স্টাফ রিপোর্টার :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি আমাদের ছাত্রদের বলবো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের ভাংচুর করা চলবে না। ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করবে এটা আমি বরদাশত করবো না। কারণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসন থাকলেও সেগুলো চালাতে সকল খরচ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। যদি কেউ ভাংচুর করে, সেখানে আমার কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রতি নির্দেশ রয়েছে- সে দলের হোক, আর যেই হোক কাউকে ছাড়া হবে না, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯ তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগের সহ সভাপতি এবং নতুন কমিটি নির্বাচনে গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরিফুর রহমান লিমন, সম্মেলন আয়োজক উপকমিটির আহবায়ক ছাত্রলীগ সহসভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন, অভ্যর্থনা উপকমিটির আহবায়ক ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
সংঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এ সময় দলীয় পতাকা ওড়ান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর এদিনের ভাষণে সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবন ভাংচুরের সমালোচনা করে রাজনীতির নামে শিক্ষকদের দলাদলী পরিহার এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করার জন্যও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে থাকার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে রাস্তায় চলাচলের জন্য ট্রাফিক আইন মেনে চলা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সর্বত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্যও সকলকে পরামর্শ দেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাবির ভিসির বাংলোতে হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করা হলো- আমরাওতো আন্দোলন করেছি, সেই ’৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলে চলে এসেছি। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়েছি আন্দোলনে ছিলাম। ভিসির বাড়ি ভিতরে ঢুকে তার রুমে লুটপাট করা, রুম ভাঙ্গা, তাঁকে ধাক্কা দেওয়া এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা কোন ইতিহাসে ঘটে নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তদন্ত চলছে, ইতোমধ্যে অনেকে ধরা পড়েছে এবং আরো ধরা পড়বে। এরসঙ্গে যারাই জড়িত আর ঐ লুটপাট যারাই করেছে তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমি নির্দেশ দিয়েছি।
কাউন্সিলে সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ২৮ বছর করে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শনিবার সেন্ট্রাল কমিটি বসবে। আমি চাই, সমঝোতার মাধ্যমে তোমাদের নেতৃত্ব নিয়ে আস।
তিনি বলেন, ‘তোমরা নিজেরা বসে সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নিয়ে আস। মনে রেখ, সেক্রিফাইস করাটা শিখতে হবে। সেক্রিফাইস না করলে অর্জন করা যায় না। অর্জন তখনই করতে পারবা, যখন কিছু দিতে পারবা। কাজেই তোমরা সমঝোতার মাধ্যমে কর সেটাই আমরা চাই।’
নেতৃত্ব নির্বাচনে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমরা এমন নেতৃত্ব খুঁজবে, যারা তোমাদের সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে আগামী দিনে যেন তোমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পার।’
প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভো করেন। তিনি ‘স্মৃতির পাতায় ছাত্রলীগ ২০১৫-২০১৮’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন।