আ হ ম ফয়সল :: ‘জাতীয় স্বাস্থ্য পরিচর্যা’ বিষয়ক প্রাথমিক জরিপে দেখা গেছে দেশের ৮৫ ভাগ নারী ও কিশোরী মাসিক চলাকালীন পুরাতন কাপড় ব্যবহার করেন এবং গ্রামাঞ্চলে তুলনামূলকভাগে এটি বেশী দৃশ্যমান। মেয়েদের বিদ্যালয়গুলোতে মাসিককালীন পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার চিত্রটি আরও ভয়াবহ
এই সকল সমস্যার প্রধান কারণ হলো স্বল্প মূল্যের স্যানিটারী ন্যাপকিনের অপ্রতুলতা, সচেতনতার অভাব এবং সামাজিক কুসংস্কার। কিন’ নারী স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এই প্রচলিত কুসংস্কার বা প্রথাগুলো ভেঙ্গে এটিকে একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
বাংলাদেশ ওয়াস এ্যালায়েন্স এবং এর সহযোগি সংগঠনের উদ্যোগে ও ডরপ এর সহায়তায় রবিবার (১০ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মাসিককালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা পরিসি’তি এবং ভবিষ্যৎ করনীয়’শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে জরিপের এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
ওয়াটার এইডের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ডা. খায়রুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের পরিচালক মাখদুমা নার্গিস, অতিরিক্ত সচিব রোক্সানা কাদের, পলিসি সাপোর্ট ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক কাজী আব্দুল নুর, ওয়াস এ্যালায়েন্স-নেদারল্যান্ডের কান্ট্রি লিড সারা আহরারি, নেদারল্যান্ড দূতাবাসের প্রথম সচিব কার্ল ডি গ্রুট, ডরপ’র চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার, বাংলাদেশ ওয়াস এ্যালায়েন্সের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর অলক কুমার মজুমদার প্রমূখ।
এছাড়াও সেমিনারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, বিভিন্ন সরকারী সংস্থ্য, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকবৃন্দ আলোচনায় অংশঘ্রহণ করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার এইডের সহায়তায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ২০১৩ সালে দেশের সব জেলা থেকে মোট আড়াই হাজার পরিবারের দুই হাজার ১০৭ জন বয়স্ক নারী ও ৩৭৭ জন কিশোরীর তথ্য নেয়া হয়। এ ছাড়া ৭০০ স্কুলের ২ হাজার ৩৩২ জন ছাত্রীর মতামত নেয়া হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ছাত্রীদের ৬৮ শতাংশ বলেছে, প্রথমবার মাসিক হওয়ার আগে তারা এ বিষয়ে জানত না। ছাত্রীদের ৮২ শতাংশ মাসিকের সময় পুরোনো কাপড় ব্যবহার করে। মাত্র ১ শতাংশ স্কুলে ব্যবহার করা প্যাড ফেলার ব্যবস্থা আছে।
জরিপে ৪০ শতাংশ ছাত্রী বলেছে, মাসিকের কারণে গড়ে মাসে তারা তিন দিন স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। অন্যদিকে ৩৮ শতাংশ কিশোরীকে এবং ৪৮ শতাংশ বয়স্ক নারীকে মাসিকের সময় ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয় না। সমাজে এখনো মাসিকের বিষয়টি লুকিয়ে রাখার বিষয় হয়ে আছে। তাই ৪৯ শতাংশ নারী মাসিকের সময় ব্যবহার করা কাপড় শুকানোর জন্য ঘরের অন্ধকার স্থান বা গোপন স্থান বেছে নেন।
সেমিনারে বক্তারা মাসিককালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যায় স্বল্পমূল্যের স্যানিটারী ন্যাপকিনের প্রাপ্যতা প্রত্যন্ত গ্রামে সকলের কাছে পৌছনোর জন্য জোড় দিয়েছেন। এতে সরকারকে- বেসরকারী উদ্যোগকে উৎসাহ দেয়ার জন্যও সেমিনারে দাবী জানানো হয়।