লালমনিরহাট: জেলার আদিতমারী উপজেলার ফলিমারী এলাকার দুলালী বিলে শতাধিক হিন্দু পরিবারের ৮শ বিঘার বেশী জমির উপর বাঁশের তৈরী বানার ঘেরাও দিয়ে জোড়পুর্বক মাছ চাষ শুরু করেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল।

গত ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে নিজ খরচে ওই বানা অপসরন করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের লিখিত নিদের্শ থাকলেও প্রভাবশালী মহলটি তার তোয়াক্কা না করে সদম্ভে মাছ চাষ অব্যাহত রেখেছে।

এতে ওই বিলে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হয়ে ফসল চাষাবাদে অন্তরায় দেখা দিয়েছে। বিল থেকে বাঁশের তৈরী বানার ঘেরাও অপসরন করে পানি প্রবাহ চলমান রাখার দাবীতে ওই বিলের জমির মালিক হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজন শুক্রবার বিলের ধারে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।

স্থানীয় হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজন গত ১০ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে বলেন, আদিতমারী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মোহাম্মদ আলীসহ বেশ কয়েকজন যৌথভাবে দুলালী বিলের দু’ধারে বাঁশের তৈরী বানার ঘেরাও দিয়ে জোড়পুর্বক মাছ চাষ শুরু করেছে। আজীবন মুক্ত জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত দুলালী বিলে পানির প্রবাহ বন্ধ করে মাছ চাষ করায় স্থানীয কৃষকরা ফসল চাষাবাদে জটিলতার মুখোমুখি হয়। সকলের জন্য উম্মুক্ত বিলটিতে এলাকার কেউই মাছ ধরতে পারছেন না।

জানা গেছে, এই বিলের ৯৫ শতাংশ জমিই হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনের। তাদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই জোড়পুর্বক মাছ চাষ শুরম্ন করায় তারা বিস্মিত হয়ে পড়েছি। মহলটিতে প্রবাবশালী ও ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত থাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন কোন পদক্ষেপ নিতে ভীতস্থ হয়ে পড়েছে।

বিলের মধ্যে ১৫ বিঘা জমির মালিক উপন্দ্রে নাথ রায় জানান, তারা বিলের জমিতে আমন ও বোরো ধান চাষ করেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। প্রভাবশালী মহল জোড়পুর্বক মাছ চাষ শুরু করায় তারা বিলের জমিতে ভালো ফসল পাবে না। কারন বাঁশের বানার জন্য পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হয়েছে আর মাছ মরার ভয়ে তারা আগাছা নিধনে কীটনাশকও ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রভাবশালী মহলটি এতটাই শক্তিশালী যে আমরা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সাহস পাই না । তিনি এমনটি উলেস্নখ করে জানান, জেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করায় তাদেরকে প্রতিনিয়ত দেয়া হচ্ছে প্রাননাশের হুমকী।

স্থানীয় ভোলা রাম রায় জানান, দুলালী বিলটিতে দেশীয় মাছ অনেক থাকে। সারা বছরই এলাকার লোকজন নিজের ইচ্ছামত দেশী মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। কয়েক লাখ টাকার দেশীয় মাছের লোভে প্রভাবশালী মহলটি জোড়পুর্বক সেখানে মাছের চাষ শুরু করেছে।

উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন সরেজমনি পরিদর্শন করে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে ১০ জুলাই ওই বিলে ঘেরাও দেয়া বাঁশের বানা অপসারনের সিদ্ধান গ্রহন করে এবং মাছ চাষকারীদের তা নির্দেশ দেয়া হয়।

তবে মাছ চাষকারী দলের প্রধান ভেলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ও আদিতমারী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সাথে কথা হলে জানান তিনি এর সাথে জড়িত নেই। বিল থেকে বানা অপসরন কিংবা রাখার ব্যাপারে মাছ চাষকারীরাই জানেন। মাছ চাষকারী দলের অপর একজন মিজানুর রহমান বলেন, ইউপি চেয়পারম্যান বললেই তারা বিল থেকে বাঁশের বানা অপসরন করবেন।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও সমপ্রতি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকে পদোন্নতি হওয়া কর্মকর্তা রেজাউল আলম সরকার ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে বাঁশের তৈরী বানার ঘেরাও অপসরন পুর্বক পানি প্রবাহ ঠিক রাখার নির্দেশ দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তার নির্দেশ বাস্তবায়নে আগামী দু’চার দিনের মধ্যে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, সোমবারের মধ্যে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুলালী বিলের বানা অপসরন করবেন।

আসাদুজ্জামান সাজু/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here