লক্ষ্মীপুর-৪

জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: মেঘনা নদী কোল ঘেঁষে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসনটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে নির্বাচন নিয়ে প্রচার-প্রচারনা চলছে। মেঘনার ভাঙনে বিগত কয়েক বছরে এ আসনের অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনার ভাঙনে ভিটা-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। নদী ভাঙন আর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেই এখানকার মানুষ প্রতিদিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন। নির্বাচনী এলাকায় চলছে গণসংযোগ, শুভেচ্ছা বিনিময়, গ্রুপিং ও লবিং।

এদিকে ভোটারদের মধ্যেও চলছে নানা আলোচনা। কে কোন দলের মনোনয়ন পাচ্ছে, কে হলে ভালো হয় তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক লাইনে ব্যাপক দান-অনুদান প্রদান ও প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে ভোটের মাঠে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।

১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসনের অধিকাংশ মানুষ মৎস্য শিকার এবং কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের নেতা-কর্মীরা। মনোনয়ন পেতে আওয়ামীলীগ-বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও ধর্না দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাধারন ভোটারদের কাছেও। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি।

ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জেএসডি ও এলডিপি সমর্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে ব্যানার-পেষ্টুন টাঙ্গিয়ে নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষনা করছেন। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মাঝে দেখা গেছে ব্যাপক আগ্রহ।

এখানে জন্ম নিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক জেএসডির কেন্দ্রীয় সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন তিনি।

২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (আল মামুন)। এরপর থেকে এলাকার উন্নয়নমুলক ও মেঘনার ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করছেন তিনি। মেঘনার ভাঙ্গন প্রতিরোধে ১৩৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হওয়ার পর ১ম পর্যায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধ ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্মীপুর সফরে নদী ভাঙন রোধের দ্বিতীয় দফায় অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে সক্ষম হন তিনি।

এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, বর্তমান এমপি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (আল মামুন), কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং এ আসনের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলী, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুজ্জাহের সাজু ও ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজভীরুল হক অনু।

এ আসনে বিএনপি থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, উপজেলার বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফিউল বারী বাবু ও কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন চৌধুরী।

এই আসনে আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী এক সময়ের বিএনপি সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নান। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পার্টি বিকল্প ধারার কেন্দ্রীয় মহাসচিব। তিনিও আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচন করা সম্ভবনা রয়েছে।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, আমি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এমন নির্বাচন চাই যেখানে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। ভোটারা নির্বিঘেœ তাদের ভোট দিতে পারবে।
আওয়ামীলীগের বর্তমান এমপি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (আল মামুন) বলেন, রামগতি-কমলনগরে অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। এ অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে যে বড় দাবী ছিল নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ। সে বিষয়ে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার কাজ করছে।

ইতোমধ্যে ১৩৪৯ কোটি টাকা একনেকে পাশ হয়ে প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যায়ে ১ম পর্যায়ের সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁেধর কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে এ আসনে যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতের ৪০ বছরেও এ পরিমাণ কাজও হয়নি বলে দাবী করেন তিনি। নেতা-কর্মীদের দূদির্নে ছিলাম, এখনো আছি, ভষিৎতেও থাকবো। অতীতের চেয়ে নেতাকর্মীরা এখন অনেক উজ্জীবিত। আমি রামগতি-কমলনগর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে দলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছি। ইনশাআল্লাহ নেত্রী মনোনয়ন দিলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং এ আসনের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, আমি ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামীলীগের সক্রীয় রাজনীতি করে আসছি। আমি একজন সক্রীয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। রামগতি আসনে সংরক্ষিত মহিলা এমপি হিসেবে ইতিমধ্যে দায়িত্ব পালন করেছি। তা-ছাড়া রামগতি-কমলনগরসহ সারাদেশে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ এলাকার মানুষ আমাকে এমপি হিসাবে নমিনেশান চাইতে অনুরোধ করছেন। আমাদের নেত্রী যদি মনে করেন আমাকে দিয়ে এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করাবেন, তাহলে আমি সাদরে গ্রহণ করবো।

কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুজ্জাহের সাজু বলেন, দলের তৃনমূল নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনে নৌকা কে বিজয়ী করতে আমি কাজ করছি। নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছি। দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমি জয়ী হতে পারবো।

সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলার বিএনপির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, এই আসন থেকে আমি দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। আমার এলাকাবাসী জানে আমার সততা ও যোগ্যতার কথা। দলের নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলা মোকাবেলা করতে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমার নমেনিশান নিয়ে এখন চিন্তা করার দরকার মনে করছিনা। দলীয় নেত্রী বেগম জিয়া ও আমাদের নেতা তারেক রহমান নমিনেশান নিয়ে চিন্তা করবেন। তাঁরা যা ভালো মনে করবেন তাই মেনে নিব।

কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন চৌধুরী বলেন, আমি তৃণমূলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি, তাদের সুখে দুঃখে পাশে আছি। রামগতি ও কমলনগরের মানুষের জন্য আমি সবসময় কাজ করে যাব।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here