লক্ষ্মীপুরে আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছেজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে মাইলের পর মাইল কৃষকের মাঠে এখন দোল খাচ্ছে সবুজ আমনের চারা। চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে আমন ধানের আবাদ। এবার জেলার পাঁচ উপজেলায় ৭৭ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ২৯৩ হেক্টর বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ধানের উৎপাদনও ভালো হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।

গত বছর আমন ও এবারের আউশের বাম্পার ফলনে আমন চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা। এবার জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর, রামগঞ্জ ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলে আমনের আবাদ করেছে স্থানীয় কৃষকেরা। বর্ষা মৌসুমের (জৈষ্ঠ্য-আষাঢ়) শুরু থেকে পরিমিত বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যথাসময়ে বীজতলা তৈরি করা গেছে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে রোপন হয়েছে ধানের চারা। এখন চলছে পরিচর্যা। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কেটে গোলায় উঠাবেন কৃষকরা।

এদিকে মৌসুমের এ সময় রোপা-আমান ধানের জন্য জমিতে ৬ ইঞ্চি পানি প্রয়োজন হয়। কিন্তু ধান রোপনের পরে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি শূন্য হয়ে পড়ে আমন ক্ষেত। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। কৃষকদের ডোবা, পুকুর ও খাল থেকে পানি সংগ্রহের পরামর্শ দেয় কৃষি কর্মকর্তারা।

এমন পরিস্থিতিতে ঘুর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে জেলার সর্বত্র পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়। এতে আমন ক্ষেতে পানি জমে কৃষকদের কাঙ্খিক্ষত পানির প্রত্যাশা পূরণ হয়। শুকিয়ে যাওয়া আমনের জমিতে বৃষ্টির পানি জমেছে। ফোটা ফোটা বৃষ্টিতে ধানগাছ যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সজীব-সতেজ হয়ে উঠছে ফসলের মাঠ। এতে স্বস্তি এসেছে লক্ষ্মীপুরের আমন চাষীদের।

রোপা আমন বৃষ্টি নির্ভর। এ মৌসুমে বৃষ্টির ওপর ভরসা করেই কৃষকরা আমন চাষ করেন। কিন্তু লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে যায় আমন ক্ষেত। ধানগাছ বাঁচাতে হতাশায় পড়েন কৃষকরা। অবশেষে বৃষ্টির দেখা পেয়ে কৃষকদের হতাশা কেটেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচ উপজেলায় ৭২ হাজার ৫৯৭ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ২৯৩ হেক্টর বেশি জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় উফশী জাতের ১৯ হাজার ২৩০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ২ হাজার ১০০ হেক্টর, হাইব্রিড ৫০ হেক্টর। রায়পুরে হাইব্রিড ১ হাজার হেক্টর, উফশী ৯ হাজার, স্থানীয় ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। রামগঞ্জে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে উফশী ধানের আবাদ করে কৃষকরা। কমলনগরে উফশী ২২ হাজার হেক্টর, স্থানীয় জাতের ১ হাজার ৫০০ হেক্টর ও রামগতিতে ১৮ হাজর ২৬০ হেক্টরে উফশী এবং ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বলেন, চলতি মৌসুমে রোপা-আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। প্রত্যাশিত ফসল উৎপাদনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাসহ কৃষি বিভাগ। আশা করি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদনও ভালো হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here