ষ্টাফ রিপোর্টার :: দেশে পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এসব সাইট পুরোপুরি ব্লক করা সম্ভব হয়নি। কিছুদিনের জন্য বন্ধ করা গেলেও পরবর্তীতে সাইটগুলো সচল হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ বছর ধরে সরকারের একটি মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে উদ্যোগ নিয়েও পর্নো সাইট বন্ধ করতে পারেনি।

পর্নো সাইট বন্ধ করতে না পারার পেছনে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবও একটি বড় কারণ বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্নো সাইট কারিগরিভাবে শতভাগ বন্ধ করা সম্ভব নয়।

তবে ৯০ ভাগ বন্ধ করা সম্ভব। শতভাগ বন্ধের চেষ্টা করাও উচিত নয়। তাহলে সে চেষ্টা ব্যর্থও হতে পারে।
জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মূল বিষয়টি হলো আমাদের যদি পর্নোগ্রাফি সাইট থাকতো তাহলে তা বন্ধ করা যেত বা বা সম্ভব হতো। কিন্তু সমস্যা হলো ইউটিউবে।

এখন পর্নোগ্রাফির বড় সোর্স হলো ইউটিউব। ইউটিউবে বন্ধ করা কঠিন। ইউটিউবের এ ধরনের কনটেন্ট আমাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে যায় না।

আমরা ফেসবুকের সঙ্গে যেমন আইস ব্রেকিংয়ের জায়গায় যেতে পেরেছি, ওদের যেমন কোনও কিছু শুনতে বা করতে বাধ্য করতে পেরেছি তেমনি ইউটিউবের সঙ্গে করতে পারলে পর্নোগ্রাফিও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো।’

তিনি বলেন, অক্টোবরের মধ্যে দেশে ইউটিউবের অফিস চালু হচ্ছে। অফিস চালুর পরে এই বিষয়ে তিনি ইউটিউবের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি জানান, আগামী নভেম্বরে টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে একটা প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে। ওই প্রকল্প চালু হলে স্থায়ীভাবে এসব সাইট বন্ধ করা সম্ভব হবে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকার দেশে ৫৬০টি পর্নো সাইট বন্ধের নির্দেশ দেয়। এই ঘোষণা সে সময় দ্রুত কার্যকর করে সংশ্লিষ্টরা। সে সময় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক জানান, বিটিআরসির পাঠানো ৫৬০টির মধ্যে ৯০ শতাংশ সাইট বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।

তালিকার অবশিষ্ট ১০ শতাংশ সাইট বন্ধ করতে সময় লাগছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সাইট ক্লাউডে হোস্ট করা। ফলে আইপি ধরে ধরে সেগুলো বন্ধ করতে হচ্ছে।

দেখা গেল একটা আইপি ধরে বন্ধ করা হলো, সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি আইপির মাধ্যমে ওই সাইট চালু হয়ে গেল।’ তিনি বলেন, ‘কারিগরি বিভিন্ন কারণে পর্নো সাইট বন্ধে কখনও পুরোপুরি সফল হওয়া যায় না।’

জানা গেছে, ২০১৬ সালের প্রথম দিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সে সময়ের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বরাবর পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেন একজন অভিভাবক।

তিনি চিঠিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে লিখেছিলেন, ‘এসব সাইট বন্ধ করা না হলে সমাজের কোমলমতি শিশু-কিশোররা ধ্বংস হয়ে যাবে। সমাজ পতিত হবে এক ভয়ঙ্কর আসক্তিতে।

এখনই পর্নো সাইটগুলো বন্ধ করা না গেলে তা আগামী দিনে ভয়ঙ্কর পরিণাম ডেকে আনবে।’ তিনি চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, সমাজের অনেক সন্তান এরইমধ্যে এসবে আসক্ত হয়ে গেছে। ওই চিঠির সূত্র ধরেই পর্নো সাইটগুলো বন্ধের উদ্যোগে গতি আসে। যার ফল পাওয়া যায় ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের শুরুর দিকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে ৮৪টি পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় পুলিশ সদর দফতর।

চিঠিতে ওই ওয়েবসাইটগুলোকে অশ্লীল ও বিকৃত উল্লেখ করে বিটিআরসির মাধ্যমে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। সাইটগুলোর তালিকা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘ওই সাইটগুলোতে কিছুদিন ধরে দেশের মানুষের গোপনে ধারণ করা যৌনতার ছবি ও ভিডিও প্রদর্শন করা হচ্ছে।’

অন্যদিকে, এর আগে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ধরনের আরও ওয়েবসাইট খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠনের জন্যও বিটিআরসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। জানা যায়, বিটিআরসি উদ্যোগ নিলে দুই সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল পর্নো সাইটগুলো। পরে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও সক্রিয় হতে থাকে পর্নো সাইটগুলো।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here