ময়মনসিংহ জেলা আ.লীগেস্টাফ রিপোর্টার :: ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। দলের অপেক্ষাকৃত সিনিয়র ও ত্যাগী নেতাদের বাইরে রেখে হাইব্রিড ও বিতর্কিতদের নাম কমিটিতে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কমিটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন স্থানীয় ৪ এমপিসহ আওয়ামী লীগ নেতারা । ফলে কমিটি অনুমোদনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস সূত্র জানায়, গত ৩ জুলাই ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে জমা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মো: জহিরুল হক খোকা ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। এর কয়েকদিন পরই প্রস্তাবিত এ কমিটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে ৭ পৃষ্ঠার একটি রিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় এমপিরা সহ আওয়ামী লীগ নেতারা।

কমিটিতে দলের দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও সিনিয়র নেতাদের বাইরে রেখে অনিয়ম ও দুর্ণীতির মাধ্যমে ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট প্রভাবিত স্বাধীনতা বিরোধী ও বিএনপি পরিবারের সদস্য সহ বিতর্কিত ও হাইব্রিড অনেকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

সূত্র জানায়, অভিযোগ উঠার পরপরই কমিটি নিয়ে ব্যাপক যাচাই-বাছাইয়ে নামে কেন্দ্র। এতে অভিযোগের পক্ষে কিছু প্রমাণও পায় কেন্দ্র। ফলে গত কার্যনির্বাহি সংসদের বৈঠকে কমিটি উত্থাপন করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত অনুমোদন লাভ করেনি। আর কবে এ কমিটি অনুমোদন পাবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

অভিযোগপত্রে ৭ জন সহ সভাপতি, ২ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২ সাংগঠনিক, ১৮ সম্পাদক ও ৯ জন সদস্যের ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়। এর মধ্যে কমিটির ৩ নং সহ সভাপতি পরিবহন ব্যবসায়ি আমিনুল হক শামীম জামালপুর আশেক মোহাম্মদ কলেজের ছাত্রদল নেতা ও ফ্রিডম পার্টি করতেন।

বিএনপি নেতা নাদিম মোস্তফার নিকটাত্মীয় এবং ব্যবসায়ি অংশীদার হিসেবে হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঠিকাদার হিসেবে রকেট গতিতে উত্থান তার। বহুল আলোচিত ওয়ান ইলেভেনের সময় দুদকে তার সম্পদের হিসাব তলব করা হয়। তিনি কবে কোথায় দলের প্রাথমিক সদস্য হয়েছেন তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। তার ভাই মেয়র একরামুল হক টিটুর ঘনিষ্ট সহযোগী মহানগর যুবলীগ সভাপতি শাহীনুর হত্যা মমালার আসামী।

এছাড়া তার নির্দেশনায় সম্প্রতি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে আসামীদের ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। ৯ নং সহ সভাপতি আ.ক.ম শামছুল আলম ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের এক সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও অজ্ঞাত কারণে রাজনিিত থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কিন্তু ব্যবসায়ি আমিনুল হক শামীমের সহযোগী হিসেবে কমিটিতে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। ১১ নং সহ সভাপতি অধ্যাপক আতিকুর রহমান অতীতে কখনো আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠেনর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না।

২ নং সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সামিউল আলম লিটন গৌরীপুরের দুটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী হিসেবে চরম বিতর্কিত। প্রচার সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ ২০০১ সালের নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বহিষ্কার হন এবং রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ড. আবুল হোসেন দিপু স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান এবং গফরগাঁও উপজেলায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার আসামী। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রব জাসদ ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি ছিলেন এবং কখনো আওয়ামী লীগ করেছেন বলে প্রমাণ নেই।

এ ছাড়া তার স্ত্রীও কমিউনিস্ট পার্টির একজন বড় মাপের নেত্রী। সদস্য পদে প্রস্তাবিত জিয়াউল হক সবুজ একজন স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সন্তান। তার শশুর আদিল সরকার যুদ্ধাপরাধ মামলায় পলাতক আসামী। শিশির আহম্মদ চৌধুরী মিরণ বিএনপি নেতা ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান টিএইচ চৌধুরীর ছোট ভাই। তিনি কোনোদিন আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো সদস্যও ছিলেন না।

ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুল স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান। তার পিতা মাওলানা বাতেন গফরগাঁও উপজেলা শান্তি কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন। ৭২ সালে তার নেতৃত্বে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। ধনকুবের বুলবুল রাজনীতির সাথে সক্রিয় নন। ২০০১ এবং পরবর্তী সময়ের নির্বাচনে তিনি দল মনোনীত প্রার্থী মরহুম আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ ও তার সন্তান ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বিরোধীতা করেন। উল্লেখিতদের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

এ ব্যাপারে জনতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ‘সব কিছু বিবেচনা করে আমরা পুরনো কমিটির ২২ জন নেতাকে রেখেছি। তবে কমিটির সুনির্দিষ্ট কলেবর সীমাবদ্ধতার করণে অনেক যোগ্য নেতাকেও স্থান দিতে পারিনি এটা সত্য। তবে স্থানীয় এমপিরা যে অভিযোগ দিয়েছেন তার ভিত্তি নেই। আসলে তাদের আত্মীয় স্বজন ও কাছের মানুষদের কমিটিতে স্থান দিতে পারিনি বলেই ুব্ধ হয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছে।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here