সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-৫, শিক্ষিকা-৪মোনাসিফ ফরাজী সজীব, মাদারীপুর প্রতিনিধি :: মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ১৮৬ নং পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ে চলছে পাঠাদান, নেই তেমন কোন ভাল ঘর। এ বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ৫ জন, শিক্ষিকা ৪ জন। এরমধ্যে বছরের বেশীর ভাগ সময় অনুপস্থিত থাকেন বিদ্যলয়ের এক শিক্ণিকা। ছুটি না নিয়ে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকলেও একদিন এসে স্বাক্ষর করে নেয় ক্ষমতা দেখিয়ে।

ম্যানেজিং কমিটিসহ তোয়াক্কা করে না কোন শিক্ষা অফিসারকেও। জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ে পাঠদান ও উপবৃত্তি না দেওয়ায়, ১৮৬নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি না হয়ে, তার মাঠ দিয়েই অন্য বিদ্যালয় প্রতিদিন যাওয়া আসা করে ২ শতাধিক কমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা। দীর্ঘদিন যাবত এরকম হওয়ায় শিক্ষা অফিসও তেমন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

স্থানীয় সুত্রে ও এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কালকিনি উপজেলার ১৮৬ নং পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকেই ইয়াসমিন নামে এক শিক্ষিকা বছরের বেশীর ভাগ সময় ছুটি না নিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন।

একাধিকবার ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত দরখাস্ত উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে দেয়া হলেও তার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই শিক্ষিকার কারণে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা কমে গিয়ে শূণ্যের কোঠায় এসেছে।

তাছাড়া স্কুল সরকারী হওয়ার দুই বছরের মাথায় উপবৃত্তির টাকা ইয়াসমিন নামে এ শিক্ষিকা আত্মসাত করায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস উপবৃত্তি বন্ধ করে দিয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন বছরেও কোন প্রকার ছুটি না নিয়েই বিদ্যালয়ে আসেননি তিনি।

এরপরেও বছরের অনেক সময় সরকারী বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে কোন না কোন শিক্ষিকা অনুপস্থিত থাকেন। বিদ্যালয়ে গিয়ে ২ জন শিক্ষিকাকে পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি বাকি দু‘জনকে। শিক্ষিকারা ঠিক মত বিদ্যালয়ে না আসায়, জরাজীর্ণ বিদ্যালয় এবং উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী তাদের ছেলে-মেয়েদের দুরের স্কুলে পড়াশুনা করাচ্ছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির হাজিরা খাতায় ৪৫জনের নাম থাকলেও স্কুলে উপস্থিত থাকে ৫ জন।

উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা জানায় তারা পড়াশুনা করতে স্কুলে এসেও বেশীর ভাগ সময় ঐ ম্যাডামকে স্কুলে পায় না। যদিও আসেন তাহলে অল্প সময় থেকেই চলে যান। একটি ভাংগাচুড়া স্কুলে পড়াশুনা করে এবং উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয় না। সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি নতুন ভবনেরও দাবী তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এালাকাবাসী বলেন, ‘আমরা এই স্কুলে কেন পড়াশুনা করাবো বলেন ? স্কুলে বেশীর ভাগ সময় স্যারেরা থাকেন না। দুই একজন থাকে তারাও ছাত্র-ছাত্রী না আসায় অলস সময় কাটায়। তারপর এই স্কুলে কোন টাকা দেয়া হয় না। আমরা অন্য স্কুলে পড়ালে পড়াশুনা ভালো হয় এবং উপবৃত্তির টাকাও পাই।’

পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত) মিনতি মজুমদার বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী আছে। তবে জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ঘর ও উপবৃত্তি না পাওয়ায় বেশীর ভাগ ছাত্র-ছাত্রী অন্য বিদ্যালয় চলে গেছে।

তাছাড়া বিদ্যালয়ে আমরা ৪ জন শিক্ষিকার মধ্যে একজন থাকে বিভিন্ন সময় ট্রেনিং এবং আর একজন কোন প্রকার ছুটি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকেন। পরপর তিন দিন অনুপস্থিত থাকার পর আমি তাকে ফোন দিলে তিনি আমাকে জানান আমি একটি ট্রেনিংয়ে আছি। এরপর আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে তিনিও আমাকে জানান আমার কাছে তার কোন দরখাস্ত নেই বা সে কোন প্রকার ছুটি নেয় নাই।’

এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অনুপস্থিত শিক্ষিকা ইয়াসমিন নিজ বাড়িতে রয়েছেন এবং নিজের পারিবারিক কাজ করছেন। এর আগে তার ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। প্রায় দুই ঘন্টা পর তিনি মিস কল দিলে দেন। কল ব্যাক করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান ‘আমি ফোনে প্রধান শিক্ষিকার কাছে জানিয়েছি, আমি আসতে পারবো না। আমার কাছে সেই রেকর্ড আছে।’

১৮৬নং পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমান সভাপতি হাজী মো. সিদ্দিকুর রহমান (মাস্টার) বলেন, ‘আমি ছাড়াও এলাকাবাসী উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে অনেক সময় দরখাস্ত দিয়েছে ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। কিন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা তারা কেন নেয়নি আমার বোধগম্য নয়। আমি এই স্কুলে জন্য সবকিছু করতে রাজি আছি। এই স্কুলে এহেনো অবস্থা দেখলে কান্না পায়। এই স্কুল আমার একটি স্বপ্ন ছিল সেটা সরকার বাস্তবে রূপ দিয়েছে। প্রথমে এই স্কুলে ২‘শতের বেশী ছাত্র-ছাত্রী ছিল। আজ তা শুণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এখানে নেই কোন ভবন। আমার নিজের অর্থায়নে কোনরকম টিন দিয়ে মাঠে ক্লাশ নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের স্কুলের মাঠ দিয়ে শত শত ছাত্র-ছাত্রী অন্য স্কুলে যায়। এর কারণ তিনটা আমার মনে হয়, স্কুলের নেই কোন ভবন, শিক্ষিকারা ঠিক মত স্কুলে আসে না এবং স্কুলে উপবৃত্তি বন্ধ করে দেয়া। সরকারের কাছে আমার দাবি আমাদের এই স্কুলে যেন একটি নতুন ভবনসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেয়া হয়। আর যারা স্কুলের ভালো চায় না, একজন শিক্ষিকা হয়েও দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকে, তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয় হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’

কালকিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সরোয়ার হোসেনকে অফিসে গিয়ে না পেয়ে তার কাছ ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান আমাকে ছুটি ব্যাপারে জানানো হয়নি। আমাদের কাছে কোন দরখাস্ত করা হয়নি। শিক্ষিকা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও এক সপ্তাহ হলো কোন ব্যবস্থা শিক্ষিকা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি।’

মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘এই ঘটনা যদি সত্য হয় আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। তাছাড়া এর আগেও যারা দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে তাদের আমার চাকুরি থেকে বাদ দিয়েছি। আর যদি কোন কারণে বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে থাকে তাহলে আমরা সেটা চালু করার ব্যবস্থা করবো এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সকল প্রকার কাজ করবো।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here