আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: প্রতিবন্ধীতা সৃষ্টি কর্তার অভিশাপতো নয় ! ইচ্ছে করে কি কেউ প্রতিবন্ধি হয় ? কিংবা তাদের জীবনে এ অবস্থার জন্য কি কেউ দায়ী ? যদি না হয় তবে তারা কেন অধিকার বঞ্চিত হবে, হবে করুনার পাত্র ?

আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কুসংস্কার আছে। যা সম্পূর্ণ অমানবিকতার পরিচায়ক। আধুনিক যুগে এমন ধ্যান-ধারনা পরিহার করা সকলের প্রয়োজন। এভাবেই কথা গুলো বললেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা।

সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা মায়ের মমতায় বড় করে তুলছেন। প্রতিবন্ধী বাচ্চারা তাকে দেখলে ছুটে এসে তার কাছে দাঁড়ায়। তাকে একেক জন একেক ভাবে জড়িয়ে ধরে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাশীল, ভালোবাসা, মায়া-মমতা ও স্নেহশীল কি তার এক উজ্জ্বল উদারণ জেসমিন আরা।

সম্পূর্ণওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাদিয়া মুমু বলেন, অনেক সময় বাচ্চা গুলো বিভিন্ন ভাবে হেড আপাকে বিরক্ত করেন । আমি দেখেছি, অনেক বাচ্চা প্রায় সময় হেড আপার গায়ে থু থু দেয়। তখন আপা ওই বাচ্চায় কাছে গিয়ে কোলে তুলে নেয়। আপা অনেক বাচ্চাসহ এক প্লেটে ভাতও খায়। সাদিয়া মুমু আরও বলেন, চাকুরী নয়, প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে চাই।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সফিকুল ইসলাম বলেন, বাচ্চাদের অত্যাচারে আমরা শিক্ষকরা অনেক সময় রাগ হলে আপা আমাদের ধমক দেন। হেড আপা প্রায় বলেন, ওদের অত্যাচার আমার কাছে ভালোবাসার ডাক মনে হয়। আমি যতক্ষণ স্কুলে থাকি ততক্ষন মনে হয় আমি মানবতার মাঝে বেঁচে আছি। সফিকুল আরও বলেন, কোন বাচ্চা দুই/তিন দিন স্কুলে না আসলে হেড আপা ওই বাচ্চার বাড়ি চলে যায়। এছাড়া কোনো বাচ্চা অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

মায়ের মমতায় প্রতিবন্ধীদের পালন করছেন জেসমিন আরাপ্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা বলেন, আমি যখন রংপুর লালকুঠি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম তখন থেকে আমার স্বপ্ন আমি প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু একটা করবো। সেই চিন্তা থেকেই ২০১৫ সালে আমার স্বামী প্রতিবন্ধীদের জন্য শ্বাশুড়ির নামে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছে। আমি প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।

নিজেকে প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের সহযোদ্ধা দাবী করে তিনি আরো বলেন, একজন প্রতিবন্ধী, একজন মানুষও। প্রতিবন্ধীরা আমাদের পরিবারের সদস্য, আমাদের ভাই-বোন, সমাজের মানুষ, রাষ্ট্রের নাগরিক। তাদেরকে ভিন্ন চোঁখে দেখার কোন যৌক্তিক কারন নাই। কিংবা তাদেরকে অবহেলার চোঁখে দেখারও অবকাশ নেই, কারন তারাও মানুষ। প্রতিবন্ধীদের সমাজের বোঝা না ভেবে তাদের পাঁশে দাঁড়ানোর সুযোগ  গ্রহন করে এবং তাদের প্রাপ্ত সম্মান ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়া আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে আমি মনে করি।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে গড়ে উঠা এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১১ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ১০১ জন, বাক প্রতিবন্ধী ৪০ জন, শরীরিক প্রতিবন্ধী ৬৫ জন ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৫ জন। তাদের অনেকেই লেখাপড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধাবী হলেও নেই তাদের মেধা বিকাশের সুষ্ঠু পরিবেশ। শুধু সচেতনতার অভাবেই ওরা অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here