ঝর্না চৌধুরী
পৃথিবীর নারী-পুরুষ সবার ই জানা দরকার….
বিজ্ঞানের এই চরম সাফল্যের যুগে ও মানুষ থমকে দাঁড়িয়েছে যে রোগটির নাম শুনে তা হল ‘এইডস’।রোগটির নাম ‘অ্যাকোয়ার্ড ইম্যুন ডিফিসিয়েন্সি সিনড্রোম’ সংক্ষেপে যার রূপ ‘এইডস’ আর আমাদের কাছে রাতের ঘুম ও দিনের কর্মস্পৃহা–হরণকারীর নাম‘এইডস’।
যখন ই জানা যায় যে, এই রোগ দেহে বাসা বেঁধেছে তখন ই কাল যারা ছিল আপন চিরচেনা-তারা আজ হয়ে যায় পর অচেনা।সবার মধ্যে থেকে ও বড় একা! ঠিক অসহায় সেই নাবিকের মতো-সমুদ্রের মধ্যখানে,চারিদিকে শুধু পানি আর পানি কিন্তু পান করার মতো এক ফোঁটা পানি ও নেই!!
তেমনি এই রোগের রোগী ও নিজের দু’ চোখ ভরে চারদিকে ঘটে চলা আনন্দ-উৎসব,বিজ্ঞানের জয়-যাত্রা,প্রযুক্তি-প্রগতি,চি
কি ভয়ানক রোগ-যা একজন মানুষকে পলকে ভালোবাসার স্বর্গ থেকে ঘৃণার
নরকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।সত্যিকারের পবিত্রতা যদি কোথাও থাকে -তা আছে মানব মন্দিরে।
ইহা বড় ই সুসজ্জিত,বড় ই পবিত্র। সেখানকার অধীশ্বর বড় ই কড়া ,বড় ই ক্রোধ –পরায়ণ।সামান্যতম অনিয়ম,সামান্যতম তার নির্দেশের অবজ্ঞা তাকে ক্ষিপ্ত করে ফেলে।
পৃথিবীতে সৃষ্টির ধারাকে সুন্দর,সুসংহত আর ছেদহীন করার মানসে সৃষ্টির সেরা –উপহার নারী ও পুরুষ। এই নারী –পুরুষের দৈহিক মিলনে আসে নতুন প্রজন্ম, এই-সৃষ্টির ধারায় স্থান নেই ব্যাভিচারের। যদি কেউ সে নারী বা পুরুষ যেই হোক না কেন –এই ব্যাভিচারের হাত থেকে নিজেকে নিভৃত করতে না পারে, তবে এই ব্যাভিচারের হাত ধরেই সহজে ‘ এইডস’প্রবেশ করতে পারে মানব দেহে । ধূর্ত- সুযোগ সন্ধানী এইডস শুধু ব্যাভিচারকে সঙ্গী করেই তৃপ্ত হয় না তাই সে খুঁজে –বেড়ায় সাঙ্গ-পাঙ্গ কে-পেয়ে ও যায় সমকামিতা,শিরায় ড্রাগ সঞ্চালন আর দেহে রক্ত সংযোজনকে-এরা পথ দেখিয়ে এইডস কে নিয়ে যায় দেহাভ্যন্তরে।
উদ্দেশ্য দেহকে ধ্বংস করা-আসলে ‘এইডস’ রক্তবাহী রোগ। তাই দেহে-রক্তের আদান-প্রদানের যে কোন অসতর্ক মুহূর্তে সে দেহে প্রবেশ করতে পারে। এরপর আছে জন্মদাতা ও জন্মদাত্রীর ভূমিকা। এদের দু’জনের যে কোন একজন ‘এইডস’ এ আক্রান্ত হলে অনিবার্যভাবে অপরজন এইডসকে নিজ দেহে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
এইডস আক্রান্ত জন্মদাত্রী যাকে এই সুন্দর ধরণীতে নিয়ে আসে সে ও অজান্তে সঙ্গে করে নিয়ে আসে ‘এইডস’ অভিশাপকে।এভাবেই এইডস বিশ্বব্যাপী তার– সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলেছে প্রতি মুহূর্তে।
সুসজ্জিত, সুনিয়ন্ত্রিত মানব দেহকে সুরক্ষিত রাখার জন্য রক্তের মধ্যে থাকে-লিমফো সাইট নামের এক বিশেষ ধরণের শ্বেত কণিকা। এরা দেহের ভেতরে গড়ে-
তোলে রোগ প্রতিরোধের শক্তি। দেহকে রক্ষা করে বিভিন্ন সংক্রমণের আক্রমণ–থেকে আর যখন মরণাস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে ‘এইচআইভি’ ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশ করে তখন ই রোগ প্রতিরোধকারী শক্তিগুলোকে পরাস্ত করার জন্য শুরু করে দেয় যুদ্ধ।অচিরেই ‘এইডস’ তার এইচআইভি মানে হিউম্যান ইম্যুন ডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস দ্বারা রোগ প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে।
