ঢাকা: শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জয়ের পথে থাকা একটি ম্যাচ প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে টাইগাররা। সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৩ রানের অবমাননাকর হার বরণ করেছে মুশফিক বাহিনী।

জয়ের জন্য ৪৩ ওভারে ১৮১ রান করার লক্ষ্যে খেলতে নেমে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ২২ বল হাতে রেখেই মাত্র ১৬৭ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুতে ৪৩ ওভারে ১৮১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। লাসিথ মালিঙ্গার করা ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই স্লিপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজ ঘরে ফেরেন আনামুল হক বিজয়। নিজের তো বটেই দলীয় সংগ্রহও তখন ছিল শূন্য।

এরপর জুটি বেঁধে ওপেনার শামসুর রহমান শুভ এবং মুমিনুল হক বেশ আস্থার সঙ্গে খেলে সমর্থকদের আশান্বিত করেন। ২য় উইকেটে ৭৯ রানের মূল্যবান জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হয় এ জুটি। ৫৩ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলা মুমিনুল প্রতিপক্ষের ব্যাটিং নায়ক থিসারা পেরেরার শিকার হন। এরপর দলীয় ১১৪ রানে ইনিংস সর্বোচ্চ ৬২ রান করে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন শামসুর রহমান শুভ। আউট হওয়ার আগে সমর্থকদের যথেষ্ঠ আনন্দ দেন তিনি মাত্র ৪৯ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো এ ঝড়ো ইনিংস খেলে।

ম্যাচ যখন অনেক সহজ অবস্থাতেই ছিল তখনই আত্মাহুতি দেয়ার প্রতিযোগিতায় শামিল হন প্রথমে নাসির হোসেন ও পরে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ফলে ১৩৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা। এরপর ফিরে যান সোহাগ গাজীও। তিনি ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন অঙ্কান অধিনায়ক ম্যাথুজের বলে। এর আগে নাসির হোসেন ২৯ বলে ৮ রান করে স্পিনার সচিত্র সেনানায়েকের বলে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এর মাত্র ১ বল পরেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শর্ট লেগে প্রিয়ঞ্জনকে সহজ ক্যাচ তুলে দেন একই বোলারের বলে।

তারও আগেই অবশ্য পর পর রান আউটে দোদুল্যমান হয়ে পড়ে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন। চমৎকার ৬২ রানের ইনিংস খেলা শামসুর রহমানের পর এবার রান আউট হন দলের অন্যতম ভরসা সাকিব আল হাসান। সাকিবের সংগ্রহ ছিল ৩ রান। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ক্রিজে টিকে থাকলেও জয় থেকে ১৯ রান দুরত্বে থাকা অবস্থায় ম্যাথুজের তৃতীয় শিকারে পরিনত হয়ে সাজঘরে ফেরেন। শেষ ব্যাটসম্যানরা ম্যাচের তৃতীয় রা আউটের খাড়ায় পরে ইনিংস সমাপ্ত করেন।

ম্যাথুজ ৭.২ ওভার বোলিং করে ১ মেডেনসহ ২১ রানে ৩ উইকেট নেন। সচিত্র সেনানায়েকে ৩৩ রানে ২ এবং ম্যাচের নায়ক থিসারা পেরেরা ৩৫ রানে মুমিনুলের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নেন।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে থিসারা পেরেরার অভাবনীয় ব্যাটিং নৈপূণ্য এবং বাংলাদেশী ফিল্ডারদের অপরিসীম বদান্যতায় শেষ পর্যন্ত ১৮০ রান করে অল আউট হয় শ্রীলঙ্কা। ফলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৩ ওভারে ১৮১ রান।

খেলার এক পর্যায়ে মাত্র ৬৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা অবস্থায় ছিল লঙ্কানরা। এ অবস্থা থেকে তাদেরকে টেনে তোলেন অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা ও সচিত্র সেনানায়েকে। পাল্টা আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে তারা নবম উইকেট যোগ করেন মূল্যবান ৮২ রান। এর মধ্যে অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা তিনবার অবধারিত জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত ৫৭ বলে ৪ বাউন্ডারি এবং ৬ ছক্কায় ৮০ রানের অসাধারণ দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। দলকেও পৌঁছে দেন চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহে।এটা তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও বটে।

এর আগে স্বাগতিকদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেরার সুযোগ করে দিয়ে সাকিব আল হাসান প্রবল প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়া নবম উইকেট জুটিকে বিচ্ছিন্ন করেন। ম্যাচের ৩৬তম ওভারে সচিত্র সেনানায়েকে কে ৩০ রানে বোল্ড করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। শ্রীলঙ্কার দলীয় সংগ্রহ তখন ছিল ১৪৯ রান ৯ উইকেটে।

এর আগে বোলারদের শিকার উৎসবে পেসার রুবেল হোসেন, আল আমিন হোসেন ও স্পিনার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যোগ দেন আরাফাত সানি ।খেলার ১৭তম ওভারে লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে বোল্ড করার পর ১৯তম ওভারে নুয়ান কুলাসেকেরার স্টাম্পও উপড়ে ফেলেন এ বাঁহাতি স্পিনার।  শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ছিল তখন ৭ উইকেটে ৬৪ রান। তারও আগে ম্যাথুজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরে যান দিনেশ চান্দিমাল। তার সংগ্রহ ছিল ১৩ রান।

খেলার ৪র্থ ওভারেই প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। পেসার রুবেল হোসেন চতুর্থ ওভারের শেষ বলে লঙ্কান মারমুখী ওপেনার তিলকারত্নে দিলশানকে ফিরিয়ে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন। দলীয় ২৮ রানের মাথায় পেরেরাকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান দেশের অন্যতম সেরা এ পেসার। এরপর দলীয় ৪৩ রানের মাথায় সাঙ্গাকারাকে ফেরান পেসার আল আমিন।

খেলার একাদশ ওভারের প্রথম বলেই আল আমিন নির্ভরযোগ্য সাঙ্গাকারাকে ফিরিয়ে দিয়ে স্বাগতিকদের উল্লসিত করে ফেললেন। তাকে ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়ে সাঙ্গাকারা মিড অনে আরাফাত সানির তালুবন্দী হন। দলীয় সংগ্রহ তখন ছিল ৪৩ রান, ৩ উইকেটের বিনিময়ে। এরপর সাকিব প্রিয়ঞ্জনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান।

এর আগে সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যেকার ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ভেজা আউট ফিল্ডের কারণে বিকাল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয়। দুই দলের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি এখন ৪৩ ওভারে নির্ধারিত হয়। খেলা ৪৩ ওভারে সীমিত হওয়ায় ম্যাচের পাওয়ার প্লে-তেও কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। দুই দলই প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৯ ওভার করে পাবে। পরের পাওয়ার প্লে হবে ৪ ওভারের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ৪০ ওভার ১৮০ (থিসারা পেরেরা অপরাজিত ৮০, সেনানায়েকে ৩০, কুশল পেরেরা ২০, সাকিব ২/২৯, সানি ২/৩১, রুবেল ২/৩৭, সোহাগ ১/২২, আল আমিন ১/৩৪)

বাংলাদেশ ৩৯.২ ওভার ১৬৭ (শামসুর ৬২, মুমিনুল ৪৪, মুশফিক ২৭, নাসির ৮, ম্যাথুজ ৩/২১, সেনানায়েকে ২/৩৩, পেরেরা ১/৩৫, মালিঙ্গা ১/৩৭)

ফল: শ্রীলঙ্কা ১৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: থিসারা পেরেরা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here