ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস আর নেই। ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।
হাসপাতালে জীবনের অন্তিমলগ্নে মিজারুল কায়েসের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী এবং দুই মেয়ে মানসী ও মাধুরী। মানসী বাবাকে দেখতে লন্ডন থেকে ব্রাসিলিয়ায় যান।
শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন বলে ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাসের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ব্রাসিলিয়ার হাসপাতালটিতে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভর্তি হন মিজারুল কায়েস। তিনি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় ছিলেন। ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে ব্রাজিলের সাও পাওলোর উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এই কূটনীতিক।
সাও পাওলোতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা বলা হলেও মিজারুল কায়েস সেখানে ভর্তি হননি। শ্বাসকষ্টের দরুণ তিনি সাও পাওলো থেকে সড়কপথে ব্রাসিলিয়াতে যান এবং সেখানে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে ব্রাসিলিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর আগে ২০১২ সালে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ও রক্তে ইনফেকশনের মতো প্রাণঘাতী সেপটেসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন মিজারুল কায়েস।
ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ডাকসাইটে এই কূটনীতিককে মালদ্বীপে হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে অবজ্ঞা-অবহেলা করা হয়েছিল। তবে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে রাশিয়াতে রাস্ট্রদূত হিসেবে বদলি করে যথাযোগ্য মূল্যায়ন করে। এরপর রাশিয়া থেকে মিজারুল কায়েসকে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াত আমলে বঙ্গবন্ধু প্রেমিক কায়েস তার অফিসের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর একটি পোট্রেট টাঙিয়েছিলেন। পোট্রেটটি সরাতে তার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃস্টি করা হয়েছিল। কিন্তু একরোখা মিজারুল কায়েস আপোস করেননি। এর ফলে তার অফিস কক্ষটিই বদলে দেওয়া হয়। নতুন অফিস কক্ষে যাওয়ার সময় পোট্রেটটি নামাতে বাধ্য হন তিনি।
দেশপ্রেমিক কূটনীতিক মিজারুল কায়েস ছিলেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুরাগী। তার বিদেহী আত্মার প্রতি রইলো অশেষ শ্রদ্ধা।