রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পস্টাফ রিপোর্টার :: রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালানোর দায়ে মিয়ানমারকে শিগগিরই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তুলতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শন করে।

মঙ্গলবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসের পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবস্থা সরাসরি দেখে গেছেন জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলে সদস্যরা।

তারা নিউইয়র্কে ফিরে গিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলে গেছেন। যুক্তরাজ্যের অ্যাম্বাসেডর কারেন পিয়ের্স বলেছেন, পরিষদের সব সদস্যই মনে করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি গত দশকের মধ্যে দেখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার বিষয়ক ইস্যুগুলোর একটি এবং অবশ্যই সেখানে কোনও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

নির্যাতনের বিষয়ে মিয়ানমারের অব্যাহতভাবে এবং অকল্পনীয়ভাবে অস্বীকার করে আসা এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রমাণ করে এখন কেবল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতই নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কাছে ন্যায়বিচারের একমাত্র ভরসা বলে মনে করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিসের ডিরেক্টর পরম প্রীত সিং।

পরম প্রীত সিং আরও বলেছেন, এবার সিকিউরিটি কাউন্সিল সদস্যরা সরাসরি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে তাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের কথা শুনেছেন। যারা দায়ী তাদের অবশ্যই শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে চারদিনের সফরে নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সু চিসহ, দুই দেশের সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সাথে আলাপ করেন।

আইসিসিতে উত্থাপনের সম্ভাবনার বিষয়ে ব্রিটিশ অ্যাম্বাসেডর পিয়ের্স সাংবাদিকদের বলেছেন, অং সাং সু চি কাউন্সিল সদস্যদের আশ্বস্ত করেছেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপযুক্ত প্রমাণ পেলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ‘যথাযথ তদন্ত’ করবে।

যদিও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্য মানবাধিকার সংস্থা মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ দেয়ার পরও তারা নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি ।

একবছরের বেশি সময় ধরে দেশটির সরকার সেখানে ইউএন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনকে প্রবেশে অনুমতি দিচ্ছেনা। হত্যা, ধর্ষণ এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা এবং সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টও দেশটির সরকার সেনাবাহিনী নাকচ করে দিয়ে আসছে।

গত বছরের নভেম্বরে সেনাবাহিনীর একটি তদন্ত দল জানায়, অন্তত ৩৭৬ ‘সন্ত্রাসী’ সংঘাতের সময় নিহত হয়েছে কিন্তু কোনও নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হয়নি’।

যেখানে ২০১৭ সালের অগাস্টের সহিংসতার পর কোন বেসামরিক তদন্ত হয়নি, সেখানে রাখাইন রাজ্যের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন কমিশন (২০১৬ সালে অক্টোবর ও নভেম্বরে সংঘটিত সহিংসতার তদন্তে গঠিত) তাদের তদন্ত শেষে জানিয়ে দেয় সেখানে মানবতাবিরোধী কোন অপরাধ, জাতিগত নিধনের মত কোন ঘটনা ঘটে নি।

রাখাইন রাজ্যে কেবল একটি ঘটনায় মিয়ানমার সেনাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অগাস্টের ২৫ তারিখের পরে ইন ডিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনায় সাতজন সেনাকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। যে দুজন রয়টার্স সাংবাদিক ঘটনার অনুসন্ধান করেছিলেন তাদের আটক করা হয় এবং ১৪ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here