নিজেদের ঐতিহ্য হারিয়ে ধীরে ধীরে আধুনিক বিশ্বে মিশে যাচ্ছে হিমবা জনগোষ্ঠী। অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকে কিছুটা আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিমবাহরা। তারা তাদের কঠোর নিয়মকানুন ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। তবে সম্প্রতি তাদের মধ্যেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

uyyyyyyছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাক পরে, মাথায় ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনে বাঁধা চুল আর কার্পেট করা ফ্লোরের উপর কাদা মাখানো খালি দুটি পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক হিমবা তরুণী। সামনে হাজার হাজার আধুনিক পন্যে সাজানো জাকজমকপূর্ণ শপিংমল। হাতে থাকা শপিংমলের ট্রলিতে এক বস্তা ময়দা, কয়েক প্যাকেট চিনি আর কিছু ওয়াশিং পাউডার। ছবির এই তরুণীর বয়স প্রায় ২০ বছর হবে। সুপার শপিংমলে আটা, চিনি ও ওয়াশিং পাউডার কিনতে এসেছেন। আগে এমনটা দেখা যেত না। ছাগলের ‍দুধের তৈরি খাবার খেয়ে জীবন নির্বাহ করতেন তারা। মনে হচ্ছে, যেন যুদ্ধে মেতে উঠেছে প্রাচীনকালের ঐতিহ্য আর আধুনিক বিশ্বায়ন নামের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। আর এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বায়নের কাছে হার মানছে হিমবা জনগোষ্ঠী। তারা বাধ্য হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে।

কিছুদিন আগেও হিমবা জনগোষ্ঠী নিজেদের ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলে। আজ তারা পাশের শহরে যাচ্ছেন পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্যে। আগে যারা ছাগলের দুধের তৈরি খাবার খেয়ে দিন কাটাতেন তারা আজ বাজারের অত্যাধুনিক মেশিনে তৈরি ময়দার রুটি খাচ্ছেন। যারা মাটিকে পবিত্র মনে করে শরীর ও কাপড় চোপড় পরিষ্কার করতেন মাটি দিয়ে, তারা আজ ওয়াশিং পাউডার কিনছেন কাপড় পরিষ্কারের জন্য। আধুনিক পণ্যে সাজানো জাকজমকপূর্ণ শপিংমলে এক হিমবাহ তরুণী। হাতের পণ্যগুলো ছুঁয়ে তিনি বিমোহিত।

সম্প্রতি এই চিত্র দেখা গেছে, নামিবিয়ার ওপুয়ো নামক স্থানের এক সুপার মার্কেটে। এক হিমবাহ তরুণী ঐতিহ্যবাহী হিমবা পোশাক পরে শপিং করতে গেছেন। এমন সময় সু্ইডিস প্রামাণ্যচিত্রকার বিজর্ন পেরসন সেই তরুণীর ছবি তোলেন। ছবিগুলোতে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে আধুনিকতার কাছে পুরনো ঐতিহ্য পরাজিত হচ্ছে। এতদিন তাদের ঐতিহ্যবাহী সাজে দেখা যেত। কিন্তু সম্প্রতি তাদের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুরনো ঐতিহ্য ভুলে নতুনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে হিমবা জনগোষ্ঠী।

পোশাক ও নিজেদের ঐতিহ্যের ব্যাপারে খুবই কঠোর ছিলেন হিমবারা। সব সময় নিজেদের রীতি-নীতিতেই বিশ্বাসী ছিলেন। কে কি মনে করলো তাতে কান দিতেন না। তবে সম্প্রতি তাদের ভেতর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, হিমবাহরা এখনও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা। এমনও অনেক আদিবাসী দেখা গেছে তারা তাদের আগের ঐতিহ্য পুরোপুরি ভুলে গেছে। কিন্তু হিমবারা আজও এগুলো ধরে রেখেছেন। তবে হিমবা তরুণীর এই ছবি একদিকে যেমন পুরাতনের ধ্বংসের ইঙ্গিত দেয় আবার নতুনের আগমন বার্তাও প্রদান করে।

এঙ্গোলার কুনেন নদীর কোলঘেঁষে ও নামিবিয়ায় কিছু অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার হিমবা জনগোষ্ঠী বসবাস করতেন। তারা পুরোপুরি যাযাবর নয়। কারণ তারা কোনও না কোনও অঞ্চলে কুটির গেঁড়ে বসবাস করেন। একমাত্র সম্বল হিসেবে ভেড়া ও ছাগল পালন করেন। ছাগল ও ভেড়া থেকে যা আসে তা দিয়েই জীবনধারণ করেন। হিমবাদের সমাজ পুরোপুরি নারী প্রধান না হলেও বেশির ভাগ কাজ কর্ম করেন নারীরাই। কারণ নদী থেকে পানি নিয়ে আনা থেকে শুরু করে পরিবারের সব কাজই তাদেরকে করতে হয়। আর পুরুষরা প্রায় সময় ছাগল ও ভেড়া চরাতে বাইরে থাকেন। এঙ্গোলার কুনেন নদীর কোলঘেঁষে ও নামিবিয়ায় কিছু অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার হিমবা জনগোষ্ঠী বসবাস করে।

১৯৮০ সালে আফ্রিকার নামিবিয়াসহ অধিকাংশ অঞ্চলে খরা হয়। সেই খরাতে হিমবাদের সমাজ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। হিমবা জনগোষ্ঠিার প্রায় ৯০ ভাগ লোকজন তাদের পেশা পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যান। আর মাত্র ১০ ভাগ হিমবা জনগোষ্ঠী সেখানে বসবাস করেন। সেই ১০ ভাগ মানুষও আজ হারানোর পথে। কারণ নামিবিয়া সরকার কুনান নদীতে বাঁধ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর যদি বাঁধ দেওয়া হয় তাহলে তলিয়ে যাবে হিমবাদের অঞ্চল। তাই আসন্ন বিপদ দেখে ২০১২ সালে হিমবাগোষ্ঠি সরকারের কাছে অনুরোধ করে যেন কুনান নদীতে বাঁধ দিয়ে তাদের জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে না দেওয়া হয়।

হিমবাদের পুরোপুরি যাযাবর বলা যায় না। কারণ তারা নির্দিষ্ট স্থানে কুটির বানিয়ে বসবাস করেন। তবে মাঝে মাঝে আবহাওয়া প্র্রতিকূলে গেলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যান। অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকে হিমবারা একটু আলাদা। তারা তাদের কঠোর নিয়মকানুন ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। তবে সম্প্রতি তাদের মধ্যেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here