সুরেন্দ্র কুমার সিনহাষ্টাফ রিপোর্টার ::এক হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায়ে দুই আসামির মৃতু?্যদ-ের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে আপিল বিভাগ, যেখানে যাবজ্জীবনের অর্থ হবে আমৃত্যু কারাবাস। ১৬ বছর আগে সাভারের জামান হত্যা মামলায় দুই আসামির আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দেন।

এই বেঞ্চের অপর তিন বিচারক হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০১ সালে গাজীপুরে জামান নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা সিরাজুল ইসলাম গাজীপুর মডেল থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দ্রুত বিচার আদালত ২০০৩ সালে এই মামলার রায়ে তিন আসামি আনোয়ার হোসেন, আতাউর রহমান ও কামরুল ইসলামকে মৃত্যুদ- দেয়। হাইকোর্টেও সর্বোচ্চ সাজার রায় বহাল থাকে।
এরপর আসামি আনোয়ার ও আতাউর সাজা কমানোর জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেন। কামরুল পলাতক থাকায় আপিলের সুযোগ পাননি। দুই আসামির আপিল শুনানি করে মঙ্গলবার সাজা কমিয়ে রায় দেয় আপিল বিভাগ।
আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপিল বিভাগ মৃত্যুদ-াদেশের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দ-
দিয়েছে। এ সময় আপিল বিভাগ বলেছে, যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস। তখন আমি এর প্রতিবাদ করেছি।’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ফৌজদারি দ-বিধির ৫৭ ধারায় যাবজ্জীবন দ-ের অর্থ হলো সর্বোচ্চ ৩০ বছর কারাদ-। কারাগারে রেয়াত পেলে দ- আরও কমে আসে। কিন্তু আমৃত্যু সাজা হলে রেয়াত খাটবে না।
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্য যেন মূল রায়ে না থাকে। যদি থাকে, তাহলে সব মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে।’
সাংবাদিকরা এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ আদালত মৃত্যুদ- থেকে তাদের সাজা যাবজ্জীবন করেছেন। আদেশে বলেছেন, যাবজ্জীবন কারাদ- অর্থ ৩০ বছর নয়, বরং আমৃত্যু। স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।
আসামিপক্ষ এ সময় বলেছেন, দ-বিধি অনুযায়ী যাবজ্জীবন অর্থ ৩০ বছর। তখন প্রধান বিচারপতি বলেছেন, রায়ে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হবে। উনার মতামত দেবেন যে আদালত, যদি মনে করেন যে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হবে, তাহলে তাকে মৃত্যুঅবধি জেলে থাকতে হবে। এই (পূর্ণাঙ্গ) রায়টি পেলে একটি দিক নির্দেশনা পাব বলে আশা করি।’
দ-বিধির ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘দ-ের মেয়াদসমূহের ভগ্নাংশসমূহ হিসাব করার ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাবাসকে ৩০ বছর মেয়াদি কারাবাসের সমতুল্য বলে গণ্য হবে।’
সে ক্ষেত্রে এখন থেকে যাবজ্জীবন কারাদ- মানেই আমৃত্যু কারাদ- ধরতে হবে কিনা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এখনই এটা বলা যাবে না। এখানে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আইনে ৩০ বছর আছে বলে উল্লেখ করেছেন। তখন প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি দেখাবেন যে, ৩০ বছর না। যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদ-। বিশেষ করে আদালত যদি এই মর্মে আদেশ দেন, তাহলে আমৃত্যুই থাকতে হবে।’
এই সিদ্ধান্ত অন্য মামলাতেও প্রযোজ্য হবে কিনা জানতে চাইল অ?্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায়ে কী বলে, সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
গত বছর জুনে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনের সময় এক অনুষ্ঠানেও এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
সেদিন তিনি বলেন, ‘যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামি বলতে আপনারা মনে করেন ৩০ বছর। ধরে নেয়, সব জায়গায়। প্রকৃতপক্ষে এটার অপব্যাখ্যা হচ্ছে। যাবজ্জীবন অর্থ হলো একেবারে যাবজ্জীবন, রেস্ট অফ দ্য লাইফ।’
যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামি জেলখাটার সময় রেয়াত পেলেও সেটা কোনোমতেই ৩০ বছরের কম হয় না বলে সেদিন জানান প্রধান বিচারপতি।
ব্রিটিশ আমলে কারাগারগুলোতে যাবজ্জীবনের প্রশ্ন ছিল না উল্লেখ করে তিনি ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘তখন একেবারে দ্বীপান্তর করা হতো। আমাদের জেল কোড অনেক পুরনো। এটা নিয়ে ব্রিটিশ আমলে অনেক জগাখিচুড়ি হয়েছে।’
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here