ঢাকা: দেশের বিদ্যামান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে শিগগিরই যৌথবাহিনী নামানো হতে পারে। এই বাহিনী গঠিত হবে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সমন্বয়ে। যৌথবাহিনীতে কাজ না হলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও নামানো হতে পারে- এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে যৌথবাহিনী নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তবে বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা কেউই আলোচনার ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি।

সূত্রে আরো জানা যায়, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন মাঠে থাকছে না- এ নিয়েও আলোচনা হয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো মাঠে থাকলে দৃশ্যপট একরকম হয় আর মাঠে না থাকলে আরেক রকম হয় (অর্থাৎ সহিংসতার মাত্রা বাড়ে)। নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো যায় কি না সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা।

রোববারের হরতালে নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে ৮ শিবিরকর্মী নিহত, দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক কেটে অবরোধ এবং রাস্তায় গাছ কেটে ফেলে রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের নাশকতা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

এতে উপস্থিত ছিলেন- ভূমি ও ত্রাণ মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জাতীয় পার্টি নেতা ও পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পাট ও বস্ত্র এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রমুখ।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের অন্যরা কেউ-ই গণমাধ্যমের সামনে কথা না বললেও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো সক্রিয় ও সুন্দর করার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে অইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা যা বাস্তবায়ন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, বিজয় দিবসের পর ১৭ ডিসেম্বর থেকে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশব্যাপী নাশকতা সৃষ্টিকারী বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাতের হুমকি দিয়েছেন নেতারা। অপর দিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটও আন্দোলন আরো জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে।

এর আগে শনিবার বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে উদ্দেশ করে বলেন, অনেক ধৈর্য ধরেছি। আর সহ্য করা হবে না।

সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও ঘোষণা দিয়েছেন, সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচনের পরিবশে তৈরি করতে যে কোনো সময় তাদের ডাকা হতে পারে।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি এবং একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল ও সহিংস করে তুলেছে। এর মধ্যে জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তুলছে বিরোধী দলতো বটেই রাজনীতি বিশ্লেষক এবং পর্যবেক্ষকরাও। এ নির্বাচনকে হাস্যকর বলে অভিহিত করা হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে সবকিছু ঠিকঠাক রেখে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হলে সেনাবাহিনীসহ যৌথবাহিনী নামানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়টি সরকারও সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here