ম্যাডাম খালেদা জিয়া আগুনরবীন্দ্র নাথ পাল ::

অবৈধ সরকারের সাথে বৈধ সংলাপ চায় ২০ দলীয় জোট। এরজন্য বেগম জিয়া ৭ দফা দাবী নামা পেশ করেছেন। আন্দোলন করে সরকার পতনে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সরকার পতনের দাবী নামার পরিবর্তে আলোচনার প্রস্তাব পেশ করেছেন। গুলশান কার্যালয়ে নিজেই অবস্থান নিয়ে প্রচারনা চালাচ্ছেন অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যেই জনগনকে আন্দোলনে পাশে পাবার জন্য বেগম জিয়ার এ অভিনব পন্থা, সেই জনগনই আন্দোলনের নামে আগুনে পুঁড়িয়ে মারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়।

যার জন্য আন্দোলনের মাঠে নেই সাধারন জনগন।বর্তমান সরকার বিরোধী জোটের আন্দোলনকে মোটেই পাত্তা না দিয়ে কৌশলে প্রশাসন দিয়ে অবরোধ ব্যর্থ করে দিতে চাইছেন। আর সেজন্যই ২০ দলীয় জোট অবরোধের সাথে হরতাল দিয়ে খেঁটে খাওয়া সাধারন মানুষকে বিপাকে ফেলে দিয়েছেন।

২০ দলীয় জোটের ৫ জানুয়ারির সমাবেশ করতে না দেয়ার পর থেকেই লাগাতার অবরোধ চলছে। তাদের এই অবরোধ গনতন্ত্র রক্ষার জন্য না গনতন্ত্রকে চীরতরে কবর দেয়ার জন্য অবরোধ-হরতাল একসাথে চালাচ্ছেন, সেটা আমরা সাধারন মানুষ বুঝতে পারছি না।

দীর্ঘ ১৯ দিনের অবরোধ ও হরতালে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৩জন। এরমধ্যে আগুনে পুঁড়ে মারা গেছেন ১৬ জন। সংঘর্ষে মারা গেছেন ১০ জন, সারাদেশে যানবাহন ভাংচুর করা হয়েছে প্রায় ৭শ। যানবাহনে আগুন দেয়া হয় ৩০০টিতে।

গত শুক্রবারই শুধু ঢাকা-রাজশাহীতে বাসে আগুন দেয়ায় ৪০জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। শতশত অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের ১৯ দিনের ঢালাও অবরোধ ও হরতালে আর কিছু অর্জন না হলে নিরীহ সাধারন মানুষ ৩৩ জনের প্রান গেছে।

তৃতীয় দফা সরকার পতনের আন্দোলনে বেগম জিয়ার সাফল্য এটুকুই। এবারের আন্দোলনে সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো ১৪ইং সনের নির্বাচন কালীন সময়ে বাসে ট্রাকে আগুনের যে মেলা বসেছিল,এবারেও তা বৃহৎ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ আগুনের খেলা কেন?

নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ ছেড়ে চোরাগুপ্তা হামলা করে আগুনের এ খোলায় পৈচাশিক আনন্দে মেতেছে ২০ দলীয় জোট। কোন সরকারের পতনের জন্য আগুনের খেলা যদিই একমাত্র পথ হতো, তাহলে মাঠে আন্দোলনের কোন প্রয়োজন হতো না। দলের নিবেদিত কর্মীর প্রয়োজন হতো না।

শুধু কিছু বোমাবাজ-পেট্রোল বোমাবাজ দলে রাখলেই কিল্লাফতে হতো।আগুনের এ খেলা বন্ধ না হলে বেগম জিয়াও একদিন এর মধ্যে আক্রান্ত হলে আশ্চর্য্যের কিছু থাকবে না।যারা আগুন নিয়ে খেলা করে তাদের আগুনেই পুঁড়ে মরতে হয়।এখন কিন্তু বোমাবাজ ও পেট্রোল বোমাবাজদের জনগন ধরে গনধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করছে।

অতীষ্ঠ পরে কিন্তু গনপিটুনিতে বোমাবাজদের জীবনের শংকা দেখা দিতে পারে। তখন বোমাবাজ-পেট্রোল বোমাবাজ কোথায় খুঁজে পাবেন। কারন সবারই জীবনের মায়া আছে। এরআগে আমার একটি লেখায় ২০দলীয় জোটকে বলেছিলাম অহিংস আন্দোলন যেন সহিংস না হয়। অথচ দিন দিনই আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠছে। এটা কোনভাবেই শুভ লক্ষন নয়।

এ আন্দোলনে সাধারন মানুষ কেন এগিয়ে আসছে না, সেটা ২০ দলীয় জোটকে বুঝতে হবে। কারন এ আন্দোলনে তাদের কোন লাভ নেই। এ পর্যন্ত যে ৩৩ জন মারা গেলেন, তাদের কেউ নেতা নেত্রীর সন্তান নয়। কেউ তাদের আত্মীয় নয়।

সুতরাং আগুনের জ্বালা তারা বুঝতে পারেন বলে মনে হয় না। একসাথে অবরোধ, হরতাল আবার এখন দিবেন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক। তারপরও যদি আপনার জোট সরকার পতনে ব্যর্থ হয়-তাহলে কি করবেন? সর্বহারা পার্টির মত চোরাগুপ্তা আন্দোলন করবেন? এতে কিন্তু সরকার পতন হবে না। ক্ষতি হবে শুধু সাধারন মানুষের। এতে আপনার আপোষহীন নেত্রীর তকমাটা আরো বিতর্কিত হবে। একঘরে হয়ে যাবেন।

এমন কি আপনার দল একদিন মুসলিম লীগের মত ব্র্যাকেট বন্দী দলেও পরিনত হতে পারে।এ নিয়ে পরপর ৩ বার সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিলেন। দুবার ব্যর্থ হলেন। তৃতীয়বার ব্যর্থ হলে কিন্তু আপনার আগামী ১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে।

ততদিনে ফুঁলে ফেঁপে উঠবে আপনার লালিত স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত শিবির। এতদিন অপেক্ষার প্রহর গুনে যদি জামায়াত ফসল ঘরে তুলে নেয়-তাহলে আপনার দল হবে ব্র্যাকেট বন্দী মুসলিম লীগ। যা আমাদের কাম্য নয়। গনতন্ত্রে শক্তিশালী বিরোধীদলের প্রয়োজন আছে।

২৪/১/১৫

 

লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ, মোবাইল-০১৭১৩১৯২৯৪  

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here