নেপিদোতে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীডেস্ক নিউজ :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত গণহত্যা ও সহিংসতার জেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মত হয়েছে দেশটি। এজন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করবে বাংলাদেশ ও মিয়ামানমার।
নেপিডেতে মিয়ানমারের ( স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বাইলেটারেল মিনিষ্ট্রিয়াল মিটিং)  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. কর্নেল সুয়ির সাথে বৈঠকের পর  মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফোনে একটি জাতীয় দৈনিককে এ তথ্য জানিয়েছেন মিয়ানমায়ের সফরত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেন, মিয়ানমার কফি আনাম কমিশনের সুপারিশ বাস্তবাবায়ন করতে সম্মতি জানিয়েছে। তিনি জানান, আজ বুধবার স্থানীয় সময়  মিয়ানমারের কার্যত সরকার প্রধান স্টেট কাউন্সিলার অং সান সু চির সাথে দেখা করবেন ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠকে দশটি পয়েন্ট নিয়ে আমরা একাটা সিন্ধান্তে পৌছেছি। এরমধ্যে দুইটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ১. সীমান্ত লিয়াজোঁ অফিস ২. নিয়মিত নিরাপত্তা ও সহযোগিতা আলোচনা বৈঠক।  রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিতে নিতে তারা (মিয়ানমার) রাজি হয়েছে। এ ব্যাপারে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে যৌথ কমিটি (ওয়াকিং কমিটি) গঠনের সিন্ধান্ত হয়েছে। যৌথ কমিটির মাধ্যমেই ফেরত প্রক্রিয়া শুরু হবে।
চলতি বছরেই কী আশা করা যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আশাতো করছি। তবে তিনি বলেন, গ্রাউন্ড লেবেলিং কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে। তবে আমাদের অনেকদূর হাটতে হবে, আমরা তো শুরু করছি।  তিনি বলেন, কফি আনানের সুপারিশ বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন। এ ব্যাপারে কফি আনান সুপারিশ বাস্তবায়নে তারা ( মিয়ানমার) রাজি হয়েছে।
কীভাবে বাস্তবায়ন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির  তত্ত্বাবধানেই কফি আনান সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে। এ ব্যাপারে আমরা বলেছি, বাংলাদেশের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি হবে। আর ওই কমিটির  তত্ত্বাবধানেই কফি আনান কমিশনের বাস্তবায়ন হতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের দাবি করেছি, যাতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়। তবে তারা (মিয়ানমার) এ নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা নিজেরাই চলে যাচ্ছে। আমি তাদের বলেছি, চলে যাওয়া ঠেকান আপনারা।
 অপর এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, রাখাইন সফর করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাদের (মিয়ানমার) কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
তিনি বলেন, সীমান্তে মাইন পাতার প্রসঙ্গ তোলার পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অন্যদের দোষারোপ করেছে। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা মাইন অপসারণের উদ্যোগ নেবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক হবে। সেখানে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য দুইটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর থেকে আমাদের সাথে তাদের নিয়মিত আলোচনা হবে।  মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরসা (আরাকান স্যালভেশন আর্মি) জঙ্গিদের ব্যাপারে আমাদের কাছে  গোয়েন্দা তথ্য চেয়েছে। তবে আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, আমরা কোন টেররিস্টকে পাত্তা দেব না। আরসা তোমাদের স্থানীয় টেররিস্ট। আমাদের নীতি আমরা স্পট করে তাদের জানিয়ে দিয়েছি। তারা বলতে চেয়েছে (মিয়ানমার) আরসার বিষয়টি। আমরা বলেছি, আমরা আমাদের স্থানীয় টেররিস্টদের দমন করেছি। তোমরা তোমাদের স্থানীয় টেররিস্টদের (আরসা) নিয়ন্ত্রণ কর (ট্যাকেল কর)।
আলোচনা সম্পর্কে তিনি আরও বলেন,  নাফ নদী দিয়ে আমাদের সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার সময় মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি দিয়ে যেতে হয়। এ নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। কিস্তু বিষয়টি আগের মতোই থাকবে বলে তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  জনসংযোগ কর্মকর্তা  শরীফ মাহামুদ অপু জানান, গতকাল বিকালে মিয়ানমারের নেপিদোতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
অপরদিকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের ইউনিয়ন মিনিস্টার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) লে. কর্নেল সুয়ি। তার আগে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন। মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে কফি আনান সুপারিশ বাস্তবায়নসহ মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া, সন্ত্রাস প্রতিরোধ, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা,  গ্রহণ, মানব পাচার বন্ধ করা, শান্তিপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, সীমান্তে মাদক পাচার বন্ধকরণসহ দু’টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
উল্লেখ, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ব্যাপারে সোমবার থেকে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে মিয়ানমার সফরে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। প্রতিনিধি দলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, একজন যুগ্ম সচিব, একজন উপ সচিব, বিজিবি, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা। সফর শেষে তারা আজ বুধবার রাতে দেশে ফিরবেন।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here