সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের হাতে মার খেলো রোগীমো: শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাট সদর হাসপাতালের গাইনী বিভাগের চিকিৎসকের হাতে মার খেলো প্রসূতি মা ও এক স্বজন। রোববার সকালে হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের ভর্তি রোগীকে এসে প্রসূতি বিশেষজ্ঞ জেষ্ঠ চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ ওই রোগী ও স্বজনের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে গায়ে হাত তোলেন। এই ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীর স্বজনরা ওই চিকিৎসকের আচরণে ক্ষুব্ধ হন এবং তারা বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. অরুণ চন্দ্র মন্ডল ঘটনাস্থলে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গাইনী বিভাগের ওই চিকিৎসক কেন রোগী ও রোগীর স্বজনের গায়ে হাত তুলেছেন তা জানাতে কারণ দর্শাতে নোটিশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন। ঘটনার পর গাইনী বিভাগের চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ হাসপাতাল ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছেন।

মারধরের শিকার রোগীরা হলেন, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চমালা গ্রামের জাহিদুল বাবুর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৮), একই উপজেলার গাজীরঘাট গ্রামের আলম শেখের স্ত্রী রোজিনা বেগম (২০), এবং রোজিনার মা (রোগীর স্বজন) নাছিমা বেগম (৪৫)।

নাছিমা বেগম অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, রোববার ভোরে বাড়ি থেকে সন্তান প্রসবের জন্য আমার মেয়েকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। তখন চিকিৎসক আমার মেয়েকে দেখে ভর্তি করে নেন। সকাল সাড়ে দশটার দিকে গাইনী বিভাগের চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ আসেন নিয়মিত রাউন্ড দিতে। তখন আমার মেয়ের প্রসব বেদনা শুরু হয়। সেসময় মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছিল। এসময় তিনি এসে আমাকে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যেতে বললে আমার বেরোতে একটু দেরি হওয়ায় ক্ষুব্দ হয়ে তিনি আমাকে দুটি চড় মারেন। আমি চড় খেয়ে ঘুরে পড়ে যাই। তিনি আমাকে চিকিৎসা না দিয়ে উল্টে আমার সন্তান সম্ভববা মেয়েকেও মাথায় চড় মারেন।

প্রসূতি মা রোজিনা বেগম বলেন, সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের হাতে মার খেলাম। এর থেকে কষ্টের আর কি আছে। আমি এই ডাক্তারের বিচার চাই।

হাসপাতালে ভর্তি অন্য প্রসূতি মা ফাতেমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, রোজিনাকে মারধর করে চিকিৎসক আমার বেডে আসেন। তখন আমাকে বলে এ তোর তো গতকাল যাওয়ার কথা, তুই যাসনি কেন। এ বলেই আমার মাথায় থাপ্পড় দেন।

গাইনি ওয়ার্ডের অন্য আরেক রোগী মাহিনুর বেগম বলেন, ডাক্তার এভাবে রোগীকে মারধর করে তা আগে কখনও শুনিনি বা দেখিনি। সকালে এ ডাক্তার মারলেন। এর আগে শনিবার রাতে আলট্রাসোনো করার সময় ডাক্তার আমার সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন। গাইনি ওয়ার্ডে একজন নারী চিকিৎসক দিলে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যেত বলে মত দেন ওই রোগী।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. অরুণ চন্দ্র মন্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় আমি হাসপাতালে আমার অফিস কক্ষে ছিলাম। খবর পেয়ে আমি প্রথমে ওয়ার্ড মাস্টারকে গাইনি ওয়ার্ডে পাঠাই। পরে মারধরের শিকার রোগীরা এসে আমার কাছে অভিযোগ করেন। মারধরের শিকার রোগী ও তার স্বজনের জবানবন্দি নিয়েছি। রোগীদের গায়ে হাত তোলার ঘটনার সত্যতা পেয়েছি।

গাইনী বিভাগের সিনিয়র কনস্যালটেন্ট চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ রোগী ও তার স্বজনের গায়ে হাত তুলে অপরাধ করেছেন। আমি এজন্য দু:খ প্রকাশ করছি। তিনি কেন রোগী ও তার স্বজনের গায়ে হাত তুলেছেন তা জানাতে কারণ দর্শাতে নোটিশ দিয়েছি। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তা লিখিতভাবে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here