নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এবার কোরবানীর পশুর হাট বসেছে ১২টি। তবে বেশীরভাগ হাটের ইজারাদার স্থানীয় মহাজোট এমপি নাসিম ওসমান ও তার ছোট ভাই গডফাদার শামীম ওসমানের অনুগত লোকজন। অনুগতদের কেউ কেউ নিজের নামে, আবার কেউ কেউ কম পরিচিত লোকের নামে হাটের ইজারা নিয়েছেন। এমপি নাসিম ওসমানদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, জেলা জাপা (এ) সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাহের, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মের্সাস ঝুমুর এন্টার প্রাইজের (মালিক-আবু জাহের, পিতা-মৃত আবদুস সালাম সরকার, ১৭/২, এস, এম মালেহ রোড, টানবাজার, নারায়ণগঞ্জ) নামের শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে বন্দর উপজেলার সবচেয়ে বৃহৎ কোরবানীর পশুর হাট ১নং খেয়াঘাট সংলগ্ন হাটটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিয়ে ইজারা নিয়েছেন। আবু জাহের কয়েকমাস আগে অনুষ্ঠিত বন্দর ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন।

শহরের কেন্দ্রস্থল চাষাঢ়ায় জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর বিপরীতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের পাশে প্রস্তাবিত নারায়ণগঞ্জ-কমলাপুর সড়কের হাটটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় শামীম ওসমানের ক্যাডার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নাট্য সম্পাদক মামুন মিয়া নিয়েছেন এসএমএস লিটন (পিতা-মৃত- বাচ্চু মিয়া, ঠিকানা-১১২, উত্তর চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ) এর নামে। চাষাঢ়া রেলস্টেশনের পাশে প্রস্তাবিত নারায়ণগঞ্জ-কমলাপুর সড়কের অংশটুকু সিটি কর্পোরেশন হাটের জন্য ইজারা দিলেও ইজারাদার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পেশি শক্তির জোরে তার ক্যাডার বাহিনী দ্বারা জেলা পরিষদের পাশের ডাকবাংলোর সামনের খালি জায়গায় (সরকারী তোলারাম কলেজে প্রবেশের রাস্তার পাশে) শুক্রবার সকাল থেকে হাট বসিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহায়তায় সবকটি হাট ইজারা পেয়েছেন প্রতাবশালী দ’ভাই নাসিম ওসমান-শামীমের অনুগতরা। গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগেই কোরবানীর হাটের ইজারার যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন  করে দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, অনেকেই দরপত্র সিডিউল কিনতে পারেননি। ক্যাডাররা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেদের লোক ছাড়া অন্য কাউকে সিডিউল কিনতে ও জমা দিতে দেয়নি। নির্বাচনী ডামাডোলের কারণে বিষয়টি মিডিয়ার নজরেও আসেনি।

শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে নবীগঞ্জ হাটটি ইজারা নিয়েছে হাবিবুর রহমান(পিতা-মৃত আসাফ আলী তারা মিয়া, ১১৫ ইসলামবাগ বন্দর) এর নামে। নেপথ্যে রয়েছে ২৪নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর আফজাল হোসেন। আফজাল এলাকায় স্থানীয় এমপি নাসিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত এবং জাপা (এ) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

একইভাবে বন্দরের চৌরাপাড়া হাটের ইজারাদার শাহ্‌ জালাল মেম্বার (পিতা-মৃত আলমাস মিয়া, চৌরাপাড়া লক্ষণখোলা বন্দর) স্থানীয় আ’লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ করেছে। বন্দরের কুড়িপাড়া হাটের ইজারাদার আব্দুল আলী ভূঁইয়া (পিতা-মৃত হাফিজউদ্দিন ভূঁইয়া, গোকুলদাশেরবাগ, মদনপুর, বন্দর) ধামগড় ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক। এলাকায় নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট লোক হিসেবে পরিচিত। বন্দরের সোনাকান্দা হাটের ইজারাদার আশাব উদ্দিন আশু (পিতা-মৃত নুর উদ্দিন মিয়া, ৪৬১, সোনাকান্দা বন্দর, শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

শহরের বড় হাট খানপুর বরফকল মাঠটির ইজারাদার জসিমউদ্দিন (পিতা-মৃত নূর উদ্দিন, ৮২/২, খানুপুর সরদারপাড়া, এমপি নাসিম ও শামীম দু’ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। জসিমের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন। জসিম বিগত সংসদ নির্বাচনে নাসিম ওসমানের পক্ষে এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ করেছেন।

শহরের অন্যতম বড় হাট, নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে তিন নম্বর মাছ ঘাট থেকে চারাগোপ পর্যন্ত এর ইজারাদার শাহীন আহম্মেদ (পিতা-আলী আকবর আলী, ৭৭ নলুয়া রোড নারায়ণগঞ্জ) নাসিম ও শামীম দুই ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ। ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় হাটটির ইজারা নেয়া হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জে হাট বসেছে ৪টি স্থানে। সিদ্ধিরগঞ্জের লক্ষীনারায়ণ মিল সংলগ্ন হাটটির ইজারাদার মহিউদ্দিন আহম্মেদ (পিতা-মৃত সিরাজউদ্দিন,১২৭/৩ রসুলবাগ), ওমরপুরের নিউ রাখী টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন হাটের ইজারাদার মতিউর রহমান বেপারী পিতা-মৃত রজ্জব আলী বেপারী), গোদনাইলের ধনকুণ্ঠাস্থ আর.কে স্পিনিং মিলের মাঠের হাটের ইজারাদার শাহ্‌ আলম(পিতা-মৃত ওসমান মিয়া, ধনকুন্ঠা গোদনাইল), গোদনাইলে এসও রোড সংলগ্ন সফর আলী ভূঁইয়ার মাঠের হাটের ইজারাদার জালাল উদ্দিন (পিতা-মৃত আফাজউদ্দিন, সুমিলপাড়া, আদমজীনগর) এদের সকলেই শামীম ওসমানের অনুগত লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবি এম আমিনুল্লাহ নূরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া যথাযথভাবেই অনুসুরণ করেই কোরবানীর হাটগুলির ইজারা দেয়া হয়েছে। শহরের চাষাঢ়ায় ডাকবাংলোর সামনের খালি জায়গা কাউকে হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়নি। অবৈধ হাট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম বলেন, কোরবানীর হাটগুলিতে যাতে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেজন্য পুলিশ সর্তক রয়েছে। চাষাঢ়া ডাকবাংলোর সামনের খালি জায়গায় অবৈধ হাট বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া  হচ্ছে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মাকসুদুর রহমান কামাল/নারায়ণগঞ্জ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here