মেহেরপুরের সোনাপুর গ্রামের চাঞ্চল্যকর মিরাজ হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। র‌্যাবের হাতে আটক চরমপন্থি নেতা মিজানুর রহমান মিজান (৩৫) ও ডালিম (২৪) জবানবন্দিতে বলেছে চরমপন্থিদের খুন ও পাল্টা খুনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ খুন হয় মিরাজ। র‌্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন রাজিবুল হাসান এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন মিরাজ হত্যার সাথে জাড়িত বাকিদের আটক করতে র‌্যাবের অভিযান অব্যহত রয়েছে।

র‌্যাব সুত্র জানায়, গত ১৩ নভেম্বর রাতে মেহেরপুর জেলা সদরের সোনাপুর গ্রামের সাবেক চরমপন্থি নেতা মিরাজকে একদল সন্ত্রাসী কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে। খুনের রহস্য উৎঘাটন ও খুনীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য র‌্যাব ও সদর থানা পুলিশ যৌথ প্রয়াস চালায়। গত শুক্রবার দুপুরে মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারে চাঁদা নেয়ার সময় শিবপুর গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে চরমপন্থি নেতা মিজানকে হাতেনাতে আটক করে র‌্যাব। পুলিশ ও র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চরমপন্থি মিজান সোনাপুর গ্রামের মিরাজ হত্যার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেয়। মিজানের স্বীকারোক্তি মোতাবেক গতকাল রোববার সোনাপুর গ্রামের আতাহার আলীর ছেলে ডালিমকে আটক করে র‌্যাব। ডালিমও র‌্যাবের কাছে মিরাজ হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করে গুরুত্বপুর্ন তথ্য প্রদান করে।

র‌্যাব ক্যাম্পে সাংবাদিকদের সামনে মিজান ও ডালিম মিরাজ হত্যার বিষয়ে রোমহর্ষক স্বীকারোক্তি প্রদান করে। তারা জানান, ১৩ নভেম্বর সকালে ডালিমের চাচা মামলত মেম্বর মিজানকে খবর দেওয়ার জন্য ডালিমকে নির্দেশ দেয়। বিকেলে ডালিম তার মোটর সাইকেলে করে মিজানকে শিবপুর গ্রাম থেকে সোনাপুর গ্রামে নিয়ে আসে। মিজানের সাথে বসে মামলত মেম্বর মিরাজকে খুন করার পরিকল্পনা করে। সন্ধ্যায় খুনের ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয় মামলত, মিজান ও ডালিমসহ কয়েকজন। সন্ধ্যার পরে মিরাজ গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে বাড়ির পথে রওনা দেয়। পুর্ব পরিকল্পনামত সফের উদ্দীন ওই দোকান থেকে অন্য পথ দিয়ে মিরাজের আগেই এসে মামলতদের সাথে যোগ দেয় এবং মিরাজের আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে। ঘটনাস্থলে মিরাজ আসতেই সফের উদ্দীন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিরাজের মাথায় কোপ দেয়। এর পরপরই আরেকটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মামলত মিরাজের শরীরে কোপ দেয়। মুত্যর কোলে ঢলে পড়ে মিরাজ।

আটকৃতদের স্বীকারোক্তি এবং র‌্যাবের তথ্যমতে, বছর দশেক আগে মামলতের ভাই জহিরুল ইসলাম জঙ্গলকে চরমপন্থিরা খুন করে। এ খুনের বদলা নিতে গত বছরের ৬ জুলাই কাঠালপোতা গ্রামের ডাক্তার নজরুলকে খুন করে প্রতিপক্ষরা। নজরুল ইসলাম খুনের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে মিরাজ ও তার পুরোনো বাহিনী। বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় মিরাজকে খুন করে মামলত ও তার সহযোগীরা। আটক ডালিম আরও জানায়, এবারের ইউপি নির্বাচনে মেম্বর পদে প্রতিদ্বন্দীতা করে তার চাচা মামলত হোসেন। মিরাজের সাথে মামলত হোসেনের পুর্ব বিরোধ থাকলেও নির্বাচনে মিরাজকে চেয়েছিল মামলত। মিরাজ তার পক্ষে কাজ না করায় তাদের বিরোধ আবারও শুরু হয়। পুর্ব বিরোধ এবং নির্বাচনে সহযোগিতা না করার কারণে মামলত হোসেন পরিকল্পিতভাবে মিরাজকে খুন করে। মিরাজকে হত্যার পর মিজান ডালিমের বাড়িতেই পরদিন ভোর পর্যন্ত অবস্থান করে। সকালে নির্বিঘেœ সে নিজ বাড়িতে চলে যায়। শুক্রবার মিজান র‌্যাবের হাতে আটকের পর পরই মামলতসহ অপর খুনিরা গা ঢাকা দেয়। তবে র‌্যাব- ৬ গাংনী ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন রাজিবুল হাসান বলেছেন বাকি খুনীদের গ্রেফতার করতে র‌্যাবের অভিযানিক ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যহত রয়েছে।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার রকিবুল ইসলাম জানান, পুর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি’র (এমএল) আঞ্চলিক দলের গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করতো মিজান। ডাক্তার নজরুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও একজন ভাড়াটে খুনি। পার্টির নির্দেশে খুন করা ছাড়াও ভাড়ায় সে খুন করে থাকে। এছাড়াও এলাকায় চাঁদাবাজি ও বোমাবাজির সাথে জড়িত সে। র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশও খুনীদের আটকের ততপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/জাহিদ মাহমুদ/মেহেরপুর

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here