রাজশাহী: বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে রাজশাহীতে পালিত হচ্ছে ১৮দলীয় জোটের ডাকা টানা ৭২ঘণ্টার অবরোধ।

অবরোধের ৩য় দিন সোমবার সকালে রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সংঘর্ষ চলাকালে একজন পুলিশ কনস্টেবলসহ অন্তত ৩০জন অবরোধকারী আহত হয়েছে।

এসময় অবরোধকারীরা পুলিশ বহনকারী হিউম্যান হলার (সিএনজি) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মহানগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকায় মহাসড়কের উপর টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করে অবরোধকারীরা।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ট গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তখন অবরোধকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে বেধে যায় সংঘর্ষ।

সংঘর্ষকালে অবরোধকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রায় ডজনখানেক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় তাদের ধাওয়া দিলে পেছন দিক থেকে অবরোধকারীদের অপর একটি গ্রুপ পুলিশ বহনকারী একটি হিউম্যান হলার (ইমা) গাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তখন সংঘর্ষ আশপাশের এলাকায় আরো ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব এসে ব্যাপক টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

তবে আজকের এই সংঘর্ষ চলাকালে অবরোধকারীদের মধ্যে থেকে এক ব্যাক্তিকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বাটুল দিয়ে মার্বেল ছুড়তে গেছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় শামসুজ্জামান (৪৫) নামের এক পুলিশ কনস্টেবলসহ অন্তত ৩০জন আহত হন। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় অবরোধকারীদের হামলায় আহত হয়েছে বলে পুলিশ দাবী করলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সংঘর্ষের সময় রাবার বুলেট ছুড়তে গিয়ে অসর্তকতার কারণে নিজের গুলিতেই বৃদ্ধাঙ্গুল হারান পুলিশের ওই কনস্টেবল।

এর আগে সকাল সকাল পৌনে সাতটার দিকে শিবিরকর্মীরা মহানগরীর কাজলা অক্ট্রয় মোড়ে মহাসড়কের উপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করার চেষ্টাকালে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানি গ্যাস নিক্ষেপ করে। ঘটনার সময় আমাদের স্টাফ রিপোর্টার মাসুদ রানা রাব্বানী জানান- শিবির কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে।

পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব গিয়ে ব্যাপক টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় পালাতে গিয়ে কমপক্ষে ১০জন শিবিরকর্মী আহত হয়েছে।

এদিকে, একই সময়ে মহানগরীর কাদিরগঞ্জ গ্রেটাররোড মসজিদের সামনে রাসত্মার ওপর অসংখ্য কাঁচের বোতল ভেঙে রাসত্মা অবরোধের চেষ্টা করে অবরোধকারীরা। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে এসব ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।

অবরোধের কারণে রাজশাহী টর্মিনাল থেকে থেকে দূরপালস্না বা আনত্ম:জেলা রম্নটের কোনো বাস ও ট্রাক ছেড়ে যায়নি। এসব রম্নটে ইঞ্জিন চালিত সবকল ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যে কারণে মহানগরীর সাথে বাইরের কোন জেলা বিভাগের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহী। তবে নগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল ছিল স্বাভাবিক।

অবরোধকে কেন্দ্র করে মহানগরীর সাহেববাজার, সোনাদিঘী মোড়, বিনোদপুর, কাজলা, লক্ষীপুর, রেলগেটসহ গুরম্নত্বপূর্ণ পয়েন্টে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও মহানগরীতে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাব।

এ বিষয়ে সোমবার দুপুর ৩টায় সেলফোনে মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলামের সাথে সেলফোনে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

পরে মহানগরীর গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। আর জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, নির্বাচনী তফশীল ঘোষনা স্থগিত ও বিএনপি তথা ১৮দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারাদেশে ৭২ঘন্টা অবরোধ ডাকা হয়। তবে সোমবার সকালে তা বাড়িয়ে আগামী বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত বর্ধিতের ঘোষনা দেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ।

এস.এইচ.এম তরিকুল ইসলাম/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here