মিসু সাহা নিক্কন :: লক্ষ্মীপুরের রামগতির কলাকোপা জামেয়া ইসলামিয়া (মাদরাসা) ও এতিমখানায় দূর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, কমিটি দখল, অব্যবস্থাপনা, অধ্যক্ষ পদ দখল পাল্টা দখলসহ নানান অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১৯৩১ খ্রী: চর বাদাম ইউনিয়নের চর কলাকোপা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদরাসাটি। মানুষের দান অনুদানে বিশাল এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানে ২৮ শিক্ষক, ৬ অফিস সহায়ক, প্রায় ৭৫০ শিক্ষার্থী তার মধ্যে আবাসিকে আছেন গুটি কয়েক এতিম শিশু সহ ৪০০ জন।
মাদরাসার নামে রয়েছে প্রায় শত একর কৃষি জমি, ২ টি পুকুর, শতাধিক নারিকেল গাছ এবং প্রতিদিন মাদরাসার সামনে দান খয়রাত উঠে ৫/১০ হাজার টাকা।
কাওমী ধারার মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর থেকে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদটি দখলের জন্য প্রতিনিয়ত হতে থাকে নানান ধরনের চক্রান্ত। এ চক্রান্তের সাথে জড়িত মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল মিয়া পরিবারের ২টি গ্রুফ। এখন একটি গ্রুফের সাথে আছে মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মো: আলী সহ কয়েক শিক্ষক।
তারা চালাচ্ছে লুটপাটের রামরাজত্ব। মাদরাসার মুহতারাম এ বি ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠায় তাকে কমিটির কয়েক সদস্যসহ অপসারণ করে তদস্থলে দায়িত্ব দেন কওমী ভাবধারার নেতা মাও: খালেদ সাইফুল্লাহকে। তিনি মাদরাসা পরিচালনা কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পেয়ে মুহতারামের দায়িত্ব নিয়ে নেন।
দায়িত্বকালীন তিনি কওমী শিক্ষার সর্বশেষ স্তর দাওরায়ে হাদিস সহ নীচের ৫ টি শ্রেণী মাদরাসা থেকে তুলে দেন। ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হলে এবং তার ক্লাস বর্জন করলে তিনি মাদরাসা থেকে বিতাড়িত হন।
কওমী মাদরাসায় নিয়োগ বাতিল, আয় ব্যয় শিক্ষার্থীদের পাশের সনদ বা যে কোন বিষয়ে উর্ধতন কোন কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহী করতে হয়না। তা মনগড়াভাবে সম্পন্ন হয়।
সরেজমিনে দেখা যায় আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) অনুমতিহীনভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন শিক্ষক মো: আলী, নুর মোহাম্মদ, হোসাইন। এ বি ছিদ্দিক পূন:নিযুক্ত হলে কমিটির সভাপতি আলহাজ মিয়া মো: ইলিয়াছ (তিনি ৩ মাস আগে এ পদ দখল করেন) সহ মাদরাসা থেকে মুফতি নিজাম উদ্দিনকে বহিস্কার ও মাও: মাহফুজুর রহমান কে মাদরাসায় আসতে দেন না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা মাদরাসার স্বার্থ বিরোধী কাজ করেছেন।
বহিস্কৃত ও বিতাড়িত শিক্ষক দুজন মিলে তদবির ও শালিশী বৈঠকের ফলে বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারন করে। অবশেষে বহিস্কৃত শিক্ষক মুফতি নিজাম উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামগতি বরাবরে বে-আইনিভাবে বহিস্কারের ন্যায় বিচার ও আর্থিক অনিয়মের জন্য ব্যংক একাউন্ট সাময়িক স্থগিত আবেদন করে।
তার আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উভয় পক্ষকে নোটিশ করে তাদের বক্তব্য শুনে আয় ব্যয় হিসাব নিকাশ, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, মাদরাসার জমির হিসাব, অর্থ আয়ব্যয়ের পদ্ধতি, শিক্ষক নিয়োগ বাতিল, ছাত্রদের সনদ প্রদানসহ অনেক বিষয়ে তথ্যের গরমিল পেয়ে বিষয়টি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন।
প্রশাসনের নানান জায়গায় মাদরাসার এসকল অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ আবেদন যাওয়াতে লুটপাটকারীদের চক্রান্ত ফাঁস হওয়ার ভয়ে তারা ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে রামগতির ইউএনও’র বিরুদ্ধে ছাত্রদের ভূল তথ্য দিয়ে বিক্ষুব্ধ করে তোলে এতে করে বুধবার কোন এক সময়ে মাদরাসার অভ্যন্তরে ইউএনও’র বিরুদ্ধে কয়েকটি শ্লোগান দেন।
এ বিষয়ে আলিম বর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার, মাহমুদুল হাসান, আ: করিমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, শিক্ষকরা আমাদের বলেছেন ইউএনও আমাদের শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরন করেছেন তাই আমরা মাদরাসার ভিতর তার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়েছি। বিষয়টি সত্য না মিথ্যা তা যাছাই করেছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তারা কোন উত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে মুহতারাম আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, বহিস্কৃত ও বিতাড়িত শিক্ষক দুজন মাদরাসার স্বার্থ স্বংশ্লিষ্ট বিষয়ে আঘাত করেছেন তাই তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষককে বহিস্কার করতে পারে কিনা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।
চর বাদাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, ঘটনার দিন আমি ওই মাদ্রাসায় ছিলাম। ইউএনও’র বিরুদ্ধে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভূল তথ্য দিয়ে বিক্ষুব্ধ করে তোলা হয়েছে। মূলত ইউএনও মাদ্রাসার আয় ব্যয় হিসাব নিকাশ, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, মাদরাসার জমির হিসাব, অর্থ আয়ব্যয়ের পদ্ধতি, শিক্ষক নিয়োগ বাতিলসহ বিভিন্ন হিসাব চাওয়ায় তাদের এই নাটকিয় আয়োজন। আগামীকাল আমার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তার মূল তথ্য সবার সামনে উঠে আসবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজগর আলী বলেন, আমি ন্যয়ের পক্ষে। অন্যায়কারী যে হউক না কেন তাকে শাস্তি পেতে হবে। কেউ তথ্য সন্ত্রাস করলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
স্থানীয়রা দাবী করেন, প্রায় শত বছরের পুরনো মাদরাসাটিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী, আয় ব্যয়, পরিচালনা সবকিছুতে স্বচ্ছতা এনে একটি আধুনিক মাদরাসা পরিণত করা হোক এবং লুটপাটকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক।