আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম চর এলাকা হওয়ায় এসব এলাকায় যেতে অনীহা প্রকাশ করেন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা। চরাঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা মাদ্রাসা গড়ে না ওঠায় সেখানকার কয়েকটি গ্রামের তিন হাজারের অধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে সরকারের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম এ এলাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে।

সরে জমিনে লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তালপট্টি, পশ্চিম কালমাটি, হরিণচড়া, বাগডোরার চর ও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চর গোবরধন, চর চন্ডিমারী, নরশিংহ চর ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সরকারি তো নয়ই, কোনো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে সেখানে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রতিষ্ঠান। ফলে গ্রামগুলোর প্রায় তিন হাজারের অধিক শিশু প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কিংবা মাদ্রাসার অভাবে শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। আবার অনেক কোমলমতি শিশু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হয়ে মূল ভূখন্ডে এসে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাস্তবায়িত মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের অভাবে কোনো ধর্মীয় শিক্ষাও লাভ করতে পারছে না চরে বসবাসরত শিশুরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব এলাকায় যেতে হলে তিস্তানদী পাড়ি দিয়ে মহিষখোচা ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের মূল ভূখন্ড হতে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার এলাকা হেঁটে যেতে হয় বলেই সেখানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি।

তিস্তার চরাঞ্চলের শিশু আনোয়ারুল হক (৮), খায়রুজ্জামান (১১), ওসমান গণি (৯), রুবিনা (৬), তানজিনা আক্তার (৯) জানায়, তাদের বাড়ি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ১০ থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। এসব বিদ্যালয়ে শুকনা মৌসুমে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসা করতে তাদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। সে কারণে তাদের বাবা-মা কোনো বিদ্যালয়ে ভর্তি করায়নি। মূল ভূখন্ডের অন্য শিশুদের মত তারা লেখাপড়া করতে না পারায় এ নিয়ে তাদের আক্ষেপের শেষ নেই।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর মসজিদ ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক ও সহজ কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম চরাঞ্চলে চালু হলে সেখানকার কোমলমতি শিশুরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারত। এসব কার্যক্রম না থাকায় তাদের শিশুরা সাধারণ শিক্ষা তো দূরের কথা, ধর্মীয় শিক্ষাও লাভ করতে পারছে না। এতে এসব এলাকার শত শত শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। ফলে সেখানে মেয়েরা বাল্যবিয়ের মত সামাজিক ব্যাধি এবং ছেলে শিশুদের ভবিষ্যত্ জীবন থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন লালমনিরহাটের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান আলী বলেন, বিগত বছরগুলোতে এসব এলাকায় কয়েকটি কেন্দ্র থাকলেও শিক্ষার্থীর অভাবে সেসব কেন্দ্র মূল ভূখন্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, স্কুল নেই, সে কথা বলা যাবে না। প্রচন্ড নদী ভাঙ্গনের কারণে স্কুল গুলো স্থানান্তর করা হয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি চরের সব শিশুকে কি ভাবে স্কুল মুখী করা যায়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here