মানব দেহের এই চরম অসহায় অবস্থায় না না রোগ বাসা বাঁধতে থাকে, শুরু হয়ে যায় দেহের মধ্যে তাণ্ডবলীলা !যদি ভাবা হয় যে,সর্বনাশা এইডস আমাদের সভ্যতার নবতর শত্রু তাহলে ভুল ভাবা হবে।আসলে সবকিছুর মতো এইডস ও আমাদের সঙ্গী আমাদের সভ্যতা বিকাশের ঊষালগ্ন থেকেই কিন্তু অসাবধানতাবশত আমরা তার উপস্থিতি টের পাইনি-যদি ও মতানৈক্য আছে যে, এর উপস্থিতি-প্রথম লক্ষ্য করা হয়েছিল দক্ষিন আফ্রিকায় বা আমেরিকা যুক্তরাষট্রের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে-তাই দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, ‘এইডস’ উন্নত দেশগুলোর ই –অবদান।
যে তড়িৎ গতিতে এইডস বিশ্বকে দখল করছে – মানুষকে নিজের বিষবলয়ের অন্তর্ভুক্ত করছে তাতে তো বলা যায় ‘এইডস যু্গ’শুরু হতে আর বাকি নেই।
সভ্যতা বিনাশী এই এইডস দানবকে কিভাবে প্রতিহত করা যায়?!? এতদিন এইডসের কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি ,আমরা এইডসের কাছে –পুরোপুরি নিরস্ত্র ছিলাম-সে আসতো আর আমরা অসহায়ের মতো তার কাছে আত্মসমর্থন করতাম কিন্তু বিশ্বের বিজ্ঞানীগণ,প্রযুক্তিবিদগণ,চিকি
হই।
১/ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সুস্থ জীবন-যাপন করুন, আপনার মনে –ন্যায়বোধ জাগ্রত হলেই এই রোগ আপনার ধারে কাছে আসতে পারবে না।
২/ বিবাহপূর্ব যৌনতা পরিহার করে শারীরিক প্রয়োজনে ধর্ম বা আইন অনুযায়ী একজনকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন এবং সততার মাধ্যমে পস্পরের প্রতি আকৃষ্ট ও বিশ্বস্ত থাকুন তাহলে এই রোগ আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
৩/ যৌন মিলন কালে ‘কনডম’ ব্যবহার করুন তাহলে এই রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে আর আপনি ও নিরাপদ থাকবেন।
৪/ পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে কখনো রক্ত কিনলে তা দেহে প্রবেশ করানোর আগে অবশ্যই ভালো ভাবে পরীক্ষা করিয়ে নিন।
৫/ অন্যজনের ব্যবহৃত সুচ বা ক্ষুর কখনো ব্যবহার করবেন না। কারণ মাদকাসক্তদের ব্যবহৃত সূচ ব্যবহার করলে আপনার অজ্ঞাতেই এইচআইভি ভাইরাস আপনার দেহে প্রবেশ করতে পারে।
৬/ বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের সাথে যৌন মিলনের আগে অবশ্যই তার এইচআইভি স্ক্রিনিং টেস্ট করিয়ে নিন। তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন।
৭/ পরিশেষে শুধু বলবো-আপনারা একই সাথে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত না হয়ে বিশ্বস্ততার সাথে একজনকে ভালোবেসে মিলিত হন তাহলে আপনার এই পবিত্র ভালোবাসা ই আপনাকে এই ভয়াবহ রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে।