বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে ::BPP_mukti_ny 01_edited-1 মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাচাঁতে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যাকারীদের সাথে কখনো কোন আলোচনা হতে পারেনা। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, কংগ্রেস সদস্যরা তালেবান কিংবা আইএস প্রধানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে কখনও আলোচনায় বসার পরামর্শ দেননি, তাহলে বাংলাদেশের জঙ্গি নেত্রী খালেদার জিয়ার সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় বসার কথা বলেছেন কেন? স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের জামাইকার একটি রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ড আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ড এর আহবায়ক ড.আব্দুল বাতেনের সভাপতিত্বে এবং মাশিউল আলম জগলুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত মতবিনিময় সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেশে আবার স্বাধীনতা বিরোধীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তাই একাত্তরের মত আবারও একতাবদ্ধভাবে এদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি প্রবাসে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা হাতিয়ার জমা দিয়েছে কিন্তু ট্রেনিং জমা দেয়নি। প্রয়োজনে দেশ মাতৃকার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা আবারো জীবন উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত আছে। দেশ ও প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সরকারের বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিস্তর আলোচনা করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নতমানের পরিচপয় পত্র প্রদান করবে, যা কখনই কেউ এটাকে কোন ভাবেই নকল করতে পারবে না। কারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তাঁদেরকে আমরা আগে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভাগ করেছি। কারা সরাসরি যুদ্ধ করেছে আর কারা সহযোগিতা করে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে তাদেরকেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে আগে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে বের করা হচ্ছে। কারা সরাসরি যুদ্ধ করেছেন আর কারা সহযোগিতা করে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তাদেরকেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে যারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষিতা হয়েছেন তাদেরকে বীরঙ্গনাদের তালিকায় আনা হচ্ছে। কিন্তু এ তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাম থাকবে না। কারন তিনি নিজের ইচ্ছায় ধর্ষিতা হয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের দিকে না গিয়ে তিনি নিজের ইচ্ছায় ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন। তিনি স্বেচ্ছা ধর্ষিতা বলেই বীরঙ্গনাদের তালিকায় তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভয় নয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আরো বলেন, দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের মতই প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধারাও সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন। এক’শ বছরের গ্যারান্টি আর সুন্দর ডিজাইনে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই করে দেয়া হবে। তবে যাঁরা ভিন্ন ধর্মের মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। যেমন হিন্দু হলে তাঁদের দাহ করার স্থানে একটা ফলকে খোদাই করে নাম বসিয়ে দেয়া হবে। খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য একইভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাতে করে যে কেউ দেখলে বলেতে পারেন এটা একজন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি। শিক্ষাক্ষেত্রেও আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলাদা বিষয় সংযোজন করেছি। অন্যান্য বিষয়ের মতই ১০০ নম্বরে এ বিষয়ে পরীক্ষা হবে। চাকুরির পরীক্ষার ব্যাপারে মৌখিক বা লিখিত বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক ২০ নম্বর থাকবে বাধ্যতামুলক। যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভেদ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, যাঁরা বিরোধ সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিল এ বিরোধের সমাধা করবেন। তবে প্রবাসে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের। আমরা সেজন্য অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহন করবো। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ বলেন, আর কোন বিভেদ বা দলাদলি নয়। আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হবার সময় এসেছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেই সকল অপশক্তিকে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জামাতের অর্থে পরিচালিত একটি টেলেভিশন ও পত্রিকার কথা উল্লেখ করে বলেন মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে কোন বিজ্ঞাপন দেয় না। তাই এসব পত্র-পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নানা ধরনের কুৎসা রটনা করে থাকেন। এদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দুই গ্রুপকে একত্রিত করার মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. প্রদীপ রঞ্জন কর মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, ২৫ মার্চকে যেন আন্তর্জাতিক জেনোসাইড দিবস পালন করা হয়। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়কে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহবান জানান। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হুসাইন বলেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সংবর্ধনা সভার আয়োজক কমিটিতে রাজাকার আল বদরদের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকায় প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধারা সেই সংবর্ধনা সভা বয়কট করেছিল। এখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের অপতৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলছে। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেরকে প্রতিহত করতে হবে। মতবিনিময় সভায় প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি আবেদনপত্র পাঠের পর মন্ত্রীর হাতে তা তুলে দেন আলাউদ্দিন সরদার। শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের হাতে একটি সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ড এর আহবায়ক ড.আব্দুল বাতেন। মতবিনিময় সভায় অন্যদের বক্তব্য দেন সর্ববীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, কামরুল হাসান চৌধুরী, কমান্ডার নুরুন্নবী, খোরশেদ আনোয়ার বাবলু,ফারুক হুসাইন,আলাউদ্দিন সরদার, সাঈদুর রহমান সাঈদ, কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান, রথীন্দ্র নাথ রায় ও শওকত আকবর রিচি প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here