখেলাপি কালচার, এটা তো তারাই তৈরি করেছে। অবৈধ ক্ষমতা দখল করে একটা এলিট শ্রেণী তৈরি করে তাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা— এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। যারা এদেশে কারফিউ দিয়েছে, তারা নির্বাচন সুষ্ঠু কিনা, তা নিয়ে কথা বলে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে!’

সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এদেশে কিছু লোক আছেন, যারা দলও গঠন করতে পারেন না, নির্বাচনও করতে পারেন না। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশটা তাদের রয়েছে। যদি কোনো অবৈধ পন্থায় কেউ ক্ষমতা দখল করে, ইমার্জেন্সি আসে অথবা মিলিটারি রুলার ক্ষমতা নেয় তখন তাদের গুরুত্বটা বাড়ে। তখন তারা না-কি একটা পতাকাও পান! এটাই হচ্ছে এদেশের দুর্ভাগ্য। এরা জ্ঞানী-গুণী হয়েও এ ধরনের পাপ মন নিয়ে কাজ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি, আকাশ জয় করেছি। এই স্যাটেলাইট নিয়ে কত কথা এবং আরও অনেক কথাই তারা বলেন। নিজেদের যদি মাথায় ঘিলু কিছু কম-টম থাকে তাহলে তো বলবেনই। নেভির জন্য সাবমেরিন উদ্বোধন করে আসতে পারলাম না, বক্তৃতা শুনলাম যে, সাবমেরিন নাকি ফুটা, পুরনোটা কিনেছি। ওটা নাকি পানির নিচে চলে গেছে। সাবমেরিন তো পানির নিচেই যাবে। সেজন্যই তো আনা, অথচ সেই অভিযোগ এলো!’

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বিষয়ে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুতে যেদিন স্প্যান উঠলো, সব পত্রিকা সেটাই লিখলো। সে কথা শুনেই একজন (খালেদা জিয়া) বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন, ‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হচ্ছে, কেউ ওই সেতুতে উঠবেন না। দেখবো, ভবিষ্যতে এই সেতু হওয়ার পর তারা ওঠেন কি-না। স্যাটেলাইট সম্পর্কে তো আরও কথা, ‘কী যেন একটা আগুন জ্বালাইয়ে আকাশে উড়ে গেল, আমরা কী পেলাম?’ এটা থেকে কী পাওয়া যাবে— সেই সাধারণ জ্ঞানটুকুও যাদের নেই তারা ক্ষমতায় থেকে দেশের উন্নয়নটা কীভাবে করবে, এটা দেশবাসীই বিবেচনা করবেন।”

সাংবাদিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বিএফইউজের এই প্রতিনিধি সম্মেলন উদ্বোধন করে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের কল্যাণে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সরকার সাধ্যমত সাংবাদিকদের সাহায্য করে থাকে। প্রেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে ১২ হাজারের বেশি সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নয়টা ভাষা দিয়ে অ্যাপ তৈরি করেছি। বিভিন্ন ভাষা শেখা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। সংবাদকর্মীরা যারা সরকারের পাশে রয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। দাবি-দাওয়া ছাড়াই কাজ করে দিয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে নবম ওয়েজ বোর্ড, মহার্ঘ্য ভাতা ও সাংবাদিকদের আবাসন সংকট নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী।

সাম্প্রতিককালে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্বেগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জানি না, সাংবাদিকরা কেন এই নীতিমালা নিয়ে আতঙ্কিত হচ্ছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের অসুবিধা হয়— এমন কিছু সরকার করবে না। আওয়ামী লীগ তো কখনও হয়রানি করে না। তবে একটা মানসিক ব্যাধি আছে এদেশে। অনেকে মনে করে সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন না করলে গণমাধ্যম চলবে না। এই মানসিক ব্যাধি থেকে বের হতে হবে। দেশের জন্য যদি ভালো কাজ করে থাকি, সেটাও যেন একটু ভালোভাবে প্রচার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘টকশো কিংবা মাইকের সামনে বলছেন। কথাটা বলার পর যখন বলেন স্বাধীনতা নেই, তখন প্রশ্ন ওঠে— তাহলে এত কথা বললেন কীভাবে? অনলাইন মিডিয়া এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ারও একটা নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।’

১৭ মে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি হয়ে তার বাংলাদেশে আসার পর আজ ৩৭ বছর পূর্ণ হলো। তবে দুঃখের কথা, তিনি কখনো প্রেসের কাছ থেকে খুব বেশি সহযোগিতা পাননি। সবসময় একটা বৈরিতা ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েই তাকে এগোতে হয়েছে। কিন্তু তিনি সেগুলো নিয়ে কখনও মাথা ঘামাননি। কারণ, তিনি জানেন, তিনি কী কাজ করছেন। ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে, সৎপথে থাকলে ফলাফল পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, দুটি পত্রিকা আমি কিন্তু পড়ি না, রাখিও না। গণভবনে ঢোকা নিষেধ। দরকার নেই আমার। ওই সার্কাসের গাধার মত যারা বসেই থাকে কবে দড়ি ছিড়বে আর পতাকা পাবে— তাদের দিয়ে তো আমার দেশের কল্যাণের কাজ হবে না। তাদের আমার দরকার নেই। আওয়ামী লীগ ও জনগণের মধ্যেই হারানো মা-বাবা-ভাইয়ের স্নেহ পেয়েছি বলেই আমার একটাই লক্ষ্য, দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করা।’

বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। বিএফইউজেভুক্ত ১০টি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতিদের মধ্যে বক্তব্য দেন আবু জাফর সূর্য, নাজিমুদ্দীন শ্যামল, কাজী শাহেদ, জায়েদ হোসেন, আতাউল করিম খোকন, রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, আমজাদ হোসেন মিন্টু, আবদুস সালাম, সাজেদ রহমান ও আবু তাহের। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক।

প্রতিনিধি সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারাদেশের সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর প্রতিনিধিরা যোগ দেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here