সাম্প্রতিক সময়ে জিয়ার মাজারসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনীতিক মহলে। এরই মধ্যে লুই আই কানের নকশা নিয়ে বৈঠকে বসছে সরকার। সংসদ সচিবালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সংসদ-সচিবালয়ের স্থাপনা নিয়ে সাম্প্রতিক সৃষ্ট সমস্যা গুলো দ্রুত সমাধান করতে চায় সরকার। এরই ধারবাহিকতায় রোববার সংসদ সচিবালয়ে বৈঠক বসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংসদের এক কর্মকর্তা বলেন, বড় স্থাপনাগুলোর ক্ষেত্রে সহসা সিদ্ধান্ত না আসলেও কবরের মতো ছোট-ছোট স্থাপনাগুলো দ্রুতই সরিয়ে ফেলা হবে। স্থাপনাগুলো সরানোর জন্য সরকার এতদিন লুই আই কানের নকশার জন্য অপেক্ষা করেছিল। তা এসেছে এখন আর দেরি হবে না।

এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে মরহুম সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর বিষয়ে এর আগে সংসদ ভবনের সীমার ভেতরে নকশায় যা আছে, শুধু তাই থাকবে। মোদ্দা কথা সেখানে মূল নকশাই আমরা প্রতিস্থাপন করব। এটা করতে গিয়ে সেখানে কারও কবর থাকলে তাও অপসারণ করা হবে। মূল নকশা প্রতিস্থাপন করার কাজ শুরু হবে। নকশায় যা আছে, তাই থাকবে। নকশার বাইরে যা কিছু আছে, সেগুলো থাকবে না।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভ থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা ঢাকায় আসে। এটি বর্তমানে সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরির হেফাজতে রয়েছে। সংসদ সচিবালয় কমপ্লেক্সে নকশা বহির্ভূত নির্মিত সকল ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করতে এ মূল নকশায় ফিরিয়ে আনতেই সরকারের সিদ্ধান্ত।

লুই আই কানের নকশায় শেরেবাংলা নগর এলাকায় কবরস্থানের জন্য কোনো জায়গা রাখা হয়নি উল্লেখ করে জিয়াউর রহমানের কবরসহ জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থিত সব ক’টি কবর সরানোর পক্ষে মত দেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে সংসদ সচিবালয় শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তরের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের জন্য গত বছর ১৩ অক্টোবর তোলা হলে প্রধানমন্ত্রী তা ফেরত পাঠান।ওই সময় তিনি এও জানিয়ে দেন লুই কানের নকশা আসার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার আদলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ওই সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর লুই কান কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল নকশা সংশ্লিষ্ট কিছু পরিকল্পনা তিনি হস্তান্তর করতে পারেননি। পরবর্তীকালে এ নিয়ে কোনো সরকারই আগ্রহ দেখায়নি।

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার আদলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ লুই আই কানের মূল নকশার প্রথম ধাপ ছিল ২০৮ একর জায়গার ওপর জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ। যার সামনে ও পেছনে থাকবে বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠ। চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানে লেক। দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর বিস্তীর্ণ সবুজ। এছাড়া বাকি জায়গায় গড়ে তোলা হবে সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিকবলয়।

১৯৮১ সালে ৩০ মে চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে সংসদ ভবন এলাকার উত্তর পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর প্রতিস্থাপন, ঝুলন্ত ব্রীজ নির্মাণ করে অর্ধ চন্দ্রাকৃতির চন্দ্রিমা উদ্যানের আকৃতিও পরিবর্তন হয়। এর নামও পরিবর্তন করে জিয়া উদ্যান রাখা হয়। এছাড়া সংসদ ভবনের পশ্চিম দিকে আরো সাতটি কবর রয়েছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত আটজন নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় কবর দেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